ভিনিউজ ডেস্ক : ন্যাশনাল গার্ড সাধারণত কোনো রাজ্যের গভর্নরের আওতায় থাকলেও বিরল এক বিধি কাজে লাগিয়ে ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরকে পাশ কাটিয়ে নিজে সরাসরি এই সিদ্ধান্ত আরোপ করেছেন৷
এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনায় মুখর হয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য এবং স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা৷ বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ইস্যুতে রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর হতে পারে৷
গত সপ্তাহে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এর একাধিক অভিযানের পর বিক্ষোভ শুরু হয় লস অ্যাঞ্জেলেসে৷ অন্তত ১১৮ জনকে অবৈধ অভিবাসী বলে সন্দেহ করে এই অভিযান চালানো হয়৷ বিপুল সংখ্যক অভিবাসী বাস করা এলাকা থেকে এই অভিযানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়৷ পরবর্তীতে শহর জুড়ে বিক্ষোভকারীরা একত্রিত হন৷
শনিবার দক্ষিণ-পূর্ব লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যারামাউন্ট এলাকায় বিক্ষোভকারী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে সংঘর্ষ আরও তীব্র আকার ধারণ করে৷ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পর কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে পুলিশ৷ বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিকে ‘অমানবিক এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন৷
শনিবারই ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দিয়ে ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প৷ ডিক্রিতে বলা হয়, ‘শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং ফেডারেল সম্পত্তি রক্ষা’ করাই এই সিদ্ধান্তের কারণ৷
তবে এই সিদ্ধান্তের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এই পদক্ষেপকে ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে উস্কানিমূলক’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন৷ এমন সিদ্ধান্তের ফলে উত্তেজনা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেও বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন নিউসম৷
এক বিবৃতিতে নিউসম বলেন, ‘‘আমাদের সম্প্রদায়গুলোতে সেনা মোতায়েনের ফলে কেবল উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে৷ আমাদের অবশ্যই উত্তেজনা হ্রাস এবং সংলাপের চেষ্টা করতে হবে, সামরিকীকরণ নয়৷”
ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও এখনও লস অ্যাঞ্জেলেস ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন হয়নি বলে জানিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ দেয়া পোস্টে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ (এলএপিডি) এবং গভর্নর নিউসমকে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘… লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়নি৷”
ফেডারেল কর্মকর্তারা পরবর্তীতে নিশ্চিত করেছেন যে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা ফেডারেল ভবনগুলোকে সুরক্ষা দেয়ার ব্যাপারে মূল দায়িত্ব পালন করবে৷
এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ বিক্ষোভ না থামলে আরো কঠোর হওয়ার বার্তা দিয়েছেন৷ এক্স-এ দেয়া বার্তায় নিয়ে প্রয়োজনে মেরিন সেনা মোতায়েনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন৷ বিক্ষোভগুকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি’ হিসাবে বর্ণনা করে এর পেছনে সংগঠিত অপরাধী নেটওয়ার্ক বা বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন জড়িত থাকতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন৷ অবশ্য এমন সন্দেহের পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ তিনি দেননি৷
আয়োজকরা বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে অভিবাসী সম্প্রদায়ের উপর অন্যায্য দমন-পীড়ন প্রতিরোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷
লস অ্যাঞ্জেলেসে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিস্পানিক এবং বিদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিক দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন৷ অভিবাসীদের জন্য একটি অভয়ারণ্য হিসাবেই এতদিন পরিচিত ছিল লস অ্যাঞ্জেলেস৷ শহর ও রাজ্যের দপ্তরের দায়িত্বে থাকা ডেমোক্র্যাটিক নেতাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনে রিপাবলিকান প্রশাসনের রাজনৈতিক দূরত্ব এই বিক্ষোভের পর আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা৷
–(এএফপি, রয়টার্স, এপি)