বিএনপি থেকে পদত্যাগ করলেন সাত্তার ভুঞা

195

সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগের পর এবার বিএনপি ছাড়লেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। দলের প্রতি ক্ষোভ থেকেই তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে মাইনুল ইসলাম তুষার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগের দরখাস্ত দেওয়া হয়। অনেক দিন ধরেই দল মনে করছে ওনাকে প্রয়োজন নেই।

একইভাবে এখন ওনার দলকে দেওয়ারও কিছু নেই। এ অবস্থায় ব্যক্তি ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করেছেন। নির্বাচন করার বিষয়ে পারিবারিকভাবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ’ 

এদিকে, আব্দুস সাত্তারের পদত্যাগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটের মাঠে নতুন হাওয়া বিরাজ করছে। পাঁচবারের সংসদ আব্দুস সাত্তার স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন বলে আলোচনা আছে। যদিও ওনার পক্ষ থেকে এখনো বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। এর আগে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে ১১ ডিসেম্বর তিনি সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন।  

জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ অবশ্য বলছেন, তার পদত্যাগে দলের কোনো ক্ষতি হবে না। আব্দুস সাত্তার দীর্ঘদিন ধরেই দলের কর্মকাণ্ডে নেই। পদত্যাগের বিষয়েও তিনি কারো সঙ্গে পরামর্শ করেননি। সরকারের সহযোগিতা নিয়ে তিনি ভোটের মাঠে তিনি পার পেতে পারেন বলেও এক নেতা মন্তব্য করেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা এখনো ওই নেতার পদত্যাগ নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারছেন না। পদত্যাগের ঘটনাটি দুঃখজনক বলেও মনে করা হচ্ছে। তারা মনে করছেন, প্রায় ৫০ বছর ধরে দলীয় সংসদ সদস্য না থাকা এ আসনটিতে এবার নিজেদের প্রার্থীকে জয় করে আনার বেশ সুযোগ রয়েছে, যা তারা কাজে লাগাতে চান।  

আলোচনায় জামাই-শ্বশুর, আ. লীগে ডজন প্রার্থী
আসন ছেড়েছে বিএনপি। ৫০ বছরের আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ আওয়ামী লীগের সামনে। আসটি ফিরে পেতে মরিয়া জাতীয় পার্টি। সার্বিক পরিস্থিতিতে ইসলামী ঐক্যজোট কোনো সুযোগ নেয় কিনা এ নিয়েও আছে জোর আলোচনা। এ হাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) সংসদীয় আসনের ভোট ঘিরে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ আসনে ভোট।  
এখানে এবারও আলোচনায় জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা ও তার মেয়েজামাই জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। ইতিমধ্যেই রেজাউল ইসলামকে মনোনয়ন দিয়েছে জাতীয় পার্টির একাংশ।  

জিয়াউল হক জানিয়েছেন, লাঙ্গল প্রতীকের ‘মালিক’ রওশন এরশাদের কাছ থেকে তিনি দলের মনোনয়ন আনবেন।  

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন অন্তত এক ডজন প্রার্থী। এরই মধ্যে কয়েকজন দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এলাকায় যাওয়া, সংবাদ সম্মেলন করাসহ নানাভাবে প্রচারণা চালিয়ে অনেকে নিজের প্রার্থী হওয়ার কথা জানান দিচ্ছেন।     

তবে দলীয় প্রার্থী না দিয়ে ‘ওপেন ভোটের’ বিষয়ে দলের সভাপতি মণ্ডলীর সভায় যে আভাস দেওয়া হয়েছে সেটিতে অনেকটাই হতাশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতারাও এমন সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন। তবে এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। নানা হিসেব-নিকেশে তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করা যায়।  

আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী না দিলে ভোটের হিসেব উপজেলা-ভিত্তিক হয়ে যেতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। যে উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের কম নেতা প্রার্থী হবেন, সেখানকার প্রার্থী জয়ী হতে পারেন বলেও অনেকে মত পোষণ করেন। আবার আওয়ামী লীগে বেশি প্রার্থী হলে জাতীয় পার্টি সুযোগ কাজে লাগায় কিনা এ নিয়েও আছে আলোচনা। কেউ কেউ বলছেন, এতে আসনটি আওয়ামী লীগের অবস্থান আরো খারাপ হবে। আবার অনেকে নিশ্চিন্ত মনে প্রার্থী হতে পারবেন বলে খুশি।   

সরাইল উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে মোট ভোটার দুই লাখ ৩৭ হাজার ১৫৩ জন। আশুগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ভোট সংখ্যা এক লাখ ৩২ হাজার ৯৭০। বিগত সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির তৎকালীন সংসদ সদস্য ও সরাইল বাসিন্দা জিয়াউল হক মৃধার কাছে ১০ হাজারের মতো ভোটের ব্যবধানে হেরে যান আওয়ামী লীগ নেতা ও আশুগঞ্জের বাসিন্দা স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঈন উদ্দিন মঈন। ওই সময়ে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলে মাঈন উদ্দিন সহজেই পার হতে পারতেন বলে মনে করা হয়।     

এদিকে, সংবাদ সম্মেলন করে এ আসনে নিজের মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারি কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজমুল হোসেন ও সাবেক যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ। গত বছর স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিন মঈনের নাম বেশ আলোচনায় আসে। মনোনয়ন চাইতে পারেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান আনসারী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ছফিউল্লাহ মিয়া, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ তানবীর হোসেন কাউছার, সরাইল উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্তু। সংরক্ষিত আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শিউলী আজাদ ও সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুরকে নিয়েও আছে আলোচনা।  

১৯৭৩ সালের পর ওই সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের কোনো দলীয় প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি। সারাদেশে যখন আওয়ামী লীগের জোয়ার তখনও (২০১৮) জোটের মারপ্যাঁচে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় সেখানে নিজেদের প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া জয়লাভ করেন, যিনি পাঁচবারের সংসদ সদস্য। ব্যক্তিগত ও এলাকায় দলীয় অবস্থান বিবেচনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে সামান্য ভোটে হেরে যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. মাঈন উদ্দিন মঈন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগের ওই নেতা হেরে যান বলে মনে করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘এ আসনের দুই উপজেলার মানুষ উন্নয়নবঞ্চিত। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কোনো বিকল্প নেই। দুই উপজেলাতেই আগের চেয়ে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী বলে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কঠিন হতো না। এখন কেন্দ্র এ ধরণের সিদ্ধান্ত কেন নিলো তা জানা নেই। ’

মনোনয়নপ্রত্যাশী মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু বলেন, ‘দল থেকে যাকেই প্রার্থী দেওয়া হবে তার পক্ষেই কাজ করবো। আর যদি শেষ পর্যন্ত প্রার্থী না দেয় তাহলে আমি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করবো। জয়ের ব্যাপারেও আমি বেশ আশাবাদী। ’ 

জেলা বিএনপির আহবায়ক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘উনি কেন পদত্যাগ করলেন জানি না। তবে এতে দলের কোনো ক্ষতি হবে না। ওনি আমাদের দলের কোনো কাজে লাগেন না। ’ 
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগের দিন নেই। এখন যদি সরকারের সহযোগিতা নিয়ে নির্বাচন জিততে পারে। ’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার জানান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে একজনের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আশাহত হবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে এখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর জয়লাভ জরুরি। ’ 

বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তারের পদত্যাগের বিষয়টি তিনি জেনেছেন উল্লেখ করে আল-মামুন সরকার বলেন, ‘উনি সজ্জন মানুষ। বিএনপি থেকে ওনার পদত্যাগ দুঃখজনক। তবে কেন তিনি পদত্যাগ করেছেন সেটি আমার জানা নেই। ’