যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৮ দিনের সফরে আজ রবিবার সকালে ঢাকা ছাড়ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীকাল সোমবার থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অবস্থান করবেন। সে সময় তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দেবেন। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অবস্থান করবেন।
তাঁদের বহনকারী ফ্লাইটটি নিউ ইয়র্ক সময় রবিবার রাত ১০টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে) নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন।
সফরসূচি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সাধারণ পরিষদ হলে ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের উচ্চ পর্যারের প্রথম দিনের বিতর্কে যোগ দেবেন। সেদিনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত নৈশ ভোজেও প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন।
তিনি আগামী ২২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে দুপুর ২টার (বাংলাদেশ সময় ২২ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা থেকে ১২টার) মধ্যে ভাষণ দেবেন।
সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), সর্বজনীন স্বাস্থ্য ও অর্থসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় ও সৌজন্যমূলক বৈঠকে অংশ নেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘সাধারণ বিতর্কে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন অগ্রগতি, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্বাস্থ্য খাতে সাফল্যের পাশাপাশি বিশ্ব-শান্তি, নিরাপত্তা, নিরাপদ অভিবাসন, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু ও ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরবেন।’
আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের রকফেলার সেন্টারে ইউএনআইডিও ও ডেলয়েট আয়োজিত ‘খাদ্যের জন্য চিন্তা-খাদ্য সরবরাহ চেইন উদ্ভাবনের জন্য এসডিজিকে ত্বরান্বিত করার জন্য সহযোগিতা’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মূল বক্তব্য দেবেন। একই দিনে তিনি ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে ‘এসডিজি সামিট-লিডার্স’ ডায়ালগ ৪ (এসডিজি অর্জনের জন্য সমন্বিত নীতি ও পাবলিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা) শীর্ষক আরেকটি সম্মেলনেও ভাষণ দেবেন।
সেদিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবের বৈশ্বিক শিক্ষাবিষয়ক বিশেষ দূত ও বিশ্ব স্বাস্থ্য অর্থায়নের জন্য বিশেষ দূত গর্ডন ব্রাউন ও নিউ ইয়র্কের লেক্সিংটন ভেন্যুতে গ্লোবাল বিজনেস কোয়ালিশন ফর এডুকেশনের এক্সিকিউটিভ চেয়ার সারাহ ব্রাউন আয়োজিত জাতিসংঘের ২০২৩ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে একটি উচ্চ পর্যায়ের নৈশ ভোজে যোগ দিতে পারেন।
১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সিআর-১৬-এ স্পেনের প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় কাউন্সিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সভাপতি আয়োজিত ‘টুওয়ার্ডস এ ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যানশিয়াল আর্কিটেকচার’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকেও ভাষণ দেবেন।
একই দিন শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সিআর-১১-এ বাংলাদেশ, অ্যান্টিগুয়া এবং বারবুডা, ভুটান, চীন, মালয়েশিয়া, চ্যাথাম হাউস এবং সুচনা ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত চিকিৎসা পরিষেবা ভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি উচ্চ পর্যায়ের ‘সাইড ইভেন্টে’ও যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ সেপ্টেম্বর কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য আন্তর্জাতিক পাবলিক ফিন্যান্সিং বৃদ্ধি এবং দক্ষতা নিশ্চিতকরণ’ শিরোনামে উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন (এফএফডি) বিষয়ে ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে একটি উচ্চ পর্যায়ের বিতর্কে প্রধান বক্তা হিসেবে ভাষণ দেবেন।
আগামী ২১ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে প্রধানমন্ত্রীর যোগদানের পাশাপাশি ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সৃষ্ট হুমকি মোকাবেলা’ শীর্ষক ব্রেকফাস্ট সামিটে এবং ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন।
সফরকালে জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার, জাতিসংঘ মহাসচিবের জেনোসাইড বিষয়ক উপদেষ্টা, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মহাপরিচালক এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটনে যাবেন। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি সকাল ১১টায় লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। প্রধানমন্ত্রী ৩ অক্টোবর রাতে লন্ডন থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন। তিনি আগামী ৪ অক্টোবর দুপুরে ঢাকায় পৌঁছাবেন।
এস/ভি নিউজ