ভিনিউজ : রেস্তোরাঁ খাতে ভ্যাট বৃদ্ধি ও সম্পূরক শুল্ক (এসডি) আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। এই দাবি পূরণ না হলে সারাদেশে রেস্তোরাঁ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রতিবাদে এবং রেস্তোরাঁ খাতের সংকট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেন সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান।
তিনি বলেন, বর্ধিত ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে রেস্তোরাঁ মালিকরা মানববন্ধন করবে। প্রতীকী হিসেবে একদিনের জন্য সারা দেশের রেস্তোরাঁ বন্ধের কর্মসূচি নেওয়া হবে। তাতেও সরকার সিদ্ধান্ত না বদলালে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
লিখিত বক্তব্যে ইমরান হাসান বলেন, রেস্তোরাঁ মালিকদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ধাপে ধাপে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছিল। ফলে ভ্যাট আহরণ বহুগুণ বেড়েছে। বিগত অর্থবছরে ভ্যাট আদায় ১৯ শতাংশ বেড়েছে বলে খোদ এনবিআর চেয়ারম্যানও বলেছেন। রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ভ্যাট ৩ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছে ব্যবসায়ীরা। তাতে মানুষের ভ্যাট দেওয়ার প্রবণতা বাড়বে। কারণ এখনও ৭০ শতাংশ রেস্তোরাঁ ভ্যাটের আওতার বাইরে। কিন্তু এনবিআর বিদ্যমান ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ করা হচ্ছে। আগে থেকেই ১০ শতাংশ এসডি (সম্পূরক শুল্ক) নির্ধারণ করা আছে। ফলে রেস্তোরাঁয় খেতে হলে ভোক্তাকে মোট ২৫ শতাংশ কর দিতে হবে। কিন্তু ভোক্তার কাছ থেকে কোনোভাবেই এত পরিমাণ কর আদায় সম্ভব হবে না। গুলশান-বনানীর মতো এলাকার ভোক্তারা এই ভ্যাট দিতে সক্ষম হলেও বাকি কোথাও দেওয়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে ব্যবসা পরিস্থিতি খারাপ যাচ্ছে। বিক্রি ৩০ শতাংশের মতো কমে গেছে।
ইমরান হাসান বলেন, সরকারি হিসেবে গড় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১৩ শতাংশ। তবে বাস্তবে তা ৩০ শতাংশের মতো। এ পরিস্থিতিতে জনগণের কথা চিন্তা না করে শুধু আইএমএফের শর্ত পূরণের জন্য ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। এতে ভোক্তার ওপর খরচের চাপ বাড়বে। বর্তমানে অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে ভ্যাট দ্বিগুণ করাতে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা সংকটে পড়েছেন। ব্যবসা টেকানো নিয়ে শঙ্কায় ভুগছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা।
তার ভাষ্য, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিত্যপণ্য ভোক্তার ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। রেস্তোরাঁর ভোক্তারা সাধারণত মধ্যবিত্ত, কর্মজীবী, শ্রমজীবী। ভ্যাট বাড়লে তাদের ওপর উঠবে বাড়তি দামের বোঝা। এর ফলে রেস্তোরাঁ হবে ক্রেতাশূন্য।
ভ্যাট নিয়ে অন্যায়ভাবে এনবিআরের কর্মকর্তারা হয়রানি করে এমন অভিযোগ করে ইমরান হাসান বলেন, মাঠ পর্যায়ে ভ্যাট নিয়ে কর্মকর্তাদের নানা অন্যায় ও অত্যাচার সহ্য করে ব্যবসা করতে হচ্ছে। কর্মকর্তারাই বরং অন্যায় শেখাচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ভ্যাট পরিশোধের ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে বাধ্য করা হয়। রাজস্ব বোর্ডের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত সবাই এর সুবিধা নেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে সংগঠনের মহাসচিব বলেন, ব্যবসায়ীরা চান সবার আগে এনবিআরের সংস্কার হোক। কখনই কি এনবিআরের চাঁদাবাজি বন্ধ হবে না? এনবিআর করের আওতা না বাড়িয়ে কিংবা কর ফাঁকি রোধ না করে সহজ সমাধান হিসেবে ভ্যাট বাড়াচ্ছে। যারা নিয়ম-কানুন মেনে ভ্যাট-ট্যাক্স দেন তাদের ওপর অন্যায়ভাবে আরও চাপ দিচ্ছে এনবিআর।