ফারুক খান, আব্দুর রাজ্জাকসহ আওয়ামী লীগের আরও যারা গ্রেফতার

শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী, আমলা, পুলিশসহ অনেকে আটক হলেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই ছিলেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সোমবার রাতে একদিনেই আটক হয়েছেন দলটির দুই জন প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ও কর্নেল ফারুক খান।

সোমবার সন্ধ্যায় মি. রাজ্জাককে রাজধানীর ইস্কাটন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

আর গভীর রাতে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে আটক করা হয় আরেক শীর্ষ নেতা ফারুক খানকে।

সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এখন আত্মগোপনে আছেন। তাদের অনেকেরই ফোন বন্ধ। শীর্ষ নেতারা দেশে আছে কি না, দেশ ছেড়েছেন এ নিয়ে নানা খবর প্রকাশ হলেও সঠিক কোনো তথ্য মিলছে না।

সোমবার রাতে এই দুই শীর্ষ পর্যায়ের নেতা আটকের পর প্রশ্ন উঠেছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য নেতারা এখন কোথায় আছেন?

এমন অবস্থায় গত দুই সপ্তাহে অজ্ঞাত স্থান থেকে দলের বিবৃতি দিচ্ছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম।

কাউকে কাউকে আবার গণমাধ্যমে সাথে হোয়াটসঅ্যাপে বা অনলাইনে সাক্ষাৎকারও দিতে দেখা গেছে।

আওয়ামী লীগের কারা গ্রেফতার হলেন?

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর শুরুর দিকেই আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালীদের মধ্যে গ্রেফতার হন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

এরপর গত দুই মাসে আটক হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক মন্ত্রী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আহমদ হোসেন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ।

এছাড়াও গ্রেফতার হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খান, সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, হাজী মো. সেলিম।

আটক হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী, সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন, সাবেক সংসদ সদস্য শাহে আলম, সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনও।

এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী আটক হয়েছেন গত দুই মাসে।

তাদেরকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলা হয়েছে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর।

গ্রেফতার তালিকায় পুলিশ-আমলা ও ১৪ দলের নেতারা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংগঠিত হওয়া বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীই না আসামি করা হয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ ও আমলাদের বিরুদ্ধেও।

এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন সাবেক শীর্ষ ছয়জন আমলা ও অন্তত ১৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা।

এদের মধ্যে আছেন সাবেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমলের সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও আবুল কালাম আজাদ।

আমলাদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, সাবেক জননিরাপত্তা সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়াসচিব মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ।

এছাড়াও সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক, আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ পুলিশের সাবেক ১৭ জন কর্মকর্তা।

জুলাই-অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিসভার সদস্য, সাবেক এমপি, দলীয় নেতাদের পাশাপাশি পুলিশ ও প্রশাসনের সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হচ্ছে।

এসব মামলায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, সচিব, পুলিশের সাবেক চার আইজিপি, অতিরিক্ত আইজিপি ও ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নামে মামলা হয়েছে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও গ্রেপ্তার হয়ছেন।

খোঁজ নেই অনেক শীর্ষ নেতার

সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কলকাতার একটি পার্কে বসে আছেন। শামীম ওসমানকেও দিল্লিতে দেখা গেছে।

এছাড়া আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় আরো কিছু নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন কিংবা অন্যান্য দেশে চলে গেছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় আওয়ামী লীগ সরকারের যে দুজনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন তারা হলেন– তৎকালীন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এ নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর খবরে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রীদের মধ্যে হাছান মাহমুদ, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সেলিম, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের অবস্থান নিয়েও নানা ধরনের তথ্য দেখা যাচ্ছে।

গত কয়েকদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবৃতি দিচ্ছেন মি. নাসিম।

তবে তিনি কী এই বিবৃতিতে দেশে বসে নাকি দেশের বাইরে থেকে দিচ্ছেন সে বিষয়েও স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না।

সূত্রঃ বিবিসি

এস/ভি নিউজ

পূর্বের খবরএকজীবনে এত প্রেম…গানের মডেল শায়না এখন ২ সন্তানের মা
পরবর্তি খবরবৃষ্টি ও শীতের আগাম বার্তা নিয়ে যা বলল আবহাওয়া অফিস