অনুমতি সোহরাওয়ার্দীতে, নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে চায় বিএনপি

73

শর্ত সাপেক্ষে বিএনপিকে আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। তবে নয়াপল্টনের বাইরে অন্য কোথাও সমাবেশ করতে চায় না বিএনপি। গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় নেতারা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার পক্ষে একমত হন। দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও নয়াপল্টনে সমাবেশের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে যাবেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা নয়াপল্টনে সমাবেশ করব।

এটা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। নয়াপল্টন ঘিরেই আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ’ তিনি বলেন, ‘আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চাইনি। সেখানেই সরকার কেন অনুমতি দিল? তাদের উদ্দেশ্য কী?’

এত দিন মৌখিক অনুমতির ভিত্তিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে এ বিষয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছিল। গতকাল ২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

নয়াপল্টনে যানজট ও নাগরিক দুর্ভোগ সৃষ্টির কারণ দেখিয়ে সমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। অনুমতিপত্রে বলা হয়েছে, পুলিশের অনুমতিপত্র মাঠ ব্যবহারের জন্য নয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপেক্ষর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।

অবশ্য স্থায়ী কমিটির সভায় দলের নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না চাইলেও ওই জায়গায় সরকারের পছন্দ কেন? বিএনপিকে চার দেয়ালে আবদ্ধ সরকার কী প্রমাণ করতে চায়?

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বড় সমাবেশ করার মতো উপযুক্ত নয়। সেখানে নানা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। মাঠে প্রবেশের দুটি ছোট গেট আছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী কিভাবে দুটি ছোট গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন? উদ্যানের বাইরেও হাজার হাজার নেতাকর্মী থাকবেন। মাঠে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এবং দেয়াল দিয়ে ঘেরাও উদ্যানের মূল সমাবেশের সঙ্গে বাইরের নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। তা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের শক্ত অবস্থান থাকায় ওই দিক দিয়ে কেউ মাঠে প্রবেশ করবে না। শাহবাগ মোড়েও নেতাকর্মীরা বাধার মুখে পড়তে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তার দায়ভার কে নেবে?

বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিতে ছাত্রলীগের সম্মেলন এগিয়ে আনা হয়েছে—এই বিষয়টি সরকারের উদারতা নয় বলে মনে করেন দলের নেতারা। তাঁরা বলেন, বিষয়টি তাদের কৌশল। ক্ষমতাসীনদের বক্তব্য ও কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিএনপিকে একটি গণ্ডির মধ্যে আটকাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

স্থায়ী কমিটির সভায় নেতারা বলেন, নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উন্মুক্ত জায়গা। সেখানে বড় সমাবেশের আলাদা একটি আমেজ তৈরি হয়। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে নেতাকর্মীদের চলে যাওয়ার মতো আশপাশের অনেক সড়ক রয়েছে, যা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেই।

সভায় আলোচনায় হয় জনদুর্ভোগ নিয়েও। এ বিষয়ে বিএনপির নেতারা বলেন, ১০ ডিসেম্বর শনিবার। ওই দিন সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকার সড়ক বন্ধ থাকলে তেমন সমস্যা হবে না। তা ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করলে মাঠ পেরিয়ে শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন হয়ে প্রেস ক্লাব ও সেগুনবাগিচা পর্যন্ত সমাবেশের প্রভাব থাকবে। নয়াপল্টনের চেয়ে শাহবাগ ধরে পুরনো পল্টনের সড়কটি অনেক বেশি ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ।

সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেন, বিএনপির সমাবেশে সরকার বাধা দেবে না বললেও মাঠের চিত্র ভিন্ন। ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী গণসমাবেশ কেন্দ্র করে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। গত কিছুদিনে রাজশাহী বিভাগে ৩৫টির বেশি মামলা করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসায় তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। ঢাকার সমাবেশ লোক জমায়েত যাতে কম হয় সে জন্য সরকার সবই করছে। মুখে বাধা দেবে না বলে নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করে সময়মতো গ্রেপ্তার শুরু করবে। অতীতে তা-ই দেখা গেছে।