বন্যায় ভেসে গেছে মৌলভীবাজারের টমেটো চাষির স্বপ্ন

এক সময় স্থানীয় কৃষকদের নির্ভরশীল একটি ফসলের নাম ছিল টমেটো। কয়েক বছর এই ফসলটি চাষ করে লাভবান হয়েছেন অনেকেই। কষ্ট আর দারিদ্র মুখে হাসি ফুটেছিল তাদের মুখে।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কৃষকনির্ভর ফলস হিসেবে টমেটোর গ্রাফটিং পদ্ধতির চাষাবাদে প্রায় অসংখ্য কৃষক সাফল্যের মুখ দেখেছেন। একজনের থেকে আরেকজন অনুপ্রাণিত হয়েছেন। ধীরে ধীরে এটি সবার কাছে প্রচারিত হয়ে পড়ে।  কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় সব স্বপ্ন যেন ভেসে গেছে। অধিকাংশ টমেটো চাষিরা নিঃস্ব হয়েছেন। পলিথিনের বেড়ার নিচে স্তূপ করে রাখা বন্যায় বিনষ্ট টমেটোর চারা। চারদিকে শুধু ক্ষতির চিহ্ন।

টমেটো চাষি রোমেনা বেগম বলেন, স্বামীসহ পাঁচ সদস্যের সংসার নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটছে আমাদের। এতদিন টমেটোর চারা বিক্রি করে সংসার চলছিল। কিন্তু বন্যার পানিতে সেই স্বপ্ন শেষ। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে টমেটো গাছ লাগিয়েছিলাম। বন্যা সব নিয়ে গেছে।

তার মতো একই অবস্থা গ্রামটির শতাধিক চাষির। বন্যার পানিতে ফসল হারিয়ে দুশ্চিন্তায় কাটছে দিন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের চার শতাধিক চাষি ২০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। বন্যায় নষ্ট হয়েছে ১২ হেক্টর জমির ফসল। ক্ষতির হার ৫৭ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে লাগানো টমেটোর চারা। ইসলামপুর ইউনিয়নের আট গ্রামের শতাধিক চাষি গ্রাফটিং পদ্ধতিতে লাগানো টমেটোর চারা বিক্রি করে সংসার চালান। আবার চাষও করেন। উৎপাদিত টমেটো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হয়। কিন্তু

সম্প্রতি বন্যায় উপজেলার ১০ গ্রামের ৩৫৪ চাষির প্রায় ৩২ লাখ টমেটোর চারা মাঠে নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে দুই ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক চাষির ক্ষতির পরিমাণ ছয় কোটি টাকা বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

চাষিরা জানিয়েছেন, স্থানীয় কৃষি বিভাগের হিসাবের চেয়ে তাদের ক্ষতির পরিমাণ বাস্তবে অনেক বেশি। প্রায় ৪০ লাখ টমেটোর চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি মাঠের ৫ হেক্টর জমির চারা নষ্ট হয়ে গেছে। গ্রাফটিং পদ্ধতির প্রতিটি চারা বিক্রি হয় আট টাকায়। এই হিসাবে চার কোটি টাকার চারা এবং মাঠে রোপণকৃত যে টমেটোর ক্ষেত নষ্ট হয়েছে, তার বাজারমূল্য তিন কোটি। প্রতিকেজি টমেটো পাইকারি দামে ৭০-৮০ টাকা এবং খুচরা ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়। একটি গাছে গড়ে ছয়-সাত কেজি ফলন হয়।

কৃষক খালিক মিয়া জানিয়েছেন, ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ জমিতে ধারদেনা করে টমেটো চাষ করেছেন তারা। বন্যায় সব শেষ করে দিয়েছে। এখন নিঃস্ব অবস্থায় আছেন তারা।  অপর কৃষক জাবের মিয়া জানিয়েছেন, ১২০ শতাংশ জমির টমেটো চারা পচে গেছে তাদের। এই টমেটো চাষ করে সারা বছরের জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা। এখন কীভাবে ঋণ পরিশোধ ও সংসার চালাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বাংলানিউজকে বলেন, যেসব টমেটো চাষি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের প্রত্যেককে আমরা কিছু সবজি প্রণোদনা দেবো। তবে বড় অংকে তাদের আর্থিক সহযোগিতা করার সুযোগ নেই। হয়তো বেশি যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদেরকে এক-দেড় হাজার টাকা দেওয়া হতে পারে। পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে প্রণোদনা ও কৃষি উপকরণ দিয়ে সহায়তা করার চেষ্টা চালিয়ে যাবো আমরা।

তিনি আরও বলেন, যারা একটু উঁচু জায়গায় টমেটো চাষ করেছে বা সেড রয়েছে ওপরে তাদের ক্ষতি তেমন হয়নি। নিচু জমিতে যারা চাষ করেছেন তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৪৫০ জন টমেটো চাষি ২৫ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ করছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

এস/ভি নিউজ

পূর্বের খবরICT gets five more complaints against Hasina
পরবর্তি খবরডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৪৮