ভিনিউজ : ভারত আর পাকিস্তান প্রায় সপ্তাহব্যাপী পাল্টাপাল্টি মিসাইল ও ড্রোন হামলার পর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে এই যুদ্ধকে কাজে লাগিয়ে দেশ দুটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সুবিধা নিতে চেষ্টা করতে পারে কয়েকটি মহল।
কিছুদিন আগ পর্যন্তও দেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের জন্য সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে। পাকিস্তানের অনেক নাগরিক দেশটির সবশেষ নির্বাচনে সেনাবাহিনীর জেনারেলরা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে ক্ষমতায় আসতে দেননি বলে মনে করেন। বিশেষভাবে তারা সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে দোষারোপ করছিলেন।
করাচির একজন ট্যাক্সিচালক কয়েক মাস আগে ডয়চে ভেলেকে বলেন, “সেনাবাহিনীর কারণে আমাদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।”
কিন্তু এপ্রিলের ২২ তারিখ ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার সবকিছুই বদলে গেছে। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে কাশ্মীরভিত্তিক সংগঠন কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স। ভারত সরকার দাবি করেছে কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামে পরিচিত এবং জাতিসংঘের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়্যেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
পহেলগাম হামলার জন্য দিল্লী দায়ী করেছে ইসলামাবাদকে, যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতেই দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সামরিক বাহিনী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।
৭ মে ভারতের বিমান বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের বেশ কিছু জায়গায় মিসাইল হামলা চালালে অন্তত ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারান। দিল্লী দাবি করেছে তারা জঙ্গিদের আস্তানায় হামলা চালিয়েছে। দুইদিন পর পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় অন্তত ১২জন ভারতীয় নাগরিক মারা যান।
ইসলামাবাদভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক নাজির মাহমুদ বলেন, “জনপ্রিয় নয় এমন সরকার এ ধরনের সেনা সংঘাত থেকে লাভবান হবে। ভারতের হামলার পর সাধারণত যারা উদার ও ধর্ম নিরপেক্ষ এবং সেনাবাহিনীর সমালোচক ছিলেন, তারাও চাচ্ছিলেন ইসলামাবাদের উচিত দিল্লীকে একটি শিক্ষা দেয়া।”
ভারত ও পাকিস্তান দুইদেশেই সাম্প্রতিক কাশ্মীর সংঘাতে নিজেদের বিজয়ী বলে ঘোষণা করেছে এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুই দেশের জনগণের উচ্ছ্বাস ও সমর্থন। পাকিস্তানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছে দেশটির সেনাবাহিনী। অনেককে বিজয় উদযাপন করতে রাস্তায় মিছিল করতেও দেখা গেছে।
নাজির মাহমুদ বলেন, “ইতিমধ্যে সরকারের সবকিছু সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করলেও এই ঘটনার পর রাজনীতিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ আরো শক্তিশালী হবে।”
ভারতের জাতীয়তাবাদী আদর্শের অনুসারীরা অবশ্য এই সংঘাতকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তার হিন্দু-জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র বিজয় হিসেবেই দেখছেন। পহেলগামে হামলার পর হামলায় জড়িতদের ও তাদের মদতদাতাদের শায়েস্তা করতে মোদী সরকারের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছিল।
ভারতের নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উদয় ভাস্কর ডয়চে ভেলেকে বলেন, “মোদীকে এটি প্রমাণ করতে হতো যে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে পাঞ্জাব, মুরিদকে ও ভাওয়াল্পুরে হামলা চালা্নোয় তিনি ভারতকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম।”
তিনি আরো বলেন, “এই বয়ানের মাধ্যমে মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারত অনেক শক্তিশালী ও জিহাদি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলার্যান্স’-এর ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাশপাশি হিন্দুত্ববাদের রক্ষাকর্তা হিসেবেও ভোটের রাজনীতিতে তারা লাভবান হবে। বিহার প্রদেশের আসন্ন নির্বাচনে এটির প্রভাব দেখা যেতে পারে।”
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দুই দেশের সংঘাতে ভুক্তভোগী হতে হবে দেশ দুটির সাধারণ নাগরিকদের। এই সংঘাতের অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে পাকিস্তানে। অন্যদিকে ভারত সরকার তাদের রাজনৈতিক বিরোধী শক্তি ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমালোচনাকে পাশ কাটাতে ব্যবহার করতে পারে এই সংঘাত।
-ডয়েসে ভেলে