বাংলাদেশ ও ভারত নিজ নিজ স্বার্থে একে অপরের সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে নিজ বৈঠক প্রসঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার তিনি এ তথ্য জানান। এ ছাড়া আগামী মাসে বিমসটেক শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেখা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
গতকাল বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে প্রধান উপদেষ্টার সফর নিয়ে সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এ সময় পররাষ্ট্র সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নিউইয়র্কে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা উভয় পক্ষ একমত হয়েছি যে, নিজেদের স্বার্থে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এতে বাংলাদেশ ও ভারতের উভয়েরই স্বার্থ রয়েছে।’ সময় ও সূচি না মেলায় জাতিসংঘে ড. ইউনূস ও মোদির বৈঠক সম্ভব হয়নি জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আশা করছি আগামী মাসে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন যখন অনুষ্ঠিত হবে; সম্ভাবনা রয়েছে তখন সেখানে দুই দেশের শীর্ষ নেতার দেখা হতে পারে। ভিসার বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ৫ আগস্টের পর কিছুদিন সমস্যা হয়েছে। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে সরকার কাজ করেছে, সেনাবাহিনী এখনও মাঠে রয়েছে। ইদানীং নিরাপত্তা নিয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা– এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, তাঁকে (শেখ হাসিনা) ফেরত আনার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
বাংলাদেশিদের জন্য ভারতসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশের ভিসা কার্যক্রম সীমিত করা নিয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘কবে দেশগুলো আবারও স্বাভাবিক কার্যক্রমে নিয়ে আসবে, তা বাংলাদেশ বলতে পারবে না। সংশ্লিষ্ট দেশ বলতে পারবে। ইতালির রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, বাংলাদেশিদের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত করতে অতিরিক্ত জনবল আনতে যাচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনায় ভিসা কার্যক্রমে গতি আনতে অনুরোধ করা হয়েছে।’
জাতিসংঘে বিভিন্ন বৈঠকে সরকারের সময়সীমা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে কিনা– প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘এমনভাবে বর্তমান সরকারের অবস্থান উপস্থাপন করেছি যে, সেখানে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের খুব বেশি প্রশ্ন ছিল না। প্রথমে প্রেক্ষাপটটি তুলে ধরা হয়েছে, এ সরকার নিজ থেকে দায়িত্ব নেয়নি বা নিজ থেকে দায়িত্ব নিতে চায়নি। যুব সমাজের প্রত্যাশা হচ্ছে, বাংলাদেশে এমন একটা ব্যবস্থা সৃষ্টি হোক, যাতে আর কেউ ক্ষমতায় এসে স্বৈরাচার হয়ে উঠতে না পারে। ফলে বিভিন্ন খাতে সংস্কার যুব সমাজ চেয়েছে। ফলে জাতিসংঘে আমরা এটাই বলেছি যে, এ সংস্কারগুলো করে, নির্বাচন অনুষ্ঠান করে সরকার চলে যাবে। এ জন্য ছয়টি কমিশনের কথা জানানো হয়েছে। কমিশনকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। ফলে কমিশনের সুপারিশ এবং তারপর আরও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের রোডম্যাপ ঠিক করা যাবে। তার আগে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না।’
সেনাপ্রধান সরকারের সময়সীমা নিয়ে মত দিয়েছেন, সেটি সরকারের মত কিনা– প্রশ্নের উত্তরে তৌহিদ হোসেন বলেন, সেনাপ্রধানের বক্তব্য পুরোটি দেখা হয়নি। দেখে বলতে পারব।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের মূল সভা ও সাইড লাইন মিলিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মোট ১২টি সভা এবং ২৫টি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সার্বিক বিবেচনায়, এবারের অধিবেশনটি ছিল বাংলাদেশের স্মরণকালের ইতিহাসের অন্যতম সফল অধিবেশন। জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকার বিষয়গুলো বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তুলে ধরার এটি ছিল প্রথম ও বিশ্বজনীন সুযোগ। প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট বিষয়ে যেমন– বিগত সময়ে বাংলাদেশে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অবক্ষয়, বিদেশে অর্থ পাচারের কথা উল্লেখ করে ব্যাপক সংস্কারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক এবং ক্ষমা চাওয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ৫২ বছরের একটা বিষয়– সেটা কাল সমাধান হবে বলে আমি মনে করি না। তবে যখন আমরা আলোচনার টেবিলে বসব, তখন ইস্যুটি থাকতে হবে।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘একটি হচ্ছে বাংলাদেশের নীতিগত অবস্থান; আরেকটি হচ্ছে বাস্তবতা। রোহিঙ্গা ইস্যুতে কেউ বাংলাদেশকে চাপ দেয়নি যে, আরও যদি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চায়, তাদের প্রবেশ করতে দেন। অথবা রোহিঙ্গারা এখানেই থেকে যাবে, এমন কথাও কেউ বলেনি। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে নিজ দেশে প্রত্যাবাসন।’