বিবিসি প্রতিবেদন : ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের পর জেলেনস্কির টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা

 

ভিনিউজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার ফোনালাপে ‘অসাধারণ অগ্রগতি’ হয়েছে এবং ইউক্রেন ইস্যুতে তারা হাঙ্গেরিতে মুখোমুখি আলোচনায় সম্মত হয়েছেন। এই অবস্থায় তিনি ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেবেন কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

গত অগাস্টের পর এই প্রথম ফোনে কথা বললেন তারা। ট্রাম্প দাবি করেছেন, পুতিনের সাথে এই ফোনালাপটি “অত্যন্ত ফলপ্রসূ” হয়েছে।

ওয়াশিংটন ও মস্কোর প্রতিনিধিরা আগামী সপ্তাহে দেখা করবে বলে জানান তিনি।

ট্রাম্প বুদাপেস্টে পুতিনের সাথে তার বৈঠকের তারিখ নিশ্চিত করেননি। ক্রেমলিন জানিয়েছে যে “অত্যন্ত স্পষ্ট এবং বিশ্বাসযোগ্য” ফোনালাপের পরে “অবিলম্বে” শীর্ষ সম্মেলনের কাজ শুরু হবে।

 

এই আলোচনা এমন এক সময় হলো, যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আজ শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং ট্রাম্প ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন, যা রাশিয়ার অভ্যন্তরে গভীরভাবে আঘাত হানতে সক্ষম।

ফোনালাপের পর নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লিখেছেন, “ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হলে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে” তারা দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা করেছেন।

তিনি জানান, দুই দেশের ‘উচ্চ পর্যায়ের উপদেষ্টারা’ আগামী সপ্তাহে একটি অনির্দিষ্ট স্থানে বৈঠক করবেন, যেখানে মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।

ট্রাম্প আরও বলেন, শুক্রবার তিনি পুতিনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জেলেনস্কিকে অবহিত করবেন।

“আমি বিশ্বাস করি, আজকের ফোনালাপে বড় অগ্রগতি হয়েছে,” বলেন তিনি।

পরে সাংবাদিকদের তিনি জানান, “আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই” পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠক হতে পারে।

পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, “আমরা আমাদের টমাহকের মজুদ শেষ করতে পারি না। আমাদেরও এগুলো দরকার… তাই আমি জানি না, আমরা কী করতে পারি।”

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওলগা স্টেফানিশিনা বলেন, পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপের ঘণ্টা খানেক আগেই রাশিয়া ইউক্রেনে রাতভর হামলা চালিয়েছে, যা “প্রকৃত শান্তির প্রতি মস্কোর মনোভাবকে উন্মোচিত করে”।

তিনি আরও বলেন, “এই হামলাগুলো প্রমাণ করে, মস্কোর কৌশল হলো সন্ত্রাস ও ক্লান্তি সৃষ্টি। এর একমাত্র কার্যকর জবাব হলো চাপ—কঠোর নিষেধাজ্ঞা, শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা এবং দীর্ঘপাল্লার অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে যে চাপ তৈরি করা যেতে পারে।”

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “বুদাপেস্টে পরিকল্পিত বৈঠক শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য দারুণ খবর।”

তিনি আরও বলেন, “শান্তির জন্য ধৈর্য, শক্তি ও বিনয় প্রয়োজন। ইউরোপকে তার অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। অহংকার ও যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালার পরিবর্তে আমাদের রাশিয়ার সঙ্গে সংলাপে যেতে হবে। কেবল সংলাপই আমাদের মহাদেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে।”

উল্লেখ্য, গত আগস্টে আলাস্কায় ট্রাম্প ও পুতিনের মুখোমুখি বৈঠক শান্তি আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আনতে ব্যর্থ হয়। ওই বৈঠকের পর পুতিনের প্রতি ট্রাম্পকে বেশ কঠোর অবস্থান নিতেও দেখা যায়।

রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার হামলা শুরু করেছিল।

গত ১৫ই অগাস্ট যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় অনুষ্ঠিত সেই বৈঠকে ট্রাম্প আশা করেছিলেন, তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তি আলোচনায় রাজি করাতে পারবেন।

এর কয়েকদিন পর ট্রাম্প ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠক চলাকালে হঠাৎ পুতিনকে ফোন করেন।

এরপর থেকে হোয়াইট হাউস বা ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে আর কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের কথা জানানো হয়নি।

যুক্তরোষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় নিজের প্রচারণায় ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় ফিরেই কয়েক দিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারবেন। তবে পরে স্বীকার করেন, এই সংকট সমাধান তার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কঠিন।

আগের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তুলনায় ট্রাম্পকে রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল মনে করা হতো। আবার গত ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে জেলেনস্কিকে প্রকাশ্যে তিরস্কার করার পর তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন চরমে পৌঁছায়।

তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক অনেকটাই উন্নত হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বর মাসে ট্রাম্প তার অবস্থানে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ইউক্রেন তার মূল ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

শুক্রবার জেলেনস্কির ওয়াশিংটন সফরের সময় টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি আলোচনার শীর্ষে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

পূর্বের খবরজুলাই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা : প্রধান উপদেষ্টা
পরবর্তি খবরঅক্ষয়-বিরাট-অনুষ্কার ফিটনেসের রহস্য