সরস্বতী পূজা আজ, সারাদেশে চলছে বিদ্যার দেবীর আরাধনা

আজ সোমবার সরস্বতীপূজা। হিন্দুধর্ম বিশ্বাসে সরস্বতী বিদ্যা, বাণী আর সুরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে শুভ্র রাজহংসে চেপে দেবী সরস্বতী আসেন জগতে। গতকাল মধ্যরাতে প্রতিমা স্থাপন করে পূজার আনুষ্ঠানিকতা সূচিত হয়েছে। চলবে আজ রাত অবধি।

সনাতন ধর্মীয় রীতিতে প্রত্যুষে দেবীকে দুধ, মধু, দই, ঘি, কপূর, চন্দন দিয়ে স্নান করানো হবে। এরপর চরণামৃত নেবেন ভক্তরা।

আজ সকাল ৯টার দিকে হবে বাণী অর্চনা। পুরোহিতরা ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমল লোচনে/বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যংদেহী নমোস্তুতে’ এ মন্ত্রে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা করবেন, পূজার আচার পালন করবেন। এরপর ভক্তরা পুষ্পাঞ্জলি দেবেন। তাদের বিশ্বাস, দেবী খুশি হলে বিদ্যা ও বুদ্ধি অর্জিত হবে।

আজ শীতল ষষ্ঠীতে সরস্বতীপূজা আজ শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃতর্পণের প্রথা প্রচলিত আছে। সরস্বতী বৈদিক দেবী হলেও সরস্বতী পূজা বর্তমান রূপটি আধুনিককালে প্রচলিত হয়েছে। প্রাচীন কালে তান্ত্রিক সাধকরা সরস্বতী-সদৃশ দেবী বাগেশ্বরীর পূজা করতেন।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকির ওপর তালপাতার তাড়ি ও দোয়াতকলম রেখে পূজা করার প্রথা ছিল। শ্রীপঞ্চমী তিথিতে ছাত্ররা বাড়িতে বাংলা বা সংস্কৃত গ্রন্থ, শ্লেট, দোয়াত ও কলমে সরস্বতী পূজা করত।

সরস্বতী পূজা উপলক্ষ্যে হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা আজ বাণী অর্চনাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মন্দির ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পূজা ছাড়াও অন্য অনুষ্ঠানমালায় আছে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা আরতি, আলোকসজ্জা প্রভৃতি।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে পূজা উৎসবের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। রোকেয়া হল. ফজিলাতন্নেসা মুজিব হল, কুয়েত মৈত্রী হল, শামসুন্নাহার হলেও অনুষ্ঠিত হবে সরস্বতী পূজা।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনেও সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছে। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ৩৭টি মণ্ডপে পূজা হবে।

এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩টি বিভাগ, দুটি ইনস্টিটিউট, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল এবং চারুকলা অনুষদের তিনটি বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগে পূজা হবে। এছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, পুরান ঢাকার বাণী ভবন, বুয়েটসহ সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি উদ্যোগেও এ পূজা পালন করা হবে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব বিদ্যার ও ললিতকলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতী পূজা আজ। মর্ত্যরে ভক্তকুল শ্বেতশুভ্র কল্যাণময়ী দেবী সরস্বতীর আবাহন করবে। ঢাক-ঢোল-কাঁসর, শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠবে দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ।

শাস্ত্রমতে, প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে শ্বেতশুভ্র কল্যাণময়ী বিদ্যাদেবীর বন্দনা করা হয়। ঐশ্বর্যদায়িনী, বুদ্ধিদায়িনী, জ্ঞানদায়িনী, সিদ্ধিদায়িনী, মোক্ষদায়িনী এবং শক্তির আধার হিসেবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সরস্বতী দেবীর আরাধনা করেন।

সরস্বতী দেবী শ্বেতশুভ্র বসনা। দেবীর এক হাতে বেদ, অন্য হাতে বীণা। এজন্য তাকে বীণাপানিও বলা হয়। সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, জ্ঞান ও বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী তার আশীর্বাদের মাধ্যমে মানুষের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করতে প্রতি বছর আবির্ভূত হন ভক্তদের মাঝে।

শিক্ষার্থীরাই এ পূজায় মনোযোগী হয়। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঘরে ঘরে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় বিভিন্ন এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূজার আয়োজন হলেও সরস্বতী পূজার প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল মাঠ। বিস্তীর্ণ এ মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষ্যে চমৎকার এক উৎসবে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে পূজা উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় উপাসনালয়সহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে।

পূর্বের খবরফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা কমবে না বাড়বে জানাল আবহাওয়া অফিস
পরবর্তি খবরঅশ্নীরকে একহাত নিলেন উরফি