ফ্রি তে চিকিৎসা সেবার ৫৭ বছর : সবদিকে প্রশংসার ঝড়

261

নীলফামারী প্রতিনিধি: নীলফামারীর কুষ্ঠ হাসপাতালে প্রায় ফ্রিতে মিলছে চিকিৎসা সেবা। ৫৭ বছর আগে গড়ে ওঠা এই হাসপাতালে এখনও ৫ টাকায় দেওয়া হয় চিকিৎসা। এছাড়াও হাসপাতালটিতে ভর্তির পর রোগীদের ফ্রিতে খাবারের পাশাপাশি দেওয়া হয় ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র।

জানা গেছে, ষাটের দশকে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত মানুষদের বলা হত ‘বড় অসুখের রোগী’। এ রোগের বীভৎস পরিণতির কথা ভেবে ভয়ে তখন কেউ মুখে আনত না কুষ্ঠ রোগের নাম। গ্রামের বাইরে হতো তাদের ঠাঁই। ওই সময় নীলফামারীসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় কুণ্ঠ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ফলে শহর থেকে দূরে নটখানা নামে এক নির্জন জায়গায় ১৯৬৫ সালে ৫২ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয় কুষ্ঠ হাসপাতাল।

এরপর থেকে ৫ দশকের বেশি সময় ধরে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে হাসপাতালটি। হাসপাতালেটিতে শুধু নীলফামারী কিংবা রংপুর বিভাগের রোগীরাই নন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে কুষ্ঠ রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন এখানে। চিকিৎসার পাশাপাশি এখান থেকে ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হয়।

কুষ্ঠ হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, মাত্র পাঁচ টাকার টিকিট কেটে হাসপাতালে ভর্তি হয় কুষ্ঠ রোগীরা। এরপর আর কোনো টাকার দরকার হয় না এখানে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খাবারদাবারের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে বিনা মূল্যে দেওয়া হয় ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র। সুস্থ হয়ে ফিরে গিয়ে যদি ফলোআপের জন্য হাসপাতালে আবার আসতে হয়, তাহলে আর একবার সেই পাঁচ টাকার টিকিটই কাটতে হয় রোগীদের।

জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজার কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হয়। নীলফামারী ঢাকা ও সিলেটে রয়েছে এ রোগের চিকিৎসার বিশেষায়িত হাসপাতাল। ১৯৮৫ সালে থেকে ৩৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ কুষ্ঠ রোগী এসব হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসলেও বর্তমানে এই হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমেছে।

হাসপাতালের কর্মকর্তা ডা. শাহিনা আকতার বলেন, সময়মতো ও সঠিক চিকিৎসা নিলে কুষ্ঠ রোগ পুরোপুরি সেরে যেতে পারে। তবে কুসংস্কার কুষ্ঠ রোগীদের চিকিৎসা ও প্রতিরোধে মূল প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে।

নীলফামারী সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৩০ সালের আগেই দেশ থেকে কুষ্ঠ রোগ নির্মূল করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। লক্ষ্য অর্জনে নীলফামারীতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন আমাদের কর্মীরা। ইতিমধ্যে এ রোগের বিরুদ্ধে ব্যপক কাজ করেছে হাসপাতালটি। ভবিষ্যতেও সঠিক তত্বাবধানের মাধ্যমে এখানে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এ রোগের পিছনে কুসংস্কার নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে চিকিৎসা নিলে এটি সম্পুর্ণ ভালো হওয়া সম্ভব । তবে পরিবারে একজনের কুষ্ঠ হলে অন্যদেরও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার আওতায় আনা জরুরি।