যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ঘুস ও প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত আদানি, বাংলাদেশে কী হবে

ভারতীয় ধনকুবের আদানি গ্রুপের চেয়ারপারসন গৌতম আদানি ও তার কয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ফেডারেল কৌঁসুলিরা ঘুস ও প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন। বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পেতে ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুস প্রদান এবং এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছে তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদানি গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়েও রয়েছে বিভিন্ন সমালোচনা ও অভিযোগ। সম্প্রতি পাওনা বিল পরিশোধ না হওয়ায় কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকির তথ্য সামনে আসে। এ বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিটিকে অসম ও অনৈতিক আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের জোর দাবি তোলা হচ্ছে। উচ্চ আদালত থেকেও এ চুক্তি পর্যালোচনার নির্দেশনা এসেছে। ঠিক এমন মুহূর্তে মার্কিন আদালতে আদানির অভিযুক্ত হওয়ার বিষয়টিকে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

আন্তর্জাতিক ও ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে গতকাল প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে গৌতম আদানি, তার ভ্রাতুষ্পুত্র সাগর আদানি ও আদানি গ্রিন এনার্জির সাবেক প্রধান নির্বাহী বিনীত জৈনসহ মোট আটজনকে ঘুস ও প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আদানি গ্রিন এনার্জির নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ পাওয়ার জন্য ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ২৫ কোটি ডলার ঘুস দেয়া হয়েছিল। প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে নিতে আদানি নিজে ব্যক্তিগতভাবে বেশ কয়েকবার এক ভারতীয় কর্মকর্তার সঙ্গে দেখাও করেছেন। এ প্রকল্প থেকে ২০ বছরে ২০০ কোটি ডলার মুনাফা আসার কথা রয়েছে। কোম্পানিটি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের আশ্রয় নিয়ে এ সময়ে ঋণ ও বন্ডের মাধ্যমে ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছে। এসব বন্ডে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মার্কিন ও অন্যান্য দেশের বিনিয়োগকারীরাও রয়েছেন।

আদালতে মার্কিন কৌঁসুলিরা আদানি ও তার সহযোগীদের ঘুস ও প্রতারণার অভিযোগের স্বপক্ষে প্রেজেন্টেশন আকারে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরেন। তারা জানান, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আদানির কোম্পানি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করতে গিয়ে তাদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। মার্কিন অ্যাটর্নি ব্রায়ান পিস এক বিবৃতিতে এ অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘অভিযুক্তরা বিলিয়ন ডলার মূল্যের চুক্তি সুরক্ষিত করার জন্য ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুস দেয়ার জন্য একটি বিস্তারিত স্কিম সাজিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করার জন্য ঘুসের স্কিম নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। আমার অফিস বৈশ্বিক আর্থিক বাজার থেকে দুর্নীতির শেকড় উপড়ে ফেলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের আর্থিক বাজারের যে উচ্চ নৈতিক মান রয়েছে, সেটিকে জলাঞ্জলি দিয়ে যারা অর্থ উপার্জন করতে চায়, তাদের হাত থেকে বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করতেও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন এক বিচারক গৌতম আদানি ও সাগর আদানির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আদালতের কৌঁসুলিরা এখন বিদেশী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে এ পরোয়ানা হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পক্ষ থেকেও গৌতম আদানি, সাগর আদানি ও তাদের আরেক সহযোগীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

মার্কিন আদালতে এমন এক সময় আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ দায়ের হয়েছে, যখন বাংলাদেশে গ্রুপটির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি বাতিলের দাবি ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গড্ডায় ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ২০১৭ সালে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।

আদানির সঙ্গে বিপিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। জ্বালানির মূল্য থেকে শুরু করে বিদ্যুতের দাম পর্যন্ত সব দিক দিয়েই চুক্তিটি অসম বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা। আবার শুরু থেকেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বিল পরিশোধ নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা। বিল বাবদ পাওনা বাড়তে থাকায় এক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয় ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি। এ বছরের মে মাসে বকেয়া বিল পরিশোধে তাগাদা দিতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে যান আদানি গ্রুপের পরিচালক প্রণব বিনোদ আদানি। গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আদানিসহ বিদ্যুৎ খাতের অসম চুক্তিগুলো পর্যালোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার আগেই আবারো বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বিল বাবদ পাওনা পরিশোধ নিয়ে নতুন জটিলতা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে বিল জটিলতায় আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার হুমকির তথ্য সামনে আসে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুততার সঙ্গে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটির পাওনা বিল পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আদানি পাওয়ারের পাওনার পরিমাণ ৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। এক্ষেত্রে আদানি পাওয়ারকে প্রতি মাসে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি পরিশোধের চেষ্টা করা হবে বলে বিপিডিবির সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সম্প্রতি উচ্চ আদালত ২০১০ সালের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের দুটি ধারাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন। অবশ্য এ আইনের অধীনের করা চুক্তিগুলো আপাতত বলবৎ থাকবে। তবে সরকার চাইলে এ চুক্তিগুলো পুনরায় দরকষাকষি করতে পারবে এবং চুক্তির ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে সেক্ষেত্রে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনটি বাতিলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন আমাদের জন্য বিষয়গুলো উন্মুক্ত হয়েছে এবং আমরা এগুলো দেখা শুরু করব।’

আদানির সঙ্গে করা বিদ্যুৎ চুক্তিটিকে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘প্রয়োজনে আমরা বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এটি পর্যালোচনা করব। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তি পর্যালোচনায় সরকারের গঠিত কমিটি যেসব চুক্তি পর্যালোচনা করছে, তার মধ্যে আদানির চুক্তিও রয়েছে। এ কমিটি কী প্রতিবেদন দেবে সেটির জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। পাশাপাশি আমরা নিজেরাও বিশেষ আইনের আওতায় থাকা সব চুক্তি পর্যালোচনা শুরু করছি। চুক্তির ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা, হলে সেটির ধরন কী; এগুলো দেখে আন্তর্জাতিক আইন ও আদালত সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ নিয়ে আমরা এগোব। আদানির চুক্তি পর্যালোচনার জন্য সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকেও আরেকটি নির্দেশনা এসেছে। ফলে এক্ষেত্রে আমাদের আইনি বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।’

ভারতের আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিপিডিবির ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয়ে করা চুক্তিটির মেয়াদ ২৫ বছর। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করার ২০ দিনের মাথায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সফরে দেখা করে যান আদানি গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানি। তবে কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে জটিলতা শুরু হয় গত বছরের শুরুতে। সে সময় বিল পরিশোধ নিয়ে আদানি ও বিপিডিবির মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়। এরপর আদানির কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এসে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিপিডিবির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নানা সময়ে বৈঠক করেছেন। এতেও কোম্পানিটির পাওনা পরিশোধে জটিলতা দূর না হওয়ায় বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ ছিল। দ্রুত সময়ে তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতারণা ও জালিয়াতি একটি বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। তার আরেকটি বড় শক্তি হলো নরেন্দ্র মোদির পৃষ্ঠপোষকতা। এ কারণে তার অনেক প্রতারণা ও জালিয়াতি ধামাচাপা পড়ে গেছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলার বিষয়টি আমাদের জন্য একটি ইতিবাচক খবর। সম্প্রতি আমাদের এখানে হাইকোর্ট থেকে আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনা বিষয়ে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সেটির ওপর ভিত্তি করে এটি পুনর্মূল্যায়ন করা এবং সেখানে রেফারেন্স হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়টি আসতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল করা। কারণ এটি সব দিক থেকেই দেশের স্বার্থবিরোধী। এটি কোনো বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি নয়, বরং মোদিকে খুশি করার জন্য শেখ হাসিনা সরকারের চুক্তি বলা যায়। কারণ আদানি হচ্ছেন মোদির ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিলের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে দায়ের করা অভিযোগের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। এমনকি চুক্তি বাতিলের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে আদানি আন্তর্জাতিক আদালতে গেলে সেখানেও যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়টি আমাদের জন্য সহায়ক হবে।’

বিদ্যুৎ কেনা বাবদ সরকারের বকেয়ার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে বিপিডিবির দেনা ৪৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে বড় একটি অংশ পাবে আদানি পাওয়ার। দেশে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করে আদানি। অব্যাহতভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে রাখতে গিয়ে বকেয়া পরিশোধ ও জ্বালানি কেনার অর্থ সংস্থান করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বিপিডিবি। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চুক্তি অনুযায়ী আদানির বকেয়া পরিশোধের দায় সরকারের ওপর বর্তায়। তবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সঙ্গে সম্পাদিত অসম চুক্তির বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এমনকি আদানির বিদ্যুৎ কেনা বন্ধ করে সে অর্থ দিয়ে দেশী বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য জ্বালানির জোগান বাড়ানো গেলে তা দীর্ঘমেয়াদে বেশি সুফল দেবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গঠন করা এক কমিটির তদন্তে আদানির বিদ্যুৎ আমদানিতে প্রায় ৪০ কোটি ডলারের শুল্ক ‘ফাঁকির’ প্রমাণ পাওয়া গেছে। বহুল আলোচিত বিদ্যুৎ কেনার এ চুক্তির সময় সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে পাশ কাটিয়ে শুল্ক ও কর অব্যাহতি দেয়ার তথ্যও উঠে এসেছে সংস্থাটির তদন্তে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ প্রবেশ ও সঞ্চালনের সময় আমদানির যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের অংশ হিসেবে কোনো বিল অব এন্ট্রি যেমন দাখিল করা হয়নি, তেমনি তা আইনি পন্থায় নিষ্পত্তি না করার প্রমাণও মিলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে কর ‘ফাঁকির’ বিপুল এ অর্থ বিপিডিবির কাছ থেকে আদায়ের সুপারিশ করেছে এনবিআরের কমিটি।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের অধীনে সম্পাদিত চুক্তিগুলো পর্যালোচনার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চুক্তির কোন কোন ধারা জাতীয় স্বার্থবিরোধী এবং দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর, সেগুলো খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে বেশকিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে করা চুক্তিতে কিছু সমস্যাযুক্ত ধারা খুঁজে পাওয়া গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তি পর্যালোচনায় গঠিত কমিটির সদস্য ও বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আদানির বিরুদ্ধে যেসব তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো বিশ্বাসযোগ্য এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে এগুলো বিশ্বাসযোগ্য এবং প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। পরবর্তী সময়ে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে এসব অভিযোগের চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে সেটি জানা যাবে।’

আদানির আগেও বিতর্কিত পন্থায় বাংলাদেশে বিদেশী কোম্পানির কাজ পাওয়ার নজির রয়েছে। সিমেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড ২০০৩ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল কোম্পানি টেলিটকের জন্য দেশজুড়ে নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ পায়। এ কাজ পেতে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা ও তাদের স্বজনদের ৫৩ লাখ ডলার ঘুস দিয়েছিল বলে পরে স্বীকার করে। এছাড়া নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে ঘুস দেয়ার মাধ্যমে সিমেন্স ইরাক, ভেনিজুয়েলা, ইসরায়েল ও রাশিয়ায় কাজ বাগিয়ে নিয়েছিল বলেও সে সময় তথ্য প্রকাশ পায়। এসব ঘটনায় মার্কিন আদালতের মামলার মুখোমুখি হতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। পরবর্তী সময়ে ঘুসকাণ্ডের নিষ্পত্তির জন্য সিমেন্স যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির কর্তৃপক্ষকে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার পরিশোধে বাধ্য হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে দীর্ঘদিন কোনো কাজ পায়নি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে বড় দরপতন দেখা গেছে। এতে একদিনে গ্রুপটির বাজার মূলধন ২৭ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। মূল অভিযুক্ত কোম্পানি আদানি গ্রিন এনার্জির ৬০ কোটি ডলারের বন্ড বিক্রির পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে আদানি গ্রুপের এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, মার্কিন আদালতে ঘুস ও প্রতারণার অভিযোগের বিষয়টিকে ভিত্তিহীন ও এক্ষেত্রে সম্ভাব্য সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।

আদানির বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি নিয়ে এখন ভারতের রাজনৈতিক মহলেও শোরগোল শুরু হয়েছে। দেশটির বিরোধী দল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সংসদীয় তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী গতকাল দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে গৌতম আদানিকে সুরক্ষা দেয়ার অভিযোগ তোলেন। একই সঙ্গে অবিলম্বে আদানিকে গ্রেফতারেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্যানুসারে, গৌতম আদানির সম্পদের পরিমাণ ৬৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। তিনি বিশ্বের ২২তম ও ভারতের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী। আদানি গ্রুপের সমুদ্রবন্দর, কয়লাখনি, বিমানবন্দর পরিচালনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে।

এস/ভি নিউজ

পূর্বের খবর৫ দেশে গমনেচ্ছু বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা
পরবর্তি খবরনারায়ণগঞ্জে শেখ হাসিনা-হারুনসহ ৬১ জনের নামে মামলা