বিশেষ প্রতিবেদন
ভিনিউজ : বাংলা নববর্ষ সমাগত। পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। বর্ণিল বৈশাখের পোশাকে লাল-সাদার সঙ্গে যোগ হয়েছে নানা রঙ।
ডিজাইনাররা লাল ও সাদা রঙের পাশাপাশি নীল, হলুদ, সবুজ, প্যারট গ্রিন, খয়েরি ইত্যাদি রঙও ব্যবহার করছেন। নকশায় প্রাধান্য দিয়েছেন দেশীয় মোটিফ। বর্ণিল বৈশাখের সাজপোশাক নিয়ে লিখেছেন মোহসীনা লাইজু
গ্রীষ্মের খরতাপে অনেকেই বৈশাখ উদযাপনে শাড়ি বাদ দিয়ে সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, টপস বা স্কার্ট বেছে নেন। পোশাক যাই হোক সুতিকে প্রাধান্য দেওয়াই ভালো। ফ্রক, সিঙ্গেল কামিজ, কুর্তিও অনেকে বেছে নিচ্ছেন। ডিজাইনার সালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি প্রিন্টের কাফতান ও কড সেটের ডিজাইন করেছেন। আছে নানা ধরনের জাম্প স্যুট। লাল-সাদা প্রিন্ট, পোলকা ডট বা বাটিক, টাইডাই কামিজ, টপস ডিজাইনারদের ডিজাইনে প্রাধান্য পেয়েছে। এক ছাঁটের লং গাউন আছে বৈশাখের রঙগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে। প্রিন্টের স্কার্ট পালাজোর ওপর এক রঙের ঢিলেঢালা কুর্তি বৈশাখের পোশাক তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
শাড়ির আবেদন সবসময়
বৈশাখের সাজপোশাকের পূর্ণতা মেলে শাড়িতে। যারা সচরাচর শাড়ি পরেন না তারাও বৈশাখ উদযাপনে শাড়ি বেছে নেন। শাড়ি হিসেবে সাদা শাড়িতে লাল পাড়ের চাহিদা সবসময় আছে ও থাকবে। শুধু