ভিনিউজ : পহেলগামের ঘটনার পরে কাশ্মীরের জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ি এলাকায় চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগাম থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা সন্ত্রাসবাদীদের সহযোগী বলে ধারণা করছে পুলিশ।
নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশিতে কুলগামের কাইমো এলাকার ঠোকরপোরা থেকে দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই কুলগামে অভিযুক্ত সন্ত্রাসবাদীদের বাড়ি ভেঙে দিয়েছে বাহিনী। স্থানীয় সন্দেহভাজনদের সন্ত্রাসবাদীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকায় ১৪ সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদীর নাম রয়েছে। তাদের বাড়িতেও অভিযান চলানো হবে।
তল্লাশির পাশাপাশি ভারতীয় সেনার তৎপরতা বাড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তার প্রতিফলন ঘটছে। শনিবার ভারতীয় সেনাবাহিনী একটি ভিডিও পোস্ট করে প্রতিবেশী পাকিস্তানকে সতর্কবার্তা দিয়েছে। স্থলবাহিনীর ভিডিওতে সেনা অভিযানের কয়েকটি মুহূর্ত তুলে ধরা হয়েছে। বায়ুসেনার অভিযানের ছবিও তাতে রয়েছে। বলা হয়েছে, “ভারতীয় সেনার কাছে কোনও ভূখণ্ডই অজেয় নয়, কোনও অভিযানই নাগালের বাইরে নয়। সেনা সবসময় প্রস্তুত ও সতর্ক।”
নৌবাহিনীও একটি পোস্টে একই ধরনের বার্তা দিয়েছে। তবে তারা ভিডিও প্রকাশ করেনি। নৌবাহিনীর জাহাজের একটি ছবি দিয়ে তাদের বার্তা, “ঐক্যই আমাদের শক্তি। নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে আমরা সবসময়ে প্রস্তুত।”
হিমাচল প্রদেশের রাজভবন থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, যে টেবিলে বসে ঐতিহাসিক সিমলা চু্ক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের পতাকা।
১৯৭২ সালের ৩ জুলাই ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। রাজভবনের টেবিলে ভারতের পাশে পাকিস্তানের পতাকা ছিল। সেখানে দুটি চেয়ার রাখা আছে। টেবিলের উপরে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর ছবি রয়েছে। সেখানে এখন আর পাকিস্তানের পতাকা নেই।
হামলার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে পাকিস্তানিদের ফিরে যেতে বলা হয়েছে। বাতিল হয়েছে ভিসা। সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানিদের চিহ্নিত করার কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পাকিস্তান প্রথম থেকেই এই হামলার সঙ্গে তাদের যোগ অস্বীকার করে আসছে।
পালটা ব্যবস্থা হিসাবে একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তানও। সিন্ধু নদের জলবণ্টন চুক্তি স্থগিতে ভারতের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সিমলা চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে।
ভারতীয় জওয়ানের মরদেহ বাড়িতে
জঙ্গিদের গুলিতে নিহত ভারতীয় জওয়ান ঝন্টু আলি শেখের কফিনবন্দি দেহ শনিবার তার বাড়িতে নেয়া হয়েছে। নদিয়ার তেহট্ট থানার পাথরঘাটা গ্রামে। শনিবার সকালে কফিনবন্দি মৃতদেহ আসার অনেক আগে থেকেই বাড়ির ছাদে উপচে পড়া ভিড় ছিল।
দেহ পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বাবা-মা, স্ত্রী, আত্মীয় স্বজন। দেশবাসীকে অশান্তি এড়িয়ে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করার শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান ঝন্টুর দাদা শফিকুল শেখ। ১১টা নাগাদ বাড়ির কাছেই ঈদগাহ তলায় অস্থায়ী মঞ্চ করে গান স্যালুট দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানো ঝন্টুকে।
জঙ্গি হামলার পরে উধমপুরে তল্লাশি চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে শহিদ হন এই সেনানী। তার মাথা এবং দুই কাঁধে গুলি লাগে। সতীর্থরা তাকে দ্রুত চপারে করে হাসপাতালে নিয়ে এলেও বাঁচানো যায়নি। কাশ্মীর থেকে প্রথমে ঝন্টুর দেহ আসে ব্যারাকপুর সেনাবাহিনীর হাসপাতালে। সেখান থেকেই বাড়িতে পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হয়।
কাশ্মীরে নিহত বেহালার সখেরবাজারের বাসিন্দা সমীর গুহর বাড়িতে শনিবার যায় এনআইএ–র তিন সদস্যের দল। স্ত্রী শবরী ও মেয়ে শুভাঙ্গীকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন সমীর। সেখানেই জঙ্গিদের গুলির শিকার হন তিনি। এ দিন ঘণ্টা পাঁচেক পরে সমীরের বাড়ি থেকে বের হন তদন্তকারীরা। হামলার ব্যাপারে নিহতের স্ত্রী–মেয়ের বয়ান রেকর্ড করা হয়।
গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাকিস্তানকে কল্পনাতীত কঠোর জবাব দেওয়ার কথা বলেছেন। বিরোধীরাও কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন। তবে গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা রেবন্ত রেড্ডি বলেন, “আমরা এবং ১৪০ কোটি ভারতবাসী আপনাদের পাশে আছি। পাকিস্তানকে দু’ভাগে ভাগ করে পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করুন, আমরা সবাই আপনাদের সঙ্গে আছি। এটা রাজনীতি করার সময় নয়।’
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যখন আক্রমণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তখন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া বলেছেন, “গোয়েন্দা ব্যর্থতার জন্য সাধারণ মানুষের প্রাণ গিয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করে দেবেন। তার কী হল?”
সেনায় পরিবেষ্টিত কাশ্মীরে কীভাবে জঙ্গিরা এ ভাবে অবাধে হত্যালীলা চালাল, তা নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন উঠছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, “ওই এলাকাটি দুর্গম। সরকারিভাবে এখনো জায়গাটা সাধারণ মানুষের জন্য খোলা হয়নি। জুন মাসের গোড়ায় এটা খোলার কথা ছিল। কিছু মানুষ রোজগারের জন্য তা আগে চালু করে দিয়েছেন। বলা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের এটা জানা ছিল না। এমনকি রাজ্য সরকার জানত না। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন কেন রাজ্য বা কেন্দ্রকে জানায়নি? সেখানে সেনাবাহিনীর একটা উপস্থিতি আছে, তারাও বা জানায়নি কেন? খুব অবাক লাগছে।”