জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন ও নজরুল উৎসব শুরু কাল

সংগীতানুরাগীদের হৃদয় রাঙানো দুই আয়োজন শুরু হচ্ছে কাল শুক্রবার। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সুরসুধায় সিক্ত হবেন শহরের গানপ্রেমীরা। রাজধানীর দুই প্রান্তে অনুষ্ঠিত হবে বৃহৎ পরিসরের দুই সংগীতায়োজন। গানের সঙ্গে আয়োজন দুটিতে বৈচিত্র্য ছড়াবে নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশনা। শুক্রবার থেকে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ আয়োজিত বিয়াল্লিশতম বার্ষিক অধিবেশন। একই ভেন্যুতে রবিবার পর্যন্ত চলবে তিন দিনের সম্মেলন।

অন্যদিকে শুক্রবার বসন্ত বিকেলে গুলশান সোসাইটি লেক পার্কে শুরু হবে নজরুল উৎসব। দুই দিনব্যাপী এ সংগীতাসরে গান শোনাবেন বাংলাদেশ ও ভারতের খ্যাতিমান একঝাঁক নজরুলসংগীত শিল্পী। তাদের সঙ্গে পরিবেশনায় অংশ নেবেন দেশের নানা প্রান্তের প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীবৃন্দ। এ উৎসবের যৌথ আয়োজক বাংলাদেশ নজরুল সংগীত সংস্থা, গুলশান  সোসাইটি ও ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল  সেন্টার। বুধবার রাজধানীর দুই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন দুটির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।

শুক্রবার সকালে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালায় জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন উদ্বোধন করবেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র পদক দিয়ে গুণীজন সম্মাননা জানানো হবে শিল্পগুরু মুস্তাফা মনোয়ারকে। এবারের আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন দেশের নানা অঞ্চলের সাত শতাধিক শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক।

‘নিশিদিন ভরসা রাখিস, ওরে মন, হবেই হবে’ শীর্ষক বোধন সংগীতের আশ্রয়ে সম্মেলনের সূচনা হবে। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত প্রতিযোগিতা। সকাল ও দুপুরে অনুষ্ঠিত হবে কিশোর বিভাগের চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতা। এছাড়া তিন দিনের সান্ধ্য-অধিবেশন সাজানো হয়েছে গুণীজনের সুবচন রবিরশ্মি, গীতি আলেখ্য, আবৃত্তি, পাঠ, নৃত্য ও গানের সম্মিলনে। শনিবার দ্বিতীয় দিন বিকেল চারটায় থাকছে সেমিনার।

রবীন্দ্র-শিক্ষাদর্শ ও বাংলাদেশের নব শিক্ষা যাত্রা বিষয়ে মূল প্রবন্ধ পড়বেন ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক। সভাপতিত্ব করবেন সম্মিলন পরিষদের সহ-সভাপতি মফিদুল হক। আলোচনায় অংশ নেবেন সুমনা বিশ্বাস, শারমিন স্বাতী ও রায়হানা সরকার। থাকছে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ -এর এ যাবৎকাল পরিচালিত কার্যক্রমের উপস্থাপনা। বার্ষিক অধিবেশন উপলক্ষে যথারীতি প্রকাশিত হবে রবীন্ত্রনাথের সৃষ্টির নানাদিক নিয়ে বিশিষ্টজনদের লেখা প্রবন্ধের সংকলন ‘সংগীত সংস্কৃতি’।

