আওয়ামীলীগ এ বইছে নির্বাচনী আনন্দ হাওয়া: জামায়াত -বিএনপিতে হাহাকার

Share

দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা নীলফামারী। জেলায় চারটি সংসদীয় আসন। ঘনিয়ে এসেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী ৭ জানুয়ারিতে হবে এই নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে জেলার চারটি আসনের প্রার্থী এবং জয়-পরাজয় নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে।

অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে স্বাধীনতার ৫৩ বছরে মঙ্গা কবলিত এককালের নীলফামারী জেলায় গত ১৫ বছরে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। না খেয়ে থাকার সেই দিনও নেই। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের বহুমুখী ফসল আবাদে অধিকাংশ জমিই তিন ফসলিতে রূপান্তরিত হয়েছে। পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ এনে দেওয়াসহ বিভিন্ন উন্নয়নে নীলফামারীর আগের চেহারাই সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। সেই বাঁশের টিনের ভাঙা ঘর এখন চোখে পড়ে না। নীলফামারীর চারটি আসনের দুটিতে আওয়ামী লীগ এবং দুটিতে জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য রয়েছেন।

এই জেলায়  আওয়ামী লীগের স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে দলটির নেতাকর্মীরা নীলফামারী সদর আসনের টানা চারবারের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের প্রধান উপদেষ্টা আসাদুজ্জামান নূরকে অভিভাবক হিসেবে মেনে চলছেন। জাতীয় পার্টিতে কেন্দ্রীয় অভিভাবক থাকলেও জেলায় দলটি অভিভাবক সংকটে ভুগছে। একইভাবে জেলা বিএনপি তাদের অভিভাবক হিসেবে ভাবেন শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনকে। তিনি এখন পলাতক। নীলফামারী-১ আসন থেকে ষষ্ঠ জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে। তবে ওয়ান ইলেভেনের পর থেকেই তুহিন পলাতক রয়েছেন। তবুও বিএনপির জ্বালাও কর্মকান্ডে সক্রিয় কাউকে পাওয়া যায়নি।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নীলফামারীর উন্নয়নে হাত দেয়। মঙ্গা দূর করতে স্থাপন করে দেয় উত্তরা ইপিজেড। এর মাঝে আওয়ামী লীগ পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিল না। এতেই জেলার উন্নয়ন থমকে যায়। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলেও তিনটি আসনই থাকে আওয়ামী লীগের হাতে। নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে একটানা ১৫ বছরে নীলফামারীর আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে এক মাইলফলক স্থাপন করেছে বলে স্থানীয় ভোটাররা অকপটে স্বীকার করেন। এ কারণে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নীলফামারীর চারটি আসনেই সাধারণ ভোটাররা শেখ হাসিনার ওপর পুনরায় আস্থা রাখতে চান।

নির্বাচনের তফসিল ইতোমধ্যে ঘোষণা হয়ে গেছে। কিছুদিন পরই সব জোট-মহাজোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থী ঘোষণা করবে। অনেক দল মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে তাই হাতে বেশি সময় না থাকায় ইতোমধ্যে নীলফামারীর ছয় উপজেলা ও চারটি পৌরসভা নিয়ে নীলফামারীর চারটি আসনে ভোটের রাজনীতির মাঠ সরব হয়ে উঠেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের কাছাকাছি গিয়ে তাদের মন জয় করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।অনেকেই মনোনয়ন ফরম ক্রয়ের জন্য ইতোমধ্যে ঢাকায় চলে গিয়েছেন।

নীলফামারী জেলার সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী ও ভোটের হাল-চাল নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক বিশ্লেষণ এ আজকে থাকছে নীলফামারী -১ আসনের খবর।

নীলফামারী-১: ডোমার ও ডিমলা উপজেলা নিয়ে গঠিত নীলফামারী-১ আসন। এই আসনে রয়েছে সাবেক চার ছিটমহল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ছিটমহলের উন্নয়নে সেখানকার বাসিন্দারা বেজায় খুশি। তিস্তা বিধৌত এই নির্বাচনী এলাকায় মানুষজন তিস্তার চরবাসীদের ভাগ্য উন্নয়নের দাবি করেছে। তবে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন রোধে নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য বাঁধ।

এই আসনে প্রথম, পঞ্চম, অষ্টম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হন। দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, তৃতীয়, চতুর্থ, সপ্তম ও নবম সংসদে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হন। আসনটিতে বর্তমানে টানা দুবারের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার।কিছুদিন আগে তিনি অসুস্থ ছিলেন তবে এখন তিনি সুস্থ এবং বেশ সক্রিয়।তবুও দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে-ঘাটে জনসংযোগ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

এদের মধ্যে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য সরকার ফারহানা আক্তার সুমি, ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যাপক খায়রুল আলম বাবুল, ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মনোয়ার হোসেন,ডোমার উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত আমিনুর চৌধুরী, আওয়ামীলীগ এর কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য ব্যারিস্টার ইমরান হোসেন জনিও রয়েছেন। উল্লেখ্য যে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মঞ্জুরুল চৌধুরী ব্যতিত আওয়ামীলীগ এর সব নেতাই এখন  মনোনয়ন ফরম ক্রয়ের জন্য ঢাকায় রয়েছেন।

অন্যদিকে, জাপার মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন সাবেক এমপি জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, ডিমলা উপজেলা জাপার সভাপতি লে. কর্নেল (অব) তছলিম উদ্দিন ও জেলা জাপার আহ্বায়ক সাবেক এমপি এন কে আলম চৌধুরী। বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাইফুল ইসলাম নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন।

বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচনে না আসার ঘোষণা দিয়েছে।তবে তারা নির্বাচনে এলে এই আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন ও  সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় বোন সেলিনা ইসলাম বিউটি অথবা তার স্বামী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী প্রার্থী হতে পারেন।

এবং এই আসনে জামায়াতে ইসলামী জেলা নায়েবে আমির  অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তারের নাম শোনা যায়। চরমোনাই পীর মুফতি মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এই আসনে তাদের দলের তিনজন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম উঠে এসেছে। তারা হলেন আব্দুল জলিল, আবু বক্কর সিদ্দিক ও ময়নুল ইসলাম। বাম দলের সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন বাসদ (খালেকুজ্জামান) মো. আসাদুজ্জামান পাটোয়ারী। ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট এ সিরাজুল ইসলাম প্রার্থী হতে পারেন।

এস/ভি নিউজ