বাংলাদেশের ৩২ হাজার পূজা মণ্ডপে চলছে শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি: রয়েছে শঙ্কাও

জয়ন্ত আচার্য
বাংলাদেশের ৩২ হাজার পূজা মণ্ডবে চলছে শেষ মুহূর্তের শারদীয় দূর্গা উৎসবের প্রস্তুতি।
মণ্ডপে-মণ্ডপে চলছে পুরো উদ্যমে প্রতিমায় রংয়ের তুলির আঁচড়। তবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বেশ শঙ্কায় আছে দেশের সনাতনী ধর্মাবলম্বীদেরা।

শুভ মহালয়ায় দেবীর আবাহন শেষে মণ্ডপে মণ্ডপে এখন দেবী বরণের প্রস্তুতি চলছে। তাই দম ফেলার অবসর নেই প্রতিমা শিল্পী ও আয়োজকদের। রং-তুলির আঁচড় শেষে প্রতিমা মণ্ডপে নেওয়ার অপেক্ষা।

উৎসবের দিনগুলোকে নির্বিঘ্ন রাখতে প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসনও। গড়ে তোলা হচ্ছে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

তাই যতই পূজার দিন এগিয়ে আসছে, শিল্পীদের ব্যস্ততা ততটাই বাড়ছে। মন্দিরে কারিগররা ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ-কার্তিক ও অসুরের প্রতিমা। কিছু কিছু মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে রংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তুলতে তুলির শেষ আঁচড় দিচ্ছেন প্রতিমা শিল্পীরা।

সেই প্রস্তুতিই সরেজমিন দেখা গেছে রাজধানী ঢাকার মন্দিরগুলোতে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনা কালীমন্দির, রাজারবাগ কালীমন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন ও রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরে প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি চলছে সাজসজ্জার কাজও। দম ফেলার ফুসরত নেই প্রতিমা শিল্পীদের। কোনো কোনো প্রতিমায় আবার পরানো হচ্ছে শাড়ি, হাতের বালাসহ অন্যান্য গহনা। পাশাপাশি আলোকসজ্জা, প্যান্ডেল তৈরি, মণ্ডপ ও তার আশপাশে সাজসজ্জার কাজসহ নানা কাজেও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন পূজার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

রমনা কালীমন্দিরের পুরোহিত হরিচাঁদ চক্রবর্তী জানান, গত বুধবার শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে মর্ত্যে দেবী পক্ষের শুরু হয়েছে। আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্টী, ১০ অক্টোবল মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাষ্টমী এবং ১২ অক্টোবর মহানবমী পূজা হবে। এরপর ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর পূজা শেষে মা দূর্গা আবারো কৈলশে ফিরে যাবেন। এদিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৫ দিনব্যাপী দূর্গোৎসবের সমাপ্তি হবে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যানুযায়ী, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হবে। গত বছর পূজা হয়েছিল ৩২ হাজার ৪০৮টি মণ্ডপে। পূজা সামনে রেখে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনগুলো প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে। পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখা ও প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ইতিমধ্যে বৈঠক করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাসহ সভায়। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটিসহ বিভিন্ন অংশীজনরা।

এ বিষয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ইতোমধ্যে পূজার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। প্রতিমা তৈরি ও সাজসজ্জার পাশাপাশি পূজার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ চলছে। এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ পরিস্থিতির কারণে মন্দির ও মণ্ডপের পক্ষ থেকেও নিজস্ব নিরাপত্তার প্রস্তুতি রাখতে সারাদেশে পূজার আয়োজকদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।বাংলাদেশের পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা আজকালকে বলেন এবারের দুর্গাপূজায় আমাদের বার্তা হচ্ছে আমরা এ দেশের নাগরিক, এ দেশেই আমরা শারদীয় দুর্গা উৎসব করবো। আমরা আমাদের আট দফার বাস্তবায়ন চাই। আমরা চাই নাগরিক অধিকার। সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত সংবিধান। দেশের সকল অইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের নিরাপদে দুর্গোৎসব করার আশ্বাস দিয়েছে। তবে এটাও ঠিক ৫ আগস্ট এর পর ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর যে নির্যাতন নেমে এসেছিল তাতে তারা এখনো শঙ্কিত। এই আতঙ্কের মধ্যেও দুর্গোৎসবের নিয়ে সকল প্রস্তুতি চলছে। এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দুর্গোৎসবকে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আট দফা নির্দেশনা দিয়েছে। কিশোরগঞ্জ সহ কয়েকটি জেলায় হয়েছে প্রতিমা ভাঙচুর। এসেছে উড়ো চিঠি। এসব কারণে উৎসবের মাঝেও শঙ্কা রয়েছে হিন্দুদের মধ্যে।

এস/ভি নিউজ

পূর্বের খবরটাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনঃ যেভাবে ‘অসম্ভব প্রত্যাবর্তন’ ঘটতে পারে হাসিনার
পরবর্তি খবরইয়েমেনে হুথিদের লক্ষ্য করে নৌ ও বিমান হামলা চালালো যুক্তরাষ্ট্র