বুধবার সকালে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৪২তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন বা অধিবেশনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তব্য রাখেন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি ড. আতিউর রহমান, সহ-সভাপতি বুলবুল ইসলাম, লাইসা আহমদ লিসা ও লিলি ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন সম্পাদকম-লীর সদস্য আবুল ফারাহ পলাশ, সদস্য মামুনুর রশীদ, রশীদ আল হেলাল ও মেহেদী ফরিদ।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, রবীন্দ্রনাথ তার নানা রচনা ও ভাষণে সমাজে মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। সমাজের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের ক্ষত সারিয়ে তোলার পরামর্শ রেখেছেন। তাই আমরা বিশ্বাস করি, রবীন্দ্রনাথের কর্ম ও জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজে মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা এবং বাঙালি সংস্কৃতির নির্বিঘ যাত্রা নিশ্চিত করা সম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সম্মিলন পরিষদ প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দিকের বার্ষিক অধিবেশনগুলো কেবল রাজধানী ঢাকাতেই হত। শাখাগুলিকে উদ্বুদ্ধ করতে এবং সংস্কৃতিচর্চার প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে ১৯৮৪ সাল থেকে বার্ষিক অধিবেশন হচ্ছে   এক বছর ঢাকায় ও পরের বছর অন্য জেলায়।

দুই দিনব্যাপী নজরুল উৎসব

শুক্রবার থেকে গুলশান সোসাইটি লেক পার্কে শুরু হবে নজরুল উৎসব। এই সংগীতায়োজনে গান শোনাবেন বাংলাদেশ ও ভারতের খ্যাতিমান নজরুলসংগীত শিল্পীবৃন্দ। তাদের সঙ্গে পরিবেশনায় অংশ নেবেন দেশের নানা প্রান্তের প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীবৃন্দ। দুই দিনব্যাপী এ উৎসবের যৌথ আয়োজক বাংলাদেশ নজরুল সংগীত সংস্থা, গুলশান  সোসাইটি ও ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল  সেন্টার।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটায় উৎসব উদ্বোধন করবেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এবার তৃতীয়তম উৎসবে থাকবে কাজী নজরুল ইসলামের রচিত গান ও  সেই সুরের আলিঙ্গনে নাচ এবং আবৃত্তি পরিবেশনা। নানা আঙ্গিকের নজরুলসংগীত শোনাবেন খায়রুল আনাম শাকিল, ইয়াসমিন মুশতারী, নাশিদ কামাল,  ফেরদৌস আরাসহ খ্যাতিমান নজরুলসংগীত শিল্পীরা।

তাদের সঙ্গে পরিবেশনায় অংশ নেবেন ভারতের শিল্পী মনোময় ভট্টাচার্য্য, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, প-িত তুষার দত্ত, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, পায়েল কর ও  দেবারতি চক্রবর্তী। এছাড়া অংশ নেবেন দেশের নানা প্রান্তের  শিল্পীবৃন্দ।

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উৎসবের আহ্বায়ক খায়রুল আনাম শাকিল, সমন্বয়ক কল্পনা আনাম ও উৎসবের টাইটেল স্পন্সর শান্তা হোল্ডিংসের সিইও এম হাবিবুল বাসিত।

উৎসবটির তাৎপর্য তুলে ধরে খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমগ্র সৃষ্টিকর্ম সাধারণ মানুষের কাছে শুদ্ধভাবে পৌঁছে দেয়া সময়ের জরুরি দাবি। শুদ্ধ সুর ও বাণীতে নজরুলসংগীত প্রচারের জন্য সাংবাৎসরিক এবং চলমান যে বিশাল কার্যক্রম আমরা হাতে নিয়েছি, তার সাথে বৃহত্তর জনসমাজের পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য আমরা প্রতিবছর  এই নজরুল উৎসবের আয়োজন করি। আমাদের উদ্দেশ্য এই উৎসবের মাধ্যমে প্রিয় কবির আদর্শ এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে প্রসারিত ও বিকশিত করা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতিবারের মতো এবারও উৎসবে শুদ্ধ সুর ও বাণীতে গীত ১২৫টি নজরুলের গান আনুষ্ঠানিকভাবে ইউটিউবে সবার জন্য অবারিত করা হবে।

এস/ভি নিউজ

পূর্বের খবর৭ মার্চের ভাষণ এক চিরন্তন আবেদন
পরবর্তি খবরবাংলাদেশে চাহিদার চেয়েও বেশি চাল উৎপাদিত হচ্ছে