পাবনাবাসীর ৬০ বছরের অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে। পাবনা থেকে ঢাকা সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচলের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা অনুসারে সেপ্টেম্বরে পাবনা-ঢাকা স্বপ্নের ট্রেন চলবে। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম পাবনা সফরে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পাবনা-ঢাকা সরাসরি ট্রেন চালুর ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়চিত্তে ঘোষণা দিচ্ছি-সেপ্টেম্বর মাসে পাবনা-ঢাকা সরাসরি রেল যোগাযোগ শুরু হবে।’ একই সঙ্গে ট্রেনটির নাম কি হবে-তা ঠিক করার জন্য জেলাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে রোববার রেলপথ সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, রাষ্ট্রপতির ঘোষণার পরপরই রেলপথমন্ত্রীসহ আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছি। সেপ্টেম্বরে ঢাকা-পাবনা রুটে নতুন ট্রেন চালানোর সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী এ রুটে একাধিক ট্রেন পরিচালনা করা হতে পারে।
রোববার রেলপথ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেখা যায়-ঢাকা-পাবনা রুটে নতুন ট্রেন চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। রাষ্ট্রপতির ঘোষণা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তারা উঠে-পড়ে লেগেছেন। পুরাতন বা জোড়াতালির ইঞ্জিন-কোচ দ্বারা নয়, একেবারে নতুন ট্রেন নামাবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পাবনাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি-এ পথে ট্রেন চালানোর। কিন্তু কোচ-ইঞ্জিন স্বল্পতায় তা সম্ভব হয়নি।
রেলওয়ে অপারেশন ও পরিবহণ দপ্তর সূত্র জানায়, এ রুটে ট্রেন চালাতে রেলের সব দপ্তর একত্রিত হয়েছে। সম্ভাব্য রুট ও ট্রেনের সময়সূচিও ঠিক করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুটি রুট ঠিক করা হয়েছে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা-পোড়াদহ-ঈশ্বরদী হয়ে পাবনা রুট। এ রুটে ট্রেনের সময়সূচি-পাবনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৭টায় ট্রেনটি ছেড়ে কমলাপুর পৌঁছবে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে। এ ট্রেনটিই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিকাল ৫টায় ছেড়ে পাবনায় পৌঁছবে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে। অপর রুটটি নির্ধারণ করা হয়েছে-পাবনা থেকে মাঝগ্রাম এবং বঙ্গবঙ্গু সেতু পার হয়ে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত। এ রুটে পাবনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ট্রেনটি ছেড়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পোঁছবে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে। একই ট্রেন কমলাপুর স্টেশন থেকে বিকাল ৫টায় ছেড়ে পাবনা পৌঁছবে রাত পৌনে ১১টায়। শুরুতে একজোড়া ট্রেন দিয়ে উদ্বোধন করা হবে ঢাকা-পাবনা ট্রেন চলাচল। ১০ থেকে ১৪টি যাত্রীবাহী কোচ সংযুক্ত করা হবে। চাহিদা ও সরবরাহ অনুযায়ী পশ্চিমাঞ্চলে চলা আন্তঃনগর ট্রেনের ন্যায় শোভন চেয়ার, এসি চেয়ার ও কেবিন থাকবে।
যুগান্তরের পাবনা প্রতিনিধি আখতারুজ্জামান আখতার জানান, পাবনা-ঢাকা সরাসরি ট্রেন নিয়ে পাবনাবাসী আনন্দিত। যুগ যুগ ধরে যে স্বপ্ন ছিল, পাবনার কৃতীসন্তান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ঘোষণায় তা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ বাল্যবন্ধু শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও পাবনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ বলেন, পাবনা জেলা নানা কারণে ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী। আমার জানা মতে, যখন ঈশ্বরদীর পাকশীতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণ করা হয় তখন সারা বিশ্বে মাত্র ছয়টি দেশে রেল যোগাযোগ ছিল। তখন ঈশ্বরদী রেল রুটে সংযুক্ত হলেও পাবনা থেকে রেল সংযোগ ছিল না। পাবনা থেকে ঢাকায় সরাসরি রেল যোগাযোগের দাবি পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের। সেই কাজটি পাবনার কৃতী সন্তান মহামান্য রাষ্ট্রপতির হাত ধরে পূরণ হচ্ছে-এর চেয়ে আমার কাছে আনন্দের খবর আর কিছুই নেই।
পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রপতির একসময়ের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসম আব্দুর রহিম পাকন বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আমরা আনন্দিত, গর্বিত। আমি মনে করি রাষ্ট্রপতির হাত ধরে পাবনার অসমাপ্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আলোর মুখ দেখবে।