দীপক মণ্ডল
বিবিসি নিউজ হিন্দি, দিল্লি
ভিনিউজ : যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি সেদেশে যাওয়ার জন্য ‘এইচ-ওয়ান-বি’ ভিসার ফি বাড়িয়ে এক লাখ ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৮৮ লাখ ভারতীয় টাকা ধার্য করেছে। এরপরেই চীনের ‘কে-ভিসা’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এ বছর অগাস্ট মাসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রতিভাবান ব্যক্তিদের নিজের দেশে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ‘কে-ভিসা’ চালু করার ঘোষণা করেছে চীন। সেদেশের সরকারি সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী এই ভিসা অক্টোবর থেকে দেওয়া শুরু হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯০ সাল থেকে ‘এইচ-ওয়ান-বি’ ভিসা ব্যবস্থা চালু হয়। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অঙ্কশাস্ত্রের সঙ্গে জড়িত কুশলী কর্মীদেরই এই ভিসা দেওয়া হয়।
সবথেকে বেশি সংখ্যায় ‘এইচ-ওয়ান-বি’ ভিসা ভারতীয়রাই পেয়ে এসেছেন এতদিন। তালিকায় এরপরেই রয়েছেন চীনের নাগরিকরা।
‘নিউজউইক’ পত্রিকা চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে লিখেছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করবে না। তবে মন্ত্রণালয় এটা জানিয়েছে যে বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রতিভাকে চীন স্বাগত জানাবে।
‘কে-ভিসা’ চালু করার উদ্দেশ্য হলো যাতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রের প্রতিভাবান ব্যক্তিরা চীনে গিয়ে কাজ করতে পারেন।
‘কে-ভিসা’র বিশেষত্ব
সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী চীনের ইতোমধ্যে যে ১২ ধরনের ভিসা চালু আছে, তার থেকে ‘কে-ভিসা’ আলাদা। এই ভিসা নিয়ে চীনে যাওয়া ব্যক্তিকে দেশে প্রবেশ করা, সময়সীমা আর সেখানে বসবাস করার ক্ষেত্রে বেশি সুবিধা দেওয়া হবে।
এই ভিসা নিয়ে চীনে যারা যাবেন, তারা শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে পারবেন। একই সঙ্গে সেদেশে ব্যবসা ও শিল্প-স্থাপনও করতে পারবেন তারা।
তবে এই ভিসার সব থেকে বড় বিশেষত্ব হলো যে, চীনের কোনো নিয়োগ-কর্তা বা প্রতিষ্ঠান থেকে আমন্ত্রণপত্র না পেলেও আবেদন করা যাবে। ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়াও সুবিধাজনক করা হচ্ছে।
সদ্য স্নাতক, গবেষক ও শিল্পদ্যোগীদের জন্য ‘কে-ভিসা’ বেশি সুবিধাজনক হবে।
এই ভিসা পেতে গেলে চীনে কোনো চাকরির অফার না থাকলেও হবে। ওই দেশে গিয়ে কেউ চাকরি খুঁজে নিতে পারেন।
কনটেন্টের জন্য কি অনুমতি দেবেন?
এই নিবন্ধে Google YouTubeএর কনটেন্ট রয়েছে। কোন কিছু লোড করার আগে আমরা আপনার অনুমতি চাইছি, কারণ তারা হয়ত কুকি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকতে পারে। আপনি সম্মতি দেবার আগে হয়ত Google YouTube কুকি সম্পর্কিত নীতি এবং ব্যক্তিগত বিষয়ক নীতি প়ড়ে নিতে চাইতে পারেন। এই কনটেন্ট দেখতে হলে ‘সম্মতি দিচ্ছি এবং এগোন’ বেছে নিন।
কারা আবেদন করতে পারবেন?
যেসব বিদেশি তরুণ-তরুণী বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং বা অঙ্কশাস্ত্রে চীন বা কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক বা উচ্চতর ডিগ্রি পেয়েছেন, তারাই এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা বা গবেষণা করছেন, এমন পেশাজীবীরাও এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনকারীদের জন্য একটাই প্রয়োজনীয় বিষয়, ‘কে-ভিসা’র জন্য যে নির্দিষ্ট বয়স-সীমা, শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত পূরণ করতে হবে।
আসলে এই ‘কে-ভিসা’ হলো চীনের ‘আর-ভিসা’রই বিস্তারিত ব্যবস্থা। চীন ২০১৩ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত প্রতিভাবানদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ‘আর-ভিসা’ চালু করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্র যখন ‘এইচ-ওয়ান-বি’ ভিসার ফি প্রচুর বাড়িয়ে দিয়েছে, তখন ভারতীয়রাই সবথেকে বড় ধাক্কা খেয়েছেন। কারণ ভারতীয় প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদেরই সবথেকে বেশি সংখ্যায় ‘এইচ-ওয়ান’ ভিসা দেওয়া হত।
সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে যতজনকে ‘এইচ-ওয়ান-বি’ ভিসা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ভারতীয়রা হলেন ৭১ শতাংশ, আর তারপরে ১১.৭ শতাংশ ভিসা পেয়েছেন চীনের নাগরিকরা।
আমেরিকার প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নতুন কঠোর নিয়ম চালু হওয়ার পরে ভারতীয় প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের পছন্দের নতুন ঠিকানা হয়ে উঠতে পারে চীন।
চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বড়সড় বিনিয়োগ করেছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রেও তারা যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে চীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বৃহৎ শক্তি হয়ে উঠতে চাইছে। কৃত্রিম উপগ্রহ সংক্রান্ত প্রযুক্তি, মহাকাশ অভিযান, ধাতু-বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্র এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত প্রযুক্তিতে তারা বড় বিনিয়োগ করেছে।
এর সুবিধা নিতে পারেন ভারতীয় প্রকৌশলীরা। অন্যদিকে ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার ও প্রযুক্তিবিদদের কাজে লাগাতে পারবে চীন। অন্য একটি সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে যে, সিলিকন ভ্যালিতে কর্মরত প্রকৌশলীরা চীনের কথা ভাবতে পারেন।
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অধ্যয়ন কেন্দ্রের সহযোগী অধ্যাপক অরভিন্দ ইয়েলেরি বলছেন, “চীন সাংহাই ও শেনজেন-সহ বেশ কিছু প্রদেশে টেকনোলজি পার্ক গড়ে তুলেছে। এইগুলোতে চীনের বড়সড় বিনিয়োগ আছে। চীন সরকার ২০০৬-০৭ সাল থেকেই ভারতের আইআইটিগুলো থেকে বড় সংখ্যায় প্রকৌশলীদের নিয়ে যাচ্ছে।”
“ক্রিটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে ভারতীয় প্রকৌশলীদের সংখ্যা বেশি। এদের এক শতাংশও যদি চীনে চলে যায় তাহলে সেখানে তাদেরই সংখ্যাধিক্য হয়ে যাবে। চীনা সংস্থাগুলো প্রযুক্তি গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য নিজেদের সরকারের কাছ থেকে সস্তা ঋণ নেয়, কিন্তু তার সঠিক ব্যবহার করতে পারে না। এই ব্যাপারে ভারতীয় ইঞ্জিনিয়াররা তাদের এই সংকট থেকে উদ্ধার করতে পারেন,” বলছিলেন মি. ইয়েলেরি।
তার কথায়, শুধু চীন নয়, তাইওয়ানও প্রযুক্তিবিদদের জন্য তাদের দরজা খুলে দিয়েছে। তাই যারা ‘এইচ-ওয়ান-বি’ ভিসা পাবেন না, তারা তাইওয়ানে যাওয়ার কথাও ভাবতে পারেন।
“ভিসা ফি বাড়ানোর জন্য ক্ষতি হবে আমেরিকার, আর তার লাভ তুলবে এশিয়ার উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো। চীনের জন্য এটা একটা সুযোগ। সেজন্যই তারা কে-ভিসার ওপরে জোর দিতে শুরু করেছে। তারা বারবার বলছে যে বিশ্বের প্রতিভাবান পেশাজীবীদের জন্য চীন একটা বড় সুযোগে,” বলছিলেন মি. ইয়েলেরি।
কিন্তু চীনের কাজের পরিবেশ কেমন?
এই প্রশ্নের জবাবে মি. ইয়েলেরি বললেন যে তিনি নিজে সেদেশে কাজ করেছেন। চীনে ‘এক জানালা নীতি’ খুবই শক্তপোক্ত। আবেদন করা থেকে শুরু করে নিয়োগ পাওয়া পর্যন্ত, এমনকি বিদেশ থেকে যাওয়া বিশেষজ্ঞদের জন্য থাকার জায়গা খুঁজে দেওয়া – সব কিছুই খুব কম সময়ের মধ্যে হয়ে যায়।