জয়ন্ত আচার্য :
দেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমামের দ্বিতীয় এইচ টি ইমাম আজ। তিনি এইচ টি ইমাম হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।
তিনি ১৯৩৯ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্ম গ্রহন খলৈণ । পিতা তাফসির উদ্দীন আহমেদ বি.এ. বি.এল. ও মাতা তাহসিন খাতুন। পিতার চাকুরির সূত্রে শৈশবে রাজশাহীতে অবস্থান এর্ রাজশাহীতেই প্রাথমিক শিক্ষা। পরবর্তীকালে লেখাপড়া করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া ও কলকাতায়। ১৯৫২ সালে ম্যাট্রিক পাস করেছেন ঢাকা কলেজিয়েট হাইস্কুল থেকে। এরপর ভর্তি হন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। এখান থেকেই ১৯৫৪ তে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এর পর ভর্তি হন রাজশাহী কলেজ এবং সেখান থেকে অর্থনীতিতে অনার্স সহ বি.এ. ডিগ্রী অর্জন করেন ১৯৫৬তে। অতঃপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এ সময় তিনি প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সাথে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৫৮ তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রী অর্জন করেন।
এরপর জীবিকার সন্ধানে তিনি রাজশাহী সরকারি কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এ সময় তিনি পাকিস্তানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৬১ ব্যাচের সিএসপিদের মধ্যে তিনি ৪র্থ স্থান লাভ করেন এবং পাকিস্তান সরকারের উচ্চ পদে যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স থেকে ‘উন্নয়ন প্রশাসনে’ পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে এম. এ. পাস করার পর তিনি রাজশাহী সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬২ তে তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে সদস্য হিসেবে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরি করেন। শুরুতে তিনি রাজশাহী কালেক্টরেটে তিনি ১৯৬২-১৯৬৩ মেয়াদে অ্যসিন্ট্যান্ট কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৬৫ তে তিনি ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন।
১৯৭১ থেকে ১৯৭৫- সাল পযন্ত তিনি ক্যাবিনেট সচিবের পদে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত তিনি সড়ক এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব-এর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত পরিকল্পনা সচিবের পদে নিযুক্ত ছিলেন।
১৯৭১ এর মার্চ মাসে তিনি রাঙ্গামাটি জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর দায়িত্বে ছিলেন। যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধে । ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর পর তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।
তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। ২০১৪ তে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দলীয় নির্বাচনি পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ।
তার আজ মৃত্যুবাষিকী গুলশানের বাসায় কোরআন খতম, বনানী কবরস্থানে কবর জিয়ারত, দোয়া, বারিধারার জামিয়া মাদানিয়া মসজিদে মিলাদ, দোয়া মাহফিল এবং এতিমদের মধ্যে খাবার বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কোরআন খতম, , তার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
এইচ টি ইমামের সুযোগ্য পুত্র উল্লাপাড়ার সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম বলেন , বাবা সারা জীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার চেষ্টা করে গিয়েছেন। আমিও বাবার আদর্শে পথ চলছি । উল্লাপড়ার উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি । উল্লাপাড়াতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আদর্শ আসন হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি ।
গিয়েছেন। সিরাজগঞ্জের উন্নয়নে কাজ করেছেন। আমিও বাবার
উল্লেখ্য এইচ টি ইমাম ২০২১ সালে বছরের ৪ মার্চ ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। নতুন প্রজন্মের কাছে তার জীবন ও কর্ম অনুস্মরনীয় ।তার দ্বিতীয় মৃত্যু বাষিকীতে তার প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি ।