ভারতের হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলাতে একটি মসজিদকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া বিতর্ক আপাতত প্রশমিত হলেও এ ঘটনায় যে স্ফূলিঙ্গ তৈরি হয়েছে তা ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যের অনেক অঞ্চলে। বহু জায়গায় মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে রাস্তাতেও নেমেছেন।
গত সপ্তাহে শুক্রবার যখন রাজ্যের সমস্ত রাজনৈতিক দল সিমলায় শান্তির জন্য আবেদন জানাচ্ছিল, সেই সময় কিছু হিন্দু সংগঠনের কর্মী এবং স্থানীয় লোকেরা রাজ্যের মাণ্ডি জেলায় কয়েক দশকের পুরনো একটি মসজিদের কাছেই ‘হনুমান চালিশা’ পাঠ করে তাদের ‘বিক্ষোভ’ প্রদর্শন করছিলেন।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ ছিল, অবৈধভাবে ওই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে।
মাণ্ডির জেলাশাসক অপূর্ব দেবগন অবশ্য দাবি করেছেন ওই জেলায় কোনো উত্তেজনা নেই।
যদিও শনিবারও সিমলা জেলার রামপুর, সুন্নি (সিমলা জেলার শহর) ও কুল্লু জেলা সদরে প্রায় একই রকম ছবি দেখা গিয়েছে। একাধিক মসজিদের কাছেই হনুমান চালিশা পাঠ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন হিন্দু সংগঠনের সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।
মাণ্ডিতে এ ঘটনা গত শুক্রবার, অর্থাৎ ১৩ সেপ্টেম্বর ঘটেছে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে হিন্দু সংগঠনের কিছু সদস্য মাণ্ডির জেল রোড-স্থিত মসজিদের সামনে জড়ো হন।
পরিস্থিতি যে উত্তপ্ত হচ্ছে তা আঁচ করে স্থানীয় প্রশাসন ওই এলাকায় ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি করে।
মসজিদের কাছে পৌঁছানোর আগেই বিক্ষোভকারীদের আটকে দেওয়া হয়। এরপর সেখানে বসেই হনুমান চালিশা পাঠ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা।
বিজেপির টিকিটে হিমাচল প্রদেশের মাণ্ডি আসন থেকে গত লোকসভা নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বলিউডের তারকা অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত। ভারতের রাজনীতিতে নবাগত হলেও গত কয়েক বছর ধরে বিজেপির একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে সামাজিকমাধ্যমে সরব ছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত এই ঘটনা যে দিনের, সে দিনই কিন্তু মাণ্ডি মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের কমিশনার তার শুনানিতে এক মাসের মধ্যে বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে মসজিদ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তার দ্বিতীয়তল অবৈধ ভাবে তৈরি হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল।
প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, যে জমিতে মসজিদের বাইরের দেওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে তা পূর্ত বিভাগের। এ অংশ অবশ্য চিহ্নিত করার পর মসজিদের তরফে তা ভেঙে ফেলা হয়।
মাণ্ডি মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ওই মসজিদ সম্পর্কে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ এসেছিল। এ অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে।
এরপর এ বিষয়ে নিয়ে তেমন বিবাদ দেখা না গেলেও সিমলার সঞ্জৌলি মসজিদকে ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার পরই মাণ্ডিতেও আচমকাই বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তুষার ডোগরা বলেন, রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ হচ্ছে। এর কারণ হলো সরকারের নড়বড়ে মনোভাব। মানুষ যখন রাস্তায় নেমেছে ঠিক তখনই সরকার সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছে।
‘শহরের প্রাণকেন্দ্রে মাণ্ডিতেও একটা মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। সঞ্জৌলিতেও একই ঘটনা ঘটেছিল। দোষী অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত’, বলেন তিনি।
যেভাবে বিতর্ক তৈরি হল
সম্প্রতি মসজিদের কাছে হনুমান চালিসা পাঠের মধ্য দিয়ে যে রীতিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন চলছে তা প্রথম দেখা যায় শিমলার সঞ্জৌলিতে। ঘটনাটা ২ সেপ্টেম্বরের।
তবে মূল ঘটনার সূত্রপাত ৩০ আগাস্ট রাতে। সেদিন শিমলার মালিয়ানা অঞ্চলের বাসিন্দা যশপালের সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজন মুসলিম যুবকের বিবাদ হয়। অভিযুক্ত যুবকেরা ওই এলাকায় একটা সেলুন চালায়।
পুলিশ ওই বিবাদের তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারে যশপাল নাম ওই বাসিন্দাকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত যুবকরা সঞ্জৌলির মসজিদে থাকে। আদতে উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদের বাসিন্দা ওই যুবকেরা।
পুলিশ যখন অভিযুক্তদের আধার কার্ড পরীক্ষা করে, তখন দেখা যায় অধিকাংশ যুবকেরই জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি বলে নথিতে উল্লেখ করা রয়েছে। এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সন্দিহান হয়ে মালিয়ানা, চামিয়ানার স্থানীয় লোকজন তাদের কাগজপত্র খতিয়ে দেখার দাবি জানান।
এরপরই ২ সেপ্টেম্বর মসজিদের সামনে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সময় মসজিদের অবৈধ নির্মাণের বিষয়টিও উঠে আসে। অবৈধ নির্মাণ ভাঙার দাবিতে স্থানীয়দের বিক্ষোভ এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে ১১ সেপ্টেম্বর পুলিশকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বল প্রয়োগও করতে হয়েছিল।
এখন প্রশ্ন হলো সঞ্জৌলির মসজিদ সংক্রান্ত বিতর্কের আগুন মাণ্ডি বা হিমাচল প্রদেশের অন্য জায়গায় পৌঁছল কীভাবে?
মাণ্ডির বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়া গোপাল কাপুর বলেন, স্থানীয় লোকজন আগে থেকেই এই মসজিদ নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। সিমলায় যা ঘটেছে তাতে মাণ্ডির বাসিন্দাদের ক্ষোভ বেড়েছে।
এর পাশাপাশি অন্য এক দাবিও করেন তিনি। কাপুর বলেন, বিতর্ক কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। আমাদের দাবি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে দিয়ে মসজিদের বাইরে ও নিচে খনন করানো হোক। তাহলে এর নিচে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যাবে।
মসজিদ যে জমির ওপর তৈরি সে সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানকার রাজা একজন মুসলিম তাঁতিকে নামাজ পড়ার জন্য এই জায়গাটা দিয়েছিলেন। কাপুরের অভিযোগ, পরে রাজস্ব নথিতে তছরুপ করে মসজিদের নামে জমি হস্তান্তর করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজস্ব দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ১৯৭০ সালের সেটেলমেন্ট রেকর্ড অনুযায়ী এই জমিটা মসজিদ। কিন্তু মসজিদের দ্বিতীয় তলে যে নির্মাণ, সে সম্পর্কে প্রশাসনের কাছে কিন্তু কোনও তথ্য নেই।
‘এখানে ৪৫ বর্গমিটার জমিতে মসজিদ বানানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে নির্মাণের কাজ হয়েছে ২৩২ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে।’
তবে ওই মসজিদের ইমাম ইকবাল আলীর দাবি যে ‘অবৈধ’ নির্মাণকে ঘিরে প্রশ্ন উঠেছিল, তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমরা অবৈধ নির্মাণের নোটিশ পেয়েছিলাম। যার ঠিক পরেই গণপূর্ত বিভাগের জমিতে তৈরি ওই দেওয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে।
মাণ্ডির জেলাশাসক অপূর্ব দেবগন বলেন, মসজিদকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক তা এখন পুরোপুরি শান্ত হয়েছে। ওই মামলা পৌর কমিশনারের আদালতে বিচারাধীন ছিল এবং এখন সে সংক্রান্ত নির্দেশ এসেছে। সেই নির্দেশ মেনে পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব পুরসভার।
একই সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, শুক্রবার এখানে একটা বিক্ষোভ হয়েছিল। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যে যে ব্যবস্থা প্রয়োজন তার সবই করা হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
সিমলার পরিস্থিতি কতটা শান্ত হয়েছে?
সিমলার সঞ্জৌলিতে মসজিদকে ঘিরে উত্তেজনার সূত্রপাত একটা বিবাদকে কেন্দ্র করে। ১৪ বছর ধরে চলা বেআইনি নির্মাণের একটি মামলা নিয়ে মসজিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।
এরপরই মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ‘অবৈধ’ নির্মাণ বলে চিহ্নিত অংশ সিল করে তা ভেঙে ফেলার অনুমতি চাওয়া হয়। এরপর রাজ্য সরকার একটা সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে বিষয়টা ঠান্ডা করার চেষ্টা করে। সেই সময় অনুমান করা হয়েছিল এই বিতর্ককে ঘিরে উত্তেজনা প্রশমিত হবে।
কিন্তু সিমলার রামপুর, সুন্নি ও কুল্লু জেলা সদরে স্থানীয় মসজিদকে ঘিরে নতুনভাবে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এর পাশাপাশি সিমলায় বিক্ষোভের সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভকারীদের ওপরে বল প্রয়োগের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানানো হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে প্রতিবাদ জানাতে একই পদ্ধতি নেওয়া হয়। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই মসজিদের বাইরে বা কাছাকাছি হনুমান চালিশা পাঠ করতে দেখা যায় বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীদের।
হিমাচল প্রদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চের রাজ্য সভাপতি কমল গৌতম দাবি করেছেন, গত ১০ বছরে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে সুন্নি নামক একটি জায়গায়। কিন্তু কার জমিতে এই নির্মাণ করা হয়েছে সে সম্পর্কে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য নেই।
তার মতে, স্থানীয় মানুষের কাছে এই সংক্রান্ত কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই, তাই রাজ্য সরকারের উচিত বিষয়টা স্পষ্ট করে দেওয়া।
তার দাবি, কুল্লুতেও একই ঘটনা দেখা গিয়েছে। সেখানে পাঁচতলা মসজিদ খুব অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সরকারি জমিতে অবৈধভাবে ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ওই মসজিদ।
উত্তেজনার আঁচ ছড়িয়েছে অন্যত্রও
সম্প্রতি কুলুর প্রায় ৫০ বছরের পুরনো জামা মসজিদকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখা যায়। স্থানীয় মানুষ সংগঠিত হয়ে বিক্ষোভ দেখান।
কুলুর বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছেন ক্ষিতিজ সুদ। তার দাবি, এ মসজিদ পুরনো হলেও জমির প্রকৃত মালিক রাজ্যের খাদি বোর্ড।
এ অভিযোগ অবশ্য খারিজ করে দিয়েছেন মসজিদের ইমাম নবাব হাশমি। নবাব হাশমির বক্তব্য, ১৯৯৯ সালে জমিটা মসজিদকে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
সিমলার সুন্নি শহরে সংখ্যালঘু কল্যাণ কমিটির সভাপতি মুশতাক কুরেশি বলেন, এই মসজিদ ব্যক্তিগত জমিতে তৈরি এবং সমস্ত আইনি আনুষ্ঠানিকতার অধীনেই এই নির্মাণ হয়েছে। অযথা গোটা সমাজের দিকে কারও আঙুল তোলাটা কিন্তু ঠিক নয়।
তবে কুলু মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ২০০০ সালে দুই বছরের মধ্যে একটা দ্বিতল মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে সেই নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ২০১৭ সালে।
মসজিদ যেখানে, তার কাছেই একটা দোকান চালান সঞ্জীব শর্মা। তার কাছে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ মসজিদ স্বাধীনতার আগের। এর আগে এখানে একতলা মসজিদ ছিল, যা পরে ভেঙে ফেলা হয় এবং মসজিদের নতুন ভবন তৈরি করা হয়।
‘গত পাঁচ বছরে এখানে পাঁচ তলা তৈরি করা হয়েছে এবং হঠাৎই নামাজ পড়তে আসা মানুষের সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে।’
প্রশাসন জানিয়েছে, ২০১৭ সালে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ ওঠার পর আদালতের পক্ষ থেকে সেখানে নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
সিমলারই অন্য একটা মসজিদকে ঘিরেও বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
সিমলা জেলার রামপুর মসজিদ কর্তৃপক্ষ হনুমান ঘাটে যাওয়ার পুরনো রাস্তা দখল করেছে বলে অভিযোগ তুলছেন স্থানীয়রা।
তন্ময় শর্মা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেছেন, বছর দুয়েক আগে আমি প্রশাসনকে এই বিষয়ে জানিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
রামপুরে কওমি একতা মঞ্চের আহ্বায়ক মুহাম্মদ জিশান বলেন, আমরাও চাই আইন তার নিজস্ব পথে চলুক। কিন্তু এই প্রথম মসজিদের বিরুদ্ধে জমি দখল করে নেওয়ার কোনও অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
তবে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে ১৫ দিন সময় বেঁধে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
হিন্দু সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের দাবি, রাজ্য জুড়ে ‘বিতর্কিত’ মসজিদের নিয়ে একটা ‘ডেটাবেস’ তৈরি করা হয়েছে।
ওই হিন্দু সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেছেন, এখন যেহেতু অভিযান শুরু হয়েই গিয়েছে, তখন থেমে যাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। এর জন্য শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে এবং স্থানীয় লোকজনও বিক্ষোভে শামিল হচ্ছেন।
তিনি বলেন, এটা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। সিমলার অভ্যন্তরে এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে গত ১৫ বছরে জনসংখ্যাতাত্ত্বিক পরিবর্তন দেখা গেছে। এই সব বিষয় তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য।
হিমাচলে রাজ্য সরকার স্তরে জনবিন্যাসের পরিবর্তন নিয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, তাই ওই কর্মকর্তা যে দাবি করেছেন তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এ পরিস্থিতি কেন তৈরি হল?
সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এমপিএস রানার মতে, ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, হিমাচলের মুসলিম জনসংখ্যা তিন শতাংশেরও কম।
‘বিগত এক দশক ধরে, অন্যান্য রাজ্য, বিশেষত পশ্চিম উত্তর প্রদেশ থেকে মুসলিম অভিবাসীদের আগমন ঘটেছে, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই ফল ও জামা-কাপড়ের ব্যবসা করেন অথবা দর্জি এবং নাপিত হিসাবে কাজ করেন।’
‘গত কয়েক বছরে স্থানীয় ব্যবসায় তাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এই উত্তেজনার অন্যতম কারণ।’
সিমলার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. রমেশ কুমার বলছেন, হিমাচল প্রদেশ কিন্তু এর আগে কখনও হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন উত্তেজনা দেখেনি। অযোধ্যায় যখন বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়, তখনও কিন্তু হিমাচলে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
‘এখন শুধু মসজিদ নির্মাণ বা বেআইনি নির্মাণ নয়, ভিন রাজ্য থেকে আসা মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াটা এই উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার পিছনে একটা বড় কারণ’, জানান তিনি।
তবে সাম্প্রতিক বছরে বাইরে থেকে আসা মুসলমানদের সংখ্যা যে বেড়েছে সে সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য মেলেনি।
সংখ্যালঘু কল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যান মুশতাক কুরেশি বলছেন, সবাইকে দোষারোপ করার চেয়ে বরং এখানে আসা সমস্ত অভিবাসীদের পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো।
অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু সাধারণ মানুষের কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এ সমস্ত মামলার সমাধান আইন মেনে করা হবে। আইনের মাধ্যমে সমাধান করা হবে। আগ্রাসী হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে রাজ্যের বদনাম হবে। এতে পর্যটনের ক্ষতি হবে। -বিবিসি।