বগুড়ায় জোড়া হত্যাকাণ্ড, টোকাই সাগরের সহযোগী মুক্তারের খোঁজে পুলিশ

সাগর হোসেন তালুকদার

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাবরুল এলাকার ‘সাগর বাহিনীর’ প্রধান সাগর হোসেন তালুকদার (৩৫) ওরফে ‘টোকাই সাগর’ ও তাঁর সহযোগী স্বপন (৩২) হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও রহস্য উদ্‌ঘাটনে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা মাঠে নেমেছেন।

হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দাদের দৃষ্টি এখন সাগরের অন্যতম সহযোগী ও হত্যাকাণ্ডের ‘রাজসাক্ষী’ মুক্তার হোসেনের (২৯) দিকে। সাগর ও স্বপন হত্যাকাণ্ডের সময় মুক্তার তাঁদের মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানতে পেরেছে। হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তারকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তবে হাসপাতালে মুক্তারের হদিস মিলছে না। ভর্তি রেজিস্টারে এ নামের কোনো রোগীর তথ্য দিতে পারেনি হাসপাতাল প্রশাসন।

বগুড়া ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুস্তাফিজ হাসান বলেন, শাজাহানপুরে জোড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তে পুলিশের পাশাপাশি ডিবি ‘ছায়া তদন্ত’ করতে মাঠে নেমেছে। ডিবির কাছে তথ্য আছে, হত্যাকাণ্ডের আগে সাবরুল বাজার থেকে একটি মোটরসাইকেলে চড়ে সন্ত্রাসী সাগর তাঁর মাছের খামারে যাচ্ছিলেন। ওই মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন মুক্তার হোসেন। তাঁর বাড়িও সাবরুল গ্রামে।

দুর্বৃত্তদের হামলায় সাগর ও তাঁর সহযোগী স্বপন নিহত হওয়ার পর মুক্তারের ভাই মজনু মিঞা দাবি করেছিলেন, হামলায় মুক্তারও গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে মুক্তারকে পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের নথিতে ওই নামে রোগী ভর্তির কোনো তথ্যও নেই। হত্যাকাণ্ডের ‘রাজসাক্ষী’ এই মুক্তারের খোঁজ মিলছে না। তাঁর ভাই মজনুও উধাও।

ডিবির দাবির সত্যতা মিলেছে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে। হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ভর্তি রেজিস্টারের তথ্যানুযায়ী, মুক্তার নামের কোনো রোগী গত রোববার এ হাসপাতালে ভর্তি হননি।

রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে উপজেলার সাবরুল ছোট মণ্ডলপাড়া এলাকায় এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সাগর তালুকদার সাবরুল বাজার এলাকার গোলাম মোস্তফা তালুকদারের ছেলে এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সক্রিয় কর্মী। তাঁর সহযোগী স্বপন সাবরুল তালুকদার পাড়ার সাইফুল ইসলামের ছেলে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের সাবরুল বাজার থেকে নিজ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মোটরসাইকেলে মাছের খামারে যাচ্ছিলেন সাগর। সাবরুল ছোট মণ্ডলপাড়া এলাকায় পৌঁছামাত্র মোটরসাইকেলে আসা একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়ে সাগর ও তাঁর সহযোগী স্বপনকে উপর্যুপরি কুপিয়ে জখম করেন। এতে ঘটনাস্থলে সাগর ও স্বপন নিহত হন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগর ও তাঁর এক সহযোগী প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয়েছেন। তবে হামলাকারীদের এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। সাগর পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ এক ডজন মামলা আছে। আর শাজাহানপুর থানার ওসির দায়িত্বে থাকা এসআই ফারুক হোসেন জানান, জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার ছত্রছায়ায় শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলার আশপাশে ৩০ গ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন সাগর তালুকদার। সাবরুল বাজারে সাগরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মামা-ভাগনে এন্টারপ্রাইজ কার্যত সন্ত্রাসীদের আখড়া। এক দশক ধরে ওই দোকানে বসে নানা অপকর্ম করেছেন তিনি। বাড়ি নির্মাণ, জমি কেনাবেচা, ব্যবসা—সবকিছুতেই চাঁদা দিতে হতো সাগরকে। অর্ধশতাধিক সদস্যের তাঁর নিজের একটি বাহিনী আছে। মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে চলাফেরা করতেন সাগর। তাঁর বিরুদ্ধে সড়কে মাছের গাড়ি, যানবাহন থেকে শুরু করে জমি চাষের পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর থেকেও চাঁদাবাজি করার অভিযোগ আছে।

এস/ভি নিউজ

পূর্বের খবরজাতিসংঘ বাংলাদেশে সংস্কার ও বন্যা পুনর্বাসনে সহযোগিতা দেবে
পরবর্তি খবরপ্রতিশোধ নয়, সুবিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন প্রয়োজন: আইন উপদেষ্টা