মেহেরপুর প্রতিনিধি: প্রেমের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ভিডিও ধারণ করার পর ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় চক্রের হোতা শহরের অভিজাত হোটেল আটলান্টিকার মালিক, তার ছেলে ও এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ছন্দা খাতুন আদালতে জবানবন্দীতে এই চক্রের মূল হোতা সাংবাদিক তুহিন আরন্যসহ চার সাংবাদিক, এক আইনজীবী ও ব্ল্যাকমেইলে শিকার কয়েকজনের নাম স্বীকার করেছেন।
বুধবার ভোররাতে সদর থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ওই তিনজনকে আটক করে। ওই দিন বিকালে তাদের মেহেরপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মেহেরপুর শহরের হোটেল আটলান্টিকের মালিক মতিয়ার রহমান (৫২), তার ছেলে মামুন (৩০) ও সদর উপজেলার হিজুলী গ্রামের এনামুল হকের মেয়ে ছন্দা খাতুন(৩০)।
মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, একটি নারী চক্র গড়ে তুলে মেহেরপুর শহরের আভিজাত শ্রেনীর হোটেল আটলান্টিকার মালিক মতিয়ার রহমান ও তার ছেলে মামুন বিভিন্ন ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা বা অভিজাত শ্রেনীর মানুষকে ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তা ভিডিও ধারণ করেন। সেই ভিডিও দিয়ে ব্লাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল। এই চক্রে বিভিন্ন এলাকার প্রায় ডজনখানেক সুন্দরী নারী রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, গত ২২ নভেম্বর মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের মনোয়ার হোসেন নামের এক এনজিও কর্মী নারী চক্রের প্রধান হোতা প্রিয়া খানকে আসামি করে দ-বিধির ৪১৭/৩৮৫/৩৮৬/৫০৬ ধারায় একটি মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করেন। তদন্তে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। তদন্তের অংশ হিসেবে হোটেল আটলান্টিকায় অভিযান চালিয়ে এ আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।
গত বুুধবার বিকালে মেহেরপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বর্ণালী রানীর আদালতে হাজির করা হলে ম্যাজিষ্ট্রেটের খাসকামরায় ছন্দা খাতুন জবানবন্দী প্রদান করেন।
জবানবন্দীতে ছন্দা খাতুন এ চক্রের সদস্য হিসেবে সাংবাদিক তুহিন আরন্য, আবু আক্তার করণ, নারী সাংবাদিক রেক্সোনা, মিজানুর রহমান জনি ও ছাত্রলীগ কর্মী ফয়সালের নাম স্বীকার করেন। হোটেল মালিক মতিয়ার, তার ছেলে মামুন ওই সাংবাদিকরা সকলে এই কাজের সাথে জড়িত। এরা অনেক মেয়েকে নিয়ে এ ধরণের অনৈতিক কাজ করে চাদাবাজী করে। কিছু মেয়ে স্বেচ্ছায় এবং কিছু মেয়েকে ট্যাপে ফেলে প্রায় ৫০টি মেয়েকে নিয়ে তারা এ ধরণের কাজ করেছে বলেও জানান তিনি।
জবানবন্দীতে ছন্দা জানায়, অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান (মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি) তিনি টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন মেয়েদের বিভিন্ন যায়গায় নিয়ে যান। হোটেল মালিক মতিয়ার আর সাংবাদিকরা মিলে পাটি ঠিক করতো।
জবানবন্দীতে বেশ কিছু ব্যবসায়ী, আইনজীবীসহ বিত্তশ্রেণীর কয়েকজনের নাম স্বীকার করেন যাদের কাছে থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে।
এদিকে, জবানবন্দী শেষে জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বর্ণালী রানী ছন্দা খাতুন, আটলান্টিক হোটেল মালিক মতিয়ার রহমান, তার ছেলে মামুন জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।