বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি হওয়া অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য মামলা চলার পক্ষে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি)। গতকাল শুক্রবার ফিলিপাইন ডেইলি ইনকোয়ারারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে ১৩ জানুয়ারি মার্কিন আদালত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে রায় দেন। ২০২০ সালের মে মাসে করা মামলায় মার্কিন আদালত আরসিবিসি এবং অন্য ছয় বিবাদীর ওপর তার বিচারিক এখতিয়ার আছে বলে নিশ্চিত করেন।
ফিলিপাইন স্টক এক্সচেঞ্জে গতকাল এক নোটিশে আরসিবিসি জানিয়েছে, আবেদন খারিজ করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে আপিলের নোটিশ দাখিল করেছে আরসিবিসি।
১৩ জানুয়ারি রায়ের পর পর আরসিবিসি ফিলিপাইনের স্টক এক্সচেঞ্জে এক নোটিশে বলেছিল, মামলার ‘মেরিট’ বিবেচনা না করেই আদালত তাঁর এখতিয়ার বিষয়ে রায় দিয়েছেন। ওই সিদ্ধান্ত ও আদেশ শুধু এখতিয়ারসংক্রান্ত। এটি কোনোভাবেই আরসিবিসি বা স্বতন্ত্র বিবাদীদের কোনো দায়বদ্ধতার বিষয়ে আদেশ নয়।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ এক হাজার ৬২৩ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১০ কোটি টাকা) চুরির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দুই কোটি ডলার শ্রীলঙ্কা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি আট কোটি ডলারের বেশি ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক হয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যায়। ওই অর্থ এখনো ফেরত পায়নি বাংলাদেশ।
ওই অর্থ উদ্ধারে ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আরসিবিসিসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে বছরের ৬ মার্চ ফিলিপাইনের সিভিল কোর্টে আরসিবিসি পাল্টা মানহানির মামলা করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউ ইয়র্ক বা ফেডারেল আদালতে ফিলিপাইনের বেসরকারি খাতের ব্যাংক আরসিবিসিসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই মামলা বাতিলে সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন করে আরসিবিসিসহ ছয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ফেডারেল আদালত ২০২০ সালের ২০ মার্চ মামলা বাতিলের ওই আবেদন খারিজ করে মামলাটি ফেডারেল আদালতের বদলে স্টেট কোর্টে পরিচালনার নির্দেশ দেন।
ফেডারেল আদালতের ওই নির্দেশের পর ২০২০ সালের ২৭ মে নিউ ইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট তথা ডিস্ট্রিক্ট আদালতে নতুন করে মামলা করে বাংলাদেশ। নতুন আদালতেও মামলা বাতিলের আবেদন করে আরসিবিসিসহ ছয় আসামি। তাদের ওই আবেদনের ওপর একাধিক দফায় শুনানির পর ১৩ জানুয়ারি ওই রায় আসে। মার্কিন আদালত বিবাদে মধ্যস্থতা করার জন্যও নির্দেশনা দিয়েছেন।