ধস নেমেছে চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে। গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে চলতি অর্থবছরে। অর্থবছরের তিন মাস কেটে গেলেও অনেক মন্ত্রণালয় কাজই শুরু করতে পারেনি। এডিপির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও নেই বাকিগুলো।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থছাড়ে ধীরগতি এবং প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ের প্রভাব পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
গতকাল সোমবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইএমইডি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরাদ্দের হিসাবে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ছাড়া বেশির ভাগই তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না।
আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থ ব্যয় হয়েছে ১৩ হাজার ২১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা মোট এডিপি বরাদ্দের মাত্র ৪.৭৫ শতাংশ। এর আগে গত আট বছরের মধ্যে এত কম অর্থ কখনো ছাড় হয়নি। চলতি অর্থবছরে সরকারের এডিপি বরাদ্দ রয়েছে দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর আগে কোনো অর্থবছরে জুলাই-আগস্ট মাসে এত কম অর্থ ব্যয় হয়নি।
চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নে সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। আইএমইডির ওয়েবসাইটে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত জুলাই-সেপ্টেম্বরের তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে কোনো অর্থবছরই এডিপি বাস্তবায়ন হার সাড়ে ৬ শতাংশের কম ছিল না। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ৭.৫০ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) বাস্তবায়ন হার ছিল ৮.৫৫ শতাংশ।
সামগ্রিকভাবে এডিপি বাস্তবায়ন হারের সঙ্গে মাসের হিসাবে চলতি অর্থবছরের মে মাসে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। তথ্যানুযায়ী, শুধু সেপ্টেম্বর মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ছয় হাজার ৭২ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ সময় বাস্তবায়নের হার ২.১৮ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে খরচ হয় ১০ হাজার ৬৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ৩.৬৭ শতাংশ। অর্থাৎ মাসের হিসেবে আগের অর্থবছরের তুলনায় বাস্তবায়ন হার কমেছে ১ শতাংশেরও বেশি। আগের বছরগুলোতেও একই সময় বাস্তবায়ন হার ছিল ৩ শতাংশের বেশি।
এদিকে অর্থবছরের তিন মাস কেটে গেলেও খরচের খাতা খুলতে পারেনি তিনটি মন্ত্রণালয়-বিভাগ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়ন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তারা তিন মাসে বাস্তবায়ন করেছে বরাদ্দের ১৫.২০ শতাংশ। এ ছাড়া বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ ১৪.৩১ শতাংশ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ১৪.৫১ শতাংশ, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ ১১.৭৭ শতাংশ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮.৩৮ শতাংশ। শতাংশের হিসাবে বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকলেও টাকা খরচে এগিয়ে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।