বৃষ্টিতে আড়াই দিনের বেশি ভেসে যাওয়ায় কানপুর টেস্টের ফলের সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ। সেই ক্ষীণ সম্ভাবনার মাঝেই চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। বাংলাদেশের ইনিংস থামে ২৩২ রানে। বিপরীতে ভারত ৯ উইকেটে ২৮৫ রান তুলেই ইনিংস ঘোষণা করেছে। ফলে ভারতের লিড দাঁড়িয়েছে ৫২ রান।
সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ দু’জনেই নেন ৪ উইকেট করে।
জবাব দিতে নেমে ভারতের দুই ওপেনার যশস্বী জয়সোয়াল ও রোহিত শর্মা শুরু থেকেই চড়াও হন বাংলাদেশের দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও খালেদ আহমেদের ওপর। তবে বড় ঝড়টা বয়ে যায় হাসানের ওপর দিয়েই। তার করা প্রথম ওভারেই তিন চারে ১২ রান নেন জয়সোয়াল।
পরের ওভারে খালেদ আহমেদের বলে দুই ছক্কা মারেন রোহিত। ওভারে আসে ১৭ রান। ভারতের দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় দুই ওভারে ২৯ রান। হাসানের পরের ওভারে রোহিত ও জয়সোয়াল মিলে নেন ২২ রান। আর তাতেই তিন ওভারে ৫০ পেরিয়ে যায় ভারতের সংগ্রহ।
এটিই টেস্টে দ্রুততম দলীয় ফিফটি। এর আগে ট্রেন্টব্রিজে এ বছরের শুরুর দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪.২ ওভারে দলীয় ফিফটি করেছিল ইংল্যান্ড। ৫ বা তার কম ওভারে দলীয় ফিফটির আরও দুটি কীর্তি আছে ইংল্যান্ডের। ১৯৯৪ সালে ৪.৩ ওভারে এবং ২০০২ সালে ৫ ওভারে দলীয় ফিফটি ছুঁয়েছিল তারা।
এদিকে, রোহিত মাঝে একবার জীবন পেয়েছিলেন। তৃতীয় ওভারে হাসানের বল তার ব্যাটের গোড়ার অংশে লেগে উইকেটকিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েছিল। কিন্তু রিভিও নেয়নি বাংলাদেশ। রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা গেছে বল তার ব্যাটে লেগেছিল। অবশ্য রোহিত এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
চতুর্থ ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। পরের বলেই ভারতীয় ওপেনারকে বোল্ড করেছেন বাংলাদেশের স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। ১১ বলে ২৩ রান করেছেন রোহিত। তবে এরপর উইকেটে জেঁকে বসেন জয়সোয়াল।
জয়সোয়ালের ব্যাটে রানের ফোয়ারা ছুটেছে আজ। মাত্র ৩১ বলে তুলে নিয়েছেন ফিফটিও। যা ভারতের জার্সিতে টেস্টে যৌথভাবে তৃতীয় দ্রুততম ফিফটি। ১০ম ওভারে মিরাজের বলে ছক্কা হাঁকান জয়সোয়াল। এটি ভারতের চলতি বছরে ৯০তম ছক্কা। এক বছরে এর চেয়ে বেশি ছক্কা আর কোনো দলের নেই। ২০২২ সালে ৮৯ ছক্কা মেরে শীর্ষে উঠেছিল ইংল্যান্ড। আজ তাদের দুইয়ে নামালো ভারত।
দু’জনের ব্যাটে ১০.১ ওভারে ১০০ পার হয় ভারতের। এটিও একটি রেকর্ড। এর আগে ২০২৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিপক্ষে ১২.২ ওভারে ১০০ করেছিল ভারত। সেটিই ছিল এত দিন দ্রুততম দলীয় সেঞ্চুরি।
জয়সোয়ালকে অবশ্য সেঞ্চুরি করতে দেননি হাসান মাহমুদ। ১৫তম ওভারে তাকে বোল্ড করে ফেরান বাংলাদেশের ডানহাতি পেসার। ৫১ বলে ৭২ রান করেছেন জয়সোয়াল। এরপর বোলিংয়ে এসে আগ্রাসী রূপ ধারণ করা গিলকে বিদায় করেন সাকিব। ৩৬ বলে ৩৯ রান করা গিল তুলতে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন হাসানের হাতে।
ভারতকে চতুর্থ ধাক্কাটাও দেন সাকিব। নিজের পরবর্তী ওভারেই তিনি বিদায় করেন বিধ্বংসী ব্যাটার ঋষভ পন্থকে। ১১ বলে স্রেফ ৯ রান করে পন্থও ক্যাচ দেন হাসানের হাতেই। এরপর জুটি গড়েন বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল। রাহুল ফিফটি তুলে নিলেও ৩ রান দূরে থামেন কোহলি। ৩৫ বলে ৪৭ রান করা কোহলি সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন।
ভারতকে পরের আঘাতটি করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ক্রিজে সেট হওয়ার আগেই রবীন্দ্র জাদেজাকে (৮) বিদায় করেন তিনি। চাপে পড়ে যাওয়া ভারতকে আরও একবার ধাক্কা দেন সাকিব। ৩৪তম ওভারে তিনি ফেরান রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান অশ্বিন আজ ১ রান করেই বোল্ড হয়ে ফিরেছেন।
পরের ওভারেই ভারতের শেষ ভরসা রাহুলকে বিদায় করেন মিরাজ। ৪৩ বলে ৬৮ রান করা এই ব্যাটার পড়েন স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে। এরপর আকাশ দীপকেও (১২) তুলে নেন মিরাজ। এরপরেই ইনিংস ঘোষণা করে ভারত।
এর আগে মুমিনুল হকের সেঞ্চুরিতে ভর করে সব উইকেট হারিয়ে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৩৩ রান করে বাংলাদেশ। টানা দু’দিন পরিত্যক্ত হওয়ার আজ নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয় খেলা। প্রথম দিন খেলা হয়েছিল ৩৫ ওভার। যেখানে ৩ উইকেট হারিয়ে ১০৭ রান করে বাংলাদেশ।
এস/ভি নিউজ