ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর, সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলায় বন্যার পানি নামছে ধীরগতিতে। এখনো জেলার অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি, নেই মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক। বন্যার্ত মানুষকে সহায়তায় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণসহায়তা অব্যাহত রয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেছে। তাই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে ঘরে ফিরেছেন বেশির ভাগ মানুষ। তবে উপজেলার মুন্সিরহাট, আনন্দপুর ও জিএম হাট ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের সড়ক ও বাড়ি এখনো পানিবন্দী।
আজ বুধবার দুপুরে সরেজমিনে ফেনী শহরের জামেয়াতুল আল ফালাহিয়া মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয়কেন্দ্রটিতে রয়েছেন কেবল ১৬৫ জন। অথচ বন্যায় মাদ্রাসাটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন ১ হাজার ৬০০ জন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ফেনী পৌরসভা ও সদর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও পানি নামছে খুবই ধীরগতিতে। শহরের পেট্রোবাংলা, আরামবাগসহ কিছু এলাকা এখনো পানিতে তলিয়ে থাকায় বাসিন্দারা বিপাকে রয়েছেন। উপজেলার মোটবী, ফাজিলপুর, ছনুয়া, লেমুয়া ও ফরহাদনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সড়কে ও বাড়িতে পানি রয়েছে।
ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর, ঘোপাল ও রাধানগর ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়ক এখনো পানিতে ডুবে রয়েছে। অনেক ঘরবাড়ি থেকেও পানি নামেনি। উপজেলার পাঠান নগর ইউনিয়নের গথিয়া সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা ছুট্টি মিয়া বলেন, তাঁরা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছেন।
দাগনভূঞা উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকার কিছু অংশের গ্রামীণ সড়ক ও বাড়ি থেকে পানি পুরোপুরি নামেনি। উপজেলার খুশীপুর গ্রামের মনির আহমদ বলেন, তিনি আজ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছেন। তবে ঘরের ভেতর থেকে পানি কমলেও উঠানে ১ ফুট পানি।
সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর, আমিরাবাদ, মঙ্গলকান্দি, মতিগঞ্জ, সদর ইউনিয়নের হাজারো মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রেও রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গত বুধবার থেকে বন্যা দেখা দেয় ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায়। পরদিন অন্যান্য উপজেলা ও ফেনী শহরেও পানি উঠতে শুরু করে, যা প্রকট হয় শুক্রবার।
জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ফেনী জেলায় সাড়ে ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দেড় লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের ৬২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা হেলিকপ্টারে করে ৫৬ হাজার ৫০০টি খাবারের প্যাকেট বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দিয়েছেন। এর বাইরে রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।
বন্যার্ত মানুষের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জেলা সদরে ১টিসহ ৬টি মেডিকেল ক্যাম্প করা হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন শিহাব উদ্দিন বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ৩০ জন চিকিৎসক ও ৫০ জন নার্সকে ফেনীতে পাঠানো হয়েছে।
এস/ভি নিউজ