রাশিয়ার আগ্রাসনের মোকাবিলা করতে পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক অভিযান চাইছে ইউক্রেন। তবে সেই আবেদন খতিয়ে দেখে শেষ পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া দিতে অনেক সময় নিচ্ছে একাধিক দেশ। ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে সাফল্য পেতে বিলম্ব ঘটছে বলে ইউক্রেন দাবি করছে।
এবার অতীতের সংশয় ঝেড়ে ফেলে সে দেশকে আরও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে যে, মার্কিন প্রশাসন দ্রুত সেই ছাড়পত্র দিতে চলেছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর কাছে এটিএসিএমস এবং জিএমএলআরএস নামের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা শত্রুপক্ষের ব্যাপক ক্ষতি করতে সক্ষম। প্রথমটি ৩০৬ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে এবং দ্বিতীয়টি ৭২ কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত হানতে পারে। লক্ষ্যবস্তুর উপর ক্লাস্টার বোমা নিক্ষেপ করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করার ক্ষমতা রাখে এই দুই মিসাইল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন সম্ভবত দুটির মধ্যে একটি, অথবা দুটি ক্ষেপণাস্ত্রই ইউক্রেনের হাতে তুলে দিতে পারে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি আমেরিকার পাঠানো ক্লাস্টার বোমা কাজে লাগিয়ে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বেশ সাফল্য পেয়েছে।
শুধু আমেরিকা নয়, জার্মানির কাছ থেকেও আরও উন্নত অস্ত্র চাইছে ইউক্রেন। মার্কিন প্রশাসনের দেখাদেখি জার্মানিও সেই ডাকে সাড়া দেবে বলে সে দেশ আশা করছে। তবে জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিউস বলেছেন, আমেরিকা ইউক্রেনকে এটিএসিএমএস মিসাইল দিলেই বার্লিন টাউরুস ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তার মতে, যুদ্ধের ক্ষেত্রে কোনো ‘স্বয়ংক্রিয়’ সিদ্ধান্ত থাকতে পারে না। তার মতে, জার্মানি বিষয়টি এখনো খতিয়ে দেখছে। যুদ্ধবিমান থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে টাউরুস ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা যায় বলে ইউক্রেন সেটি পেতে গভীর আগ্রহ দেখাচ্ছে। রাশিয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কাজে লাগিয়ে ইউক্রেনে এমনকি বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত করে চলায় ইউক্রেনও এমন অস্ত্র চাইছে। এখনো পর্যন্ত ব্রিটেন স্ট্রম শ্যাডো ও ফ্রান্স স্ক্যাল্প নামের ক্রুজ মিসাইল সরবরাহ করেছে।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকের কিয়েভ সফরের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদোমির জেলেনস্কি জার্মানি থেকে আরো সামরিক সাহায্যের আশা করছেন। দৈনিক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “সহযোগীদের আমাদের রাষ্ট্র ও আমাদের সৈন্যদের চাহিদা বোঝা এবং আমাদের জ্বালানি অবকাঠামোর সুরক্ষা সম্পর্কে শোনা অত্যন্ত জরুরি।”
তিনি এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফলাফল সম্পর্কে আশা প্রকাশ করেন।
রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে এই নিয়ে চারবার কিয়েভ সফর করলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক। জেলেনস্কি ছাড়াও তিনি ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ইউক্রেনের প্রতি সংহতি ও সে দেশকে সহায়তার ক্ষেত্রে জার্মানির প্রত্যয় আবার তুলে ধরলেও টাউরুস ক্রুজ মিসাইল সরবরাহের প্রশ্নে কোনো স্পষ্ট আশ্বাস দিতে পারেননি তিনি। জার্মান সরকার কত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সে বিষয়েও তিনি কিছু বলতে পারেননি। তার মতে, টাউরুস সংক্রান্ত সব খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সময় লাগছে। কুলেবা এই বিলম্ব সম্পর্কে হতাশা প্রকাশ করেন। সূত্র: রয়টার্স, ডয়েচে ভেলে