চট্টগ্রাম-৮ আসনে (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ) উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অর্ধডজনেরও বেশি নেতা। সংসদ-সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর পর শূন্য হওয়া এই আসনে এখনো উপনির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেনি নির্বাচন কমিশন। তবে আসন শূন্য ঘোষণার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বিধান থাকায় মে মাসে এখানে উপনির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই হিসাব করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর হয়ে উঠেছেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে এখনো পর্যন্ত যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তাদের মধ্যে আছেন-নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমান, চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, প্রয়াত সংসদ-সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদের স্ত্রী শিরিন আহমদ, আরেক প্রয়াত সংসদ-সদস্য মইনউদ্দীন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান, নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি এসএম আবুল কালাম প্রমুখ।
এই আসন থেকে ২০১৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসাবে তৃতীয়বারের মতো সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জাসদের (একাংশ) কার্যকরী সভাপতি মইনউদ্দীন খান বাদল। ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর তিনি মারা গেলে আসনটি শূন্য হয়। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারির উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ। তিনি বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ানকে পরাজিত করে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। মোছলেম উদ্দীন আহমদ রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান। এ অবস্থায় আসনটিতে দ্বিতীয় দফায় উপনির্বাচন হবে।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার যখন আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করবেন সেই দিন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নির্বাচন করা। শুন্য ঘোষণার গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশন শিডিউল ঘোষণার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।’
বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে। এ অবস্থায় আসনটিতে বিএনপি প্রার্থী দেওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই গত উপনির্বাচনে কিছুটা উত্তাপ থাকলেও এবার সেটা নাও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষে জয়লাভ সহজ হবে। আর এই ধারণা থেকেই আওয়ামী লীগের টিকিট পেতে শুরু হয়েছে জোর প্রচেষ্টা। তবে এ আসনে যিনিই মনোনয়ন পান বা সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন তিনি সময় পাবেন দেড় বছরের কিছু বেশি। তাই এই স্বল্প সময়ের জন্য নির্বাচনে নেমে অর্থ ব্যয় করবেন কিনা সেটি নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কেউ কেউ। আসন্ন উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হিসাবে এখনো পর্যন্ত আলোচনায় রয়েছে নগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীনের নাম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম-৮ আসনের ৬৫ শতাংশ ভোটার শহরের। তাছাড়া মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে ওই সংসদীয় এলাকায় আমার অবাধ বিচরণ ছিল। উন্নয়নে কাজ করেছি। দল যদি এই এলাকার দায়িত্ব নিতে আমাকে মনোনয়ন দেয় তবে আমি নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি।’
দলীয় সূত্র জানায়, কোতোয়ালি আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ও সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বয়সের কারণে মনোনয়ন না চাইলে সে ক্ষেত্রে তার ছেলে মুজিবুর রহমান মনোনয়ন চাইবেন। ওই সংসদীয় এলাকার চান্দগাঁওয়ে তাদের বাড়ি। এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তারা। ওই আসন থেকে নুরুল ইসলাম বিএসসি এর আগেও নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। সে হিসাবে এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার দাবিদার বিএসসি পরিবার।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দলের জন্য আমার বাবার ত্যাগ সর্বজনবিদিত। বিশেষ করে এলাকায় দলের পক্ষে অর্থ খরচের যখন কেউ ছিল না তখন আমার বাবা দুই হাতে খরচ করেছেন। তাকে সেভাবে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মূল্যায়নও করেছেন। আমাদের পরিবার তার কাছে কৃতজ্ঞ। এ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার দাবি আমরা করতেই পারি। উপনির্বাচনে আমি মনোনয়ন চাইব। দল যদি মনোনয় দেয় তবে নির্বাচন করব।’ বোয়ালখালীর বাসিন্দা ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেনও এই আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। মনোনয়ন পেতে তিনি তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও চউকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামও এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। বাকলিয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান খানও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। এ আসনের প্রয়াত সংসদ-সদস্য মইনউদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খানও মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।