সরাসরি ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়েছেন বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করা, সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা, স্থানীয় সরকারের সব ধরনের নির্বাচন একই দিনে করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। সব নির্বাচন সরাসরি ভোটে করারও সুপারিশ তাদের। শনিবার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ প্রস্তাব দেন সাংবাদিকরা। রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে এ সভা হয়।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করা, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা, নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার, হলফনামার তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের ব্যবস্থা করা, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেন কেউ নির্বাচিত না হন, সে ব্যবস্থা করার পরামর্শ এসেছে। ড. বদিউল আলম বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থীরা কোনো দলের সদস্য হতে পারবেন না বলে প্রস্তাব এসেছে। তাদের এ প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হবে। এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি, কমিশন সব প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে ভেবেচিন্তে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে।
সভায় ‘না’ ভোট ফিরিয়ে আনা, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে কারচুপি, অনিয়ম ও ভুয়া নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন সংস্কার, গণমাধ্যমের মালিকানার সঙ্গে যুক্তদের নির্বাচন করার সুযোগ না দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রস্তাব করা হয়।
তিনি বলেন, কমিশন যে সংস্কার করতে চাচ্ছে, তাতে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন ব্যয় অনেক কমে আসবে। বাঁচবে সময়। লাগবে অপেক্ষাকৃত অনেক কম জনবল।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, পাঁচ ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়– ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে তিনটিতে জাতীয় নির্বাচনের সমপর্যায়ের আয়োজন করতে হয়। কারণ ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদ নির্বাচন দেশজুড়ে হয়। এখন যে জেলা পরিষদ আছে, এটি কোনো নির্বাচনই না।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সমন্বিত ব্যবস্থার জন্য এখনই মোক্ষম সময়। কারণ, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকারের বেশির ভাগ সংগঠন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন নতুন ছবি আঁকার সময়। একটি সমন্বিত আইন করতে হবে, তার ভেতরে সব প্রতিষ্ঠান চলে আসবে এবং একটি শিডিউল দিয়ে সব নির্বাচন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্যে সরাসরি মেয়র ও চেয়ারম্যান নির্বাচন হয় না। পার্লামেন্টারি সিস্টেমে কাউন্সিলর ও মেম্বার নির্বাচিত হয়। কাউন্সিলর ও মেম্বাররা পরিষদে গিয়ে এক্সিকিউটিভ কমিটি নির্বাচন করেন। আমাদের দেশেও সে ধরনের সিস্টেম চালু করতে চাই। তাহলে নির্বাচনে অনেক কম ব্যয় ও সময় খরচ হবে। এত জনবলও লাগবে না।
তিনি বলেন, গত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ২৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংসদীয় পদ্ধতিতে করা হলে ৬০০ কোটি টাকা খরচ হবে এবং সময়ও কম লাগবে।
মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া নেক্সাস টেলিভিশনের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর আমীন আল রশিদ বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন হালনাগাদের পর কমিশন গঠন করা হলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হতো।
নারী নেত্রীদের সঙ্গে বৈঠক
গতকাল বিকেলে নারী নেত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এতে সংরক্ষিত নারী আসন বাড়ানোর পাশাপাশি সরাসরি নির্বাচন চেয়েছেন নারী নেত্রীরা। বৈঠক শেষে মহিলা পরিষদের সহসভাপতি রেখা চৌধুরী বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১৫০ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সাংবাদিক আয়েশা কবীর বলেন, নির্বাচনে নারীদের অধিকার, ভূমিকা ও সুযোগ দিতে হবে। প্রার্থী ও ভোটার হিসেবে শুধু নারীই না; পুরুষদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। তৃণমূল নারী নেত্রী ও কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা কুসুম বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি সংসদে সরাসরি নির্বাচন করে যাব। সংরক্ষিত রাখার দরকারটা কী? সংরক্ষিত যারা হচ্ছে, তারা ওই পরিমাণ কাজ পাচ্ছে না। আর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান যারা আছে, তাদের কোনো সাইনিং পাওয়ার নেই। সাইনিং পাওয়ার না দেওয়ায় মানুষের কাছে আমরা জবাব দিতে পারি না। সে ক্ষেত্রে এই পদ না থাকাই ভালো।’
বৈঠক শেষে কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী রাখা বাধ্যতামূলক করা, নির্বাচনে ব্যয় কমিয়ে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা ১০০ বা ১৫০ করার প্রস্তাব করেছেন।
এস/ভি নিউজ