ভিনিউজ ডেস্ক : অনুষ্ঠিত হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যাকশন সামিট প্যারিসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক সম্মেলনে শতাধিক দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন । সোমবার থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রায় ১০০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী এবং বিজ্ঞানীরা অংশগ্রহণ করছেন।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি তার প্রথম বিদেশ সফর। চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী ঝাং গুওকিংও রয়েছেন অতিথিদের মধ্যে। সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ রোববার দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ফ্রান্স টু কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমরা এমন একটি প্রযুক্তি এবং বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যা আমরা এর আগে বিরল।”
তিনি মনে করেন, ফ্রান্স এবং ইউরোপকে এই সুযোগটি কাজে লাগাতে হবে, কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা “আমাদের আরও ভালোভাবে বাঁচতে, আরও ভালোভাবে শিখতে, আরও ভালোভাবে কাজ করতে, আরও ভালোভাবে যত্ন নিতে সক্ষম করবে এবং এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করার দায়িত্ব আমাদেরই।”
ভ্যান্সের পররাষ্ট্র অভিষেক
এই শীর্ষ সম্মেলনে কিছু ইউরোপীয় নেতা প্রথমবারের মতো ভ্যান্সের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন। ৪০ বছর বয়সি ভাইস প্রেসিডেন্ট ওহাইওর জুনিয়র সিনেটর হিসেবে মাত্র ১৮ মাস দায়িত্ব পালনের পরই ডনাল্ড ট্রাম্প তাকে তার রানিংমেট হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
ইউরোপ সফরে ভ্যান্সের সঙ্গে তার স্ত্রী উষা এবং তাদের তিন সন্তান ইওয়ান, বিবেক এবং মিরাবেলও রয়েছেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে ইউরোপের অবস্থান
সফরের আগেই অবশ্য ভ্যান্স স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন, তিনি ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনার সুযোগটি ব্যবহার করতে চান।
ব্রেইটবার্ট নিউজকে তিনি বলেছেন, “আমি এআই শীর্ষ সম্মেলনে যাওয়ার মূল কারণ হল যেসব বিশ্ব নেতা সেখানে থাকবেন, তাদের সঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত কথোপকথন করা।” তিনি বলেন, “আমি মনে করি এআই শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত কিছু নেতা স্পষ্টতই রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের অবসান ঘটাতে, সেখানে আমাদের কূটনৈতিকভাবে সাহায্য করতে অনেক কিছু করতে পারেন – এবং সে কারণে আমরা ফ্রান্সে সেই বৈঠকগুলোতে মনোনিবেশ করবো।”
২০২২ সালে চ্যাটজিপিটি ভাইরাল হওয়ার পর এআই নিয়ন্ত্রণ থেকে মনোযোগ সরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ঝুঁকি নিয়ে বিশ্বশক্তিগুলো বেশি আলোচনা শুরু করেছে।
চাপের মুখে ইউরোপ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তার পূর্বসুরী জো বাইডেনের বাস্তবায়ন করা প্রতিযোগিতামূলক সুরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলছেন। এর ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে টিকে থাকতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।
সম্মেলনের আগে লা মন্ড সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক লেখায় ওপেনএআই-এর প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টমান বলেছেন, “আমরা যদি প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং অগ্রগতি চাই, তাহলে আমাদের উদ্ভাবকদের উদ্ভাবন করতে, নির্মাতাদের নির্মাণ করতে এবং বিকাশকারীদের বিকাশ করতে দিতে হবে।”
ট্রাম্পের প্রাথমিক পদক্ষেপগুলোই স্পষ্ট করে তুলেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ইইউতে এআই নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো কতটা ভিন্ন।
ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা গত বছর জোটের এআই আইন অনুমোদন করেছেন। বিশ্বের প্রথম প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণকারী নিয়মাবলী এটি। বেশ কিছু টেক জায়ান্ট এই নিয়মাবলী নমনীয়ভাবে প্রয়োগ করার জন্য চাপ দিচ্ছে।
এদিকে, চীনের ডিপসিক গত মাসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।
আগামী দিনগুলোতে এই প্রতিযোগিতার ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে বিনিয়োগ অনেকগুণ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে নিয়ন্ত্রণবিহীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে বিপদ বয়ে আনতে পারে, সে বিষয়েও রয়েছে শঙ্কা।