‘যৌক্তিক’ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে না ডিম

দু’দিন বেচাকেনা বন্ধ থাকার পর অবশেষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পাইকারি আড়তে ডিমের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। ফলে খুচরা বাজারেও দেখা মিলছে ডিমের। তবে দাম কিছুটা কমলেও সরকার নির্ধারিত যৌক্তিক দামে আড়তে ডিম কেনাবেচা হয়নি।

এদিকে, সরবরাহ বাড়ানো ও দর নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় ডিমের প্রধান দুই পাইকারি বাজার তেজগাঁও ও কাপ্তান বাজারে প্রতিদিন ২০ লাখ ডিম সরবরাহ করবে বলে জানিয়েছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। কাপ্তান বাজারে আজ বৃহস্পতিবার থেকে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ডিম সরবরাহ শুরু করবে। এ কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। সংগঠনটি বলছে, প্রাথমিকভাবে ঢাকায় এ কার্যক্রম শুরু হলেও সারাদেশেই এর প্রভাব পড়বে।

আড়তদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে খামারির কাছ থেকে তারা প্রতিটি ডিম ১২ টাকা করে কিনেছেন। সেগুলো খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে ১২ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৩০ পয়সা দরে তারা বিক্রি করেছেন।

গতকাল বুধবার কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকার আশপাশে। অর্থাৎ, প্রতিটির দর পড়ছে ১৩ টাকা ৩৩ পয়সা। গত মঙ্গলবার প্রতি ডজন বিক্রি হয়েছিল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা দরে। সেই হিসাবে গতকাল ডজনে দর কমেছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। তবে পাড়া-মহল্লায় এখনও বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গতকাল ডিমের হালি (চারটি) বিক্রি হয়েছে ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা। সেই হিসাবে ডজনের দর দাঁড়ায় ১৬২ থেকে ১৭৪ টাকা।

অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ডিমের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে। নির্ধারিত দর অনুযায়ী, প্রতি পিসের দাম উৎপাদন পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ০১ পয়সা ও খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সা (ডজন ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা) হওয়ার কথা। তবে এক দিনও এ দরে ডিম বিক্রি হয়নি।

দফায় দফায় দাম বেড়ে যাওয়ায় গত রবি ও সোমবার রাতে তেজগাঁওয়ের বড় পাইকাররা আড়তে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। তাতে রাজধানীর তেজগাঁওসহ কিছু এলাকা থেকে ডিম এক রকম উধাও হয়ে যায়। তাদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে তাদের ডিম বেচাকেনা করতে হচ্ছে। ফলে তারা সরকারি সংস্থার জরিমানা ও শাস্তির মুখে পড়ছেন। এ সমস্যা সমাধানে গত মঙ্গলবার ভোক্তা অধিদপ্তর ডিম উৎপাদনকারী ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসে। বৈঠকে মঙ্গলবার রাত থেকে বড় কোম্পানি ও ছোট খামারিরা সরকার নির্ধারিত দরে সরাসরি তেজগাঁও ও কাপ্তান বাজারে পাইকারি ব্যবসায়ীদের ডিম সরবরাহ করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, খামারিরা গত মঙ্গলবার ডিম সরবরাহ করলেও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো করেনি।

পাইকাররা খামারির কাছ থেকে প্রতি পিস ডিম কিনেছেন ১২ টাকা দরে, যা উৎপাদক পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে ১ টাকা ৪২ পয়সা বেশি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, এই ডিম তারা খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করেছেন ১২ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৩০ পয়সা দরে। যা সরকার নির্ধারিত (পাইকারি পর্যায়) দরের চেয়ে ১ টাকা ১৯ পয়সা থেকে ১ টাকা ২৯ পয়সা বেশি।

তবে কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তারা এর চেয়ে কিছুটা বেশি দরেও ডিম কিনেছেন। তেজকুনিপাড়ার মায়ের দোয়া স্টোরের স্বত্বাধিকারী হেলাল উদ্দিন জানান, তিনি তেজগাঁও থেকে প্রতি পিস ডিম কিনেছেন ১২ টাকা ৪০ পয়সায়। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, মঙ্গলবার রাতে বড় কোম্পানিগুলো আড়তে ডিম পাঠায়নি। তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে তারা ডিম পাঠাবে। তবে দাম যৌক্তিক পর্যায়ে আসতে আরও দু-এক দিন সময় লাগতে পারে।

পূর্বের খবরসেপ্টেম্বরে সড়ক-রেল-নৌপথে ঝরল ৫৫৪ প্রাণ
পরবর্তি খবরকাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা