তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস, ছাড়া পেল ৩৬৯ ফিলিস্তিনিও

 

ভিনিউজ ডেস্ক : যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা শঙ্কার মধ্যেই তিনজন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে তাদেরকে গাজার খান ইউনিস থেকে রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, শনিবার মুক্তি পাওয়া তিনজন বন্দি ইতোমধ্যে ইসরায়েলে পৌঁছেছে।

ওই তিনজন জিম্মি মুক্ত পাওয়ার পর তাদের বহনকারী রেডক্রসের গাড়ি গাজার খান ইউনিস ছেড়ে যায়।

প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ওই তিনজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তারা পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবেন।

 

গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া বেশ কিছু ছবিতে দেখা যায় জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার আগে তাদেরকে ঘিরে রয়েছেন বন্দুকধারীরা।

মুক্তি পাওয়া বন্দিরা হলেন ইসরায়েলি-রুশ নাগরিক আলেকজান্ডার ট্রুফানোভ, ইসরায়েলি-আর্জেন্টাইন ইয়ায়ার হর্ন এবং ইসরায়েলি-আমেরিকান সাগুই ডেকেল-চেন।

ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স মিডিয়া অফিসের তথ্যমতে, ইসরায়েলও ৩৬৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিচ্ছে। এর মধ্যে কিছু তাদের কিছু অংশ পশ্চিম তীরে পৌঁছেছে। বাকিরা পরে গাজায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

এর আগে গত সোমবার হামাস জানায়, তারা এই সপ্তাহান্তে আর কোনো বন্দি মুক্তি দেবে না এবং তারা ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগে দোষারোপ করে।

ইসরায়েল জানিয়েছে, যদি শনিবার দুপুরের মধ্যে বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া হয়, তবে তারা গাজায় হামলা আবার শুরু করবে।

জিম্মি মুক্তিকে কেন্দ্র করে দখলকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় শনিবার বিশাল জন সমাগম তৈরি হয়। কেননা আগে থেকে জানানো হয়েছিল সেখানে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিদের ছোট একটি অংশকে আনা হবে।

যে কারণে বন্দিদের আত্মীয়-স্বজনসহ অনেকেই সেখানে উপস্থিত হয়। সেখানে থাকা অনেককে স্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

তারা স্বস্তি প্রকাশ করে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার কারণেই শনিবার অনেকের মুক্তি সম্ভব হয়েছে।

“আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম, যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভেস্তে যেতে পারে এই আশঙ্কায় আমরা ঘুমাতেও পারিনি। আমরা অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আমাদের প্রার্থনা ছিল যুদ্ধবিরতি বজায় থাকুক, গাজা পুনর্নির্মাণ হোক এবং সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হোক,” সেখান থেকে বলছিলেন এক ব্যক্তি, যিনি ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার সময় আটক হওয়া একজন স্বজনের মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন।

শনিবার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যাদের মুক্তি দিয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েলিদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিরা যাদের কোনো বিচার কিংবা অভিযোগ ছাড়াই আটক করা হয়েছিল।

ফিলিস্তিনি বন্দি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল যেসব ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিচ্ছে তাদের মধ্যে ২৯ জন পশ্চিম তীরের এবং সাতজন জেরুজালেম ও আশপাশের এলাকার।

২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবরের পর গাজা থেকে আটক হওয়া ৩৩৩ জনকে মুক্তি দেওয়া হবে বলেও সংস্থাটি জানিয়েছে।

মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি ইসরায়েলিদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার দায়ে দণ্ডিত হলেও বেশিরভাগই যুদ্ধকালীন সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা বিচার হয়নি।

হামাস ও ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির দিনে হিব্রু ভাষায় একটি বিবৃতি দিয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়।

এই বিবৃতিতে তিনজন ইসরায়েলি বন্দি মুক্তির বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।

একই সঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এখনো গাজায় আটক থাকা বন্দিদের মুক্ত করতে ইসরায়েল সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে’।

এছাড়াও বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে যে হামাস এই সপ্তাহে “যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের চেষ্টা করেছিল” এবং “ভুয়া অভিযোগের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে”।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, গাজার অভ্যন্তরে ও আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীর উপস্থিতি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের “স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন অবস্থান”র কারণে বন্দিমুক্তি অব্যাহত রয়েছে।

বিবৃতির শেষে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে গাজায় আটক সব বন্দিকে যত দ্রুত সম্ভব মুক্ত করা যায়’।

বিবিসি বাংলা

পূর্বের খবরসংস্কারের ন্যূনতম যে ঐকমত্য তৈরি হবে সেটার ওপর ভিত্তি করে অতি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে-মির্জা ফখরুল
পরবর্তি খবরজার্মান নির্বাচন: কঠোর অভিবাসন নীতির প্রতিশ্রুতি রক্ষণশীলদের