মণিপুরের তিন জেলায় কারফিউ, ইন্টারনেট বন্ধ

এক সপ্তাহের বেশি সময় বন্দুকযুদ্ধ, ড্রোন ও রকেট হামলার পর এবার ভারতের মণিপুর রাজ্যের তিনটি জেলায় কারফিউ জারি করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি গোটা রাজ্যের ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিবর্তনের’ কারণে মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে ইম্ফল পূর্ব ও পশ্চিম এবং থৌবাল জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের বাসা থেকে বেশি দূরে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইম্ফল পশ্চিমের কাকওয়ায় মঙ্গলবার কারফিউ চলাকালে মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। ভারতের একটি সংবাদ সংস্থায় সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, শিক্ষার্থী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। একদিকে শিক্ষার্থীরা পাথর ছুড়ছেন, অপর দিক থেকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন যৌথ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
এমন পরিস্থিতিতে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গোটা রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা আবারও বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। প্রায় এক বছর আগেও সেখানে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এর থেকে মনে করা হচ্ছে, আগামী কয়েক দিনে রাজ্যে বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করছে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার।

গতকাল সোমবার মণিপুরে পৃথক ঘটনায় কুকি-জো সম্প্রদায়ের নেজাহোই লুংডিম নামের একজন নারী ও লিমখোলাল মেট নামের একজন সাবেক সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। লিমখোলাল ভারতীয় সেনাবাহিনীর আসাম রেজিমেন্টের হাবিলদার ছিলেন। দুজনেই দক্ষিণ মণিপুরের কাংপোকপি জেলার বাসিন্দা।

ভারতের প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, লুংডিমের দেহে বোমার স্প্লিন্টারের চিহ্ন ছিল। কাংপোকপির থাংবুহ গ্রামের একটি গির্জার বাইরে তাঁর দেহ পাওয়া যায়। সন্দেহ করা হচ্ছে, রোববার রাতে আততায়ীরা থাংবুহ গ্রামের কাছে একটি সিআরপিএফ ক্যাম্পে হামলা চালালে ক্রসফায়ারে মারা যান লুংডিম।

এদিকে লিমখোলাল মেটের দেহ সোমবার ইম্ফল পশ্চিম জেলার সেকমাই গ্রামে পাওয়া যায়। বাজারে যাওয়ার সময় তাঁকে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, কাংপোকপির মটবুংয়ের বাসিন্দা লিমখোলাল মেট রাতে ভুলবশত গ্রামে (সেকমাই) প্রবেশ করেছিলেন। সম্ভবত সেখান থেকেই তাকে অপহরণ করে পরে হত্যা করা হয়।

১ সেপ্টেম্বর থেকে মণিপুরে জাতিগত সহিংসতার বিভিন্ন ঘটনায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। নেজাহোই লুংডিম ও লিমখোলাল মেটে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোমবার ইম্ফলে বিক্ষোভ করেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। মণিপুর থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অপসারণ এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের সুরক্ষার দাবিতে থাউবাল ও ইম্ফলসহ বিভিন্ন অংশে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন। এর জেরে গোটা রাজ্যে ব্যাপক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়।

গত কয়েক দিনের সংঘাতের জেরে গতকাল সোমবার মণিপুরের বেশ কয়েকটি জায়গায় ভারতের পতাকা নামিয়ে মেইতেই সম্প্রদায়ের পতাকা টাঙিয়ে দেয় শিক্ষার্থী ও বিক্ষুব্ধ জনতা। থৌবাল জেলায় ডেপুটি কমিশনারের দপ্তরের ছাদেও মেইতেই সম্প্রদায়ের পতাকা টাঙিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল বিক্ষোভকারীরা মণিপুর সচিবালয় ও রাজভবনে জড়ো হন। এ সময় তাঁরা সাম্প্রতিক ড্রোন ও রকেট হামলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। মণিপুর পুলিশের মহাপরিচালক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবিও তোলেন তাঁরা। রাজভবনের দিকে মিছিল করার সময় নিরাপত্তা বাহিনী তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এত কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ তিন জেলায় কারফিউ জারি করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার।

এস/ভি নিউজ

পূর্বের খবরঅভ্যুত্থানে প্রাণ হারানোদের স্মরণে শনিবার সভা, খরচ প্রায় ৫ কোটি টাকা
পরবর্তি খবরড. ইউনূসের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংলাপ করবে যুক্তরাষ্ট্র