রূপকথার নায়িকা

 

সাত পাকে বাঁধা’র শুটিংয়ে তীব্র আবেগে ফড়ফড় করে ছিঁড়ে দিয়েছিলেন সৌমিত্রের পাঞ্জাবি,তারপর ডিরেক্টরকে বললেন আজ স্বামীর সঙ্গে রাগারাগি হয়েছে,এই ভাবে ছিঁড়ে দিয়েছি ওর পাঞ্জাবিটা!
মিথ নাকি নিছক গপ্প! সত্য, মিথ্যা যাই হোক বাংলা সিনেমায় সুচিত্রা সেন গ্ল্যামারের শেষ কথা,কখনও চিলতে আর প্রাণখোলা হাসির ঝলকে তিনি ঝড় তুলেছেন দর্শক মনে৷ প্রাচ্যের গ্রেটা গার্বো তাঁকে বলা হতো,বোধহয় তিনি যেমন খ্যাতির শিখরে থাকতে থাকতে প্রচারের সার্চলাইট থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে,শত অনুরোধে আর ফেরেন নি রুপোলি পর্দায়৷
৫২/৪/১ বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড হয়ে গিয়েছিল রূপকথার স্বপ্নপুরী৷ কিন্তু ঠিক কেন তিনি গিয়েছিলেন অন্তরালে! আসলে কী খ্যাতি,সৌন্দর্য,কিংবদন্তি হয়েও তিনি চেয়েছিলেন সাধারণ হয়ে থাকতে!আর সেই কারণে কী স্বেচ্ছা নির্বাসন!
১৯৪৭সালে দিবানাথ-সুচিত্রা সেনের বিয়ে,৫৩সালে ছবির জগতে আসেন,৩৫বছরের কেরিয়ারে মোট ছবি ৬০,বাংলা ৫৩,হিন্দি সাতটি৷ তরুনকুমারের স্মৃতিকথা থেকে শুরু করে সর্বত্র প্রকাশিত একের পর এক ছবি যখন হিট করছে তখন সুচিত্রা সেন পারিশ্রমিক বাড়ানোর কথা তুলেছিলেন,এমন কি উত্তমকুমারের মাথায় নাকি তিনি ঢুকিয়ে দেন!
পাঁচের দশকে সুচিত্রার ‘বোল্ড’আই মেকআপ বিখ্যাত চোখদুটি কে করে তুলেছিল মোহময়ী,ওই চোখের চাওনিতে কেঁপে যেত আসমুদ্রহিমাচল৷ এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে মাধুরী দীক্ষিতের কথা,তাঁর রূপ,অভিনয়েও কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী কেঁপেছে। তিনি বলছেন তাঁর মা ছিলেন সুচিত্রা সেনের অন্ধ ভক্ত৷ কলকাতায় এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে এসে কাউকে না জানিয়ে তিনি চলে গিয়েছিলেন সুচিত্রার নতুন ছবি দেখতে৷
মাধুরী নিজে বলেছেন কলকাতার চিত্র সাংবাদিকরা নাকি তাঁর সঙ্গে সুচিত্রা সেনের মুখের মিল খুঁজে পেতেন, সুচিত্রা সেনের একটি ছবি তিনি হলে গিয়ে দেখেছেন সেটি ‘আঁধি’৷টিভিতে দেখেছেন ‘বোম্বাই কা বাবু’৷মাধুরীর কথায় সাদা-কালো ছবি,কি অসাধারণ সুন্দরী,তিনি যদি ওই রূপের কণামাত্র পেতেন!
মাধুরী বিনয়ী এভাবে বলেছেন,কিন্তু তিনিও শ্রদ্ধার আসনে রেখেছেন সুচিত্রা সেন কে, বলেছেন কতজন পারে গনগনে সূর্যের তাপে নিজেকে আড়াল করতে?অর্থের গরিমা যেখানে বিশাল ব্যবধানে হেরে গিয়েছে সুচিত্রা সেনের ব্যক্তিত্বের কাছে৷
একটা প্রশ্ন কিন্তু ওঠে, আসলে কি মহানায়িকা শুধুমাত্র পর্দায় রোম্যান্টিক নায়িকা হিসেবে ভালবাসার স্বার্থক রূপায়ন করেছেন?বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান কী শুধুমাত্র উত্তম-সুচিত্রা জুটি!কিন্তু তথ্য বলছে উত্তমকুমার ছাড়া তাঁর অভিনয় করা ছবিতে সুচিত্রা সেনের অভিনয়ের বিচ্ছুরণ দর্শক,চিত্র সমালোচকরা দেখেছেন,মোহিত হয়েছেন,প্রশংসা করেছেন৷’সাত পাকে বাঁধা’,অথবা ‘দীপ জ্বেলে যাই’,দুটো ছবি সেকথা বলে৷বসন্ত চৌধুরী ছিলেন ‘দীপ জ্বেলে যাই’ছবিতে সুচিত্রা সেনের বিপরীতে,আক্ষরিক অর্থে রোম্যান্টিক প্রেমের ছবি নয়,কিন্তু ছবির শেষ দিকে সুচিত্রা সেন পাগল হয়ে ডাক্তারদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন ‘বিশ্বাস করুন আমি অভিনয় করিনি.আমি অভিনয় করতে পারি না’৷তবে এটুকু বলতে পারি তিনটি ছবি তিনি করি,করি করেও করে উঠতে পারেন নি, যদি তিনি সত্যজিৎ রায়ের ‘দেবী চৌধুরাণী’, ‘ঘরে-বাইরে’, বা পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘চতুরঙ্গে’অভিনয় করতেন,বলা যায় তাঁর অভিনয় দক্ষতা,ক্ষমতা নিয়ে পর্যালোচনা হত একটু আলাদা মাত্রায়,অন্যভাবে৷

রাথি পালের ফেসবুক থেকে

#সংগৃহীত

পূর্বের খবরতরুণরা পুরো বিশ্বকে পাল্টে দিতে পারে : সোশ্যাল বিজনেস ইয়ুথ সামিটে প্রধান উপদেষ্টা
পরবর্তি খবরTrump to hit Canada, Mexico and China with tariffs on Saturday