ভিনিউজ : আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে কোণঠাসা ছিল বিএনপি। মামলা, হামলা, নিপীড়ন, নির্যাতন ভোগ করার ঘটনা ছিল দলটির নেতাকর্মীদের জন্য নিত্য ঘটনা। বেশিরভাগ নেতার ১৬ বছরের অর্ধেক ঈদই কেটেছে কারাগারে। মারা যাওয়া বাবা-মা, সন্তানের লাশ দেখা কিংবা দাফন করাও যেখানে ছিল অকল্পনীয় ব্যাপার, সেখানে একসঙ্গে ইফতার, ঈদ পালনের কথা ভাবা অবান্তর। তবে এবার নির্ভয়ে ঈদ পালন করেছেন ১৬ বছর নানা ত্যাগ শিকার করা বিএনপির এসব নেতাকর্মী। যাবেন নিজ নিজ এলাকায়, প্রিয়জনদের সঙ্গে করেকুশলবিনিময়।
আওয়ামী লীগের পতনের পর এবার আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ নিজ আসন নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। ইফতার মাহফিল নিয়েও বেশ সক্রিয় দেখা গেছে দলটিকে। বড় থেকে তৃণমূল প্রত্যেক আয়োজনই তারা বেশ গুরুত্বপূর্ণভাবে করার চেষ্টা করেছে। প্রচার করেছে দলের ৩১ দফার পাশাপাশি নিজেদের প্রচারণাও। এবার ঈদকে ঘিরেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে বেশিরভাগ মনোনয়নপ্রত্যাশীই জনসংযোগ করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ঈদের দিন চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলির গ্রামের বাড়িতে ঈদ করেছের তিনি। সারাদিন সেখানে এলাকার মানুষের সঙ্গে ঈদ উদযাপন নেন। পরদিন নিজ বাসায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটাবেন।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল কালবেলাকে বলেন, দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে প্রত্যেক নেতাকর্মীই অসংখ্য মামলায় জর্জরিত। এর পরও গত ১৭ বছর ধরেই এত প্রকাশ্যে না হলেও এলাকায় আমরা ঈদ পালন করেছি। তবে সবসময় প্রশাসনিক কিংবা বাসায় রেড দেওয়ার মতো ঝামেলা ছিল। এবার মুক্ত পরিবেশে কোনো আতঙ্ক ছাড়াই পরিবারের সঙ্গে নেতাকর্মীরা ইফতার, সেহরি, তারাবি থেকে শুরু করে ইবাদত বন্দিগি করতে পেরেছেন। উদযাপন করতে পেরেছেন রোজার মাস। আশা করি ঈদটাও সবাই উন্মুক্তভাবে উদযাপন করতে পারবেন। পুরোনো বছরের স্মৃতি মেলালে এবারের ঈদ আমাদের জন্য স্বস্তির। তবে দেশে যেন কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও আমরা সজাগ নজর রাখছি। কারণ বিভিন্ন অপতৎপরতা এরই মধ্যে লক্ষ করা গেছে।
মহানগর বিএনপির দীর্ঘদিন ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী বর্তমান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে হাজার হাজার মামলার শিকার হয়েছেন। জেলে গেছেন বহুবার। নিহত হয়েছেন দলটির অসংখ্য নেতাকর্মী। এমনকি আমি নিজেও ১০২টি মামলার শিকার হয়েছি। জেলে যেতে হয়েছে তিনবার। অসংখ্য মামলার কারণে আত্মগোপনেও থাকতে হয়েছে। সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে আমাদের বাসায়ও বহুবার হামলা-ভাঙচুর হয়েছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে আমার গাড়ি। এ কারণে সারা বছরই আতঙ্কের মধ্যে কাটাতে হতো। ঈদের সময় নেতাকর্মীদের নিয়ে ঈদ শুভেচ্ছাবিনিময় করতে চাইলে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া দিতে চাইত না। কিন্তু দীর্ঘদিন পর এবার সেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছাড়া ভিন্ন এক আমেজে এবার ঈদ উদযাপন করতে পারব ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, ঈদের দিন জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে ঈদের নামাজ পড়েন। এরপর কৃষলায়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরদিন সকালে ঈদ শুভেচ্ছাবিনিময় করব।