এই অন্ধকার নদীর তীর ধরে কোথায় ছুটে চলেছো? তুমি ছেড়ে এসেছো ঘর, তোমাকে দেখে দু’পাশের গাছপালা স্তব্ধতার শিকড় ধরে শ্বাস টানছে—যেন সতর্ক প্রহরী, যেন নদীর জলে ঝাঁপিয়ে প’ড়ে বুকে তুলে নেবে। আকাশের আড়ালে আরো এক গভীর আকাশের ভেতরে লুকিয়ে আছে যে চাঁদ, অকস্মাৎ উঁকি মেরে লুকিয়ে পড়বে দিগন্তের ওপারে, তার মুখে থাকবে মৃদু হাসি, গালে পড়বে টোল—তোমার ছুটে চলা তবু শেষ হবে না।
এই তো সেই নদী, এই তো উজানচকের খাঁ-খাঁ শূন্যতায় বয়ে যাচ্ছে উদাসিনী হাওয়া, দূরে ভাঙা নাটমন্দিরে মহামায়া আর আমি শেষবিদায়ের আগে এখানে মিলিত হতে এসেছি। তোমার কি মনে আছে সেই বৃষ্টির রাত, সেই বিহ্বল হাওয়া, তোমার শরীরের সেই কম্পিত আবেগ—অন্ধকারের ভেতরে তোমার জ্বলজ্বলে চোখ প্রবল গর্জন তোমাকে প্রশ্ন করছে : কোথায় যাচ্ছো তুমি? শূন্যতায় সেই কণ্ঠের প্রতিধ্বনি ফিরে আসছে বাতাসের সাথে। আর আমি তোমার চলমান ছায়া অনুসরণ করে প্রকৃতই ছুটে যাচ্ছি অজানার উদ্দেশে। তুমি কি বুঝতে পারছো, এই অন্ধকারে আমরা প্রকৃতই ছুটে যাচ্ছি পরস্পর পরস্পরের দিকে? তোমার একদিকে উদ্যত ছুরির ফলা, অন্যদিকে তৃষ্ণার্ত হৃদয়; তুমি কাকে গ্রহণ করবে—অন্ধকারকে, আমাকে, নাকি এই শূন্য নদীতীরের ব্যথিত বৃক্ষের চাপা দীর্ঘশ্বাসকে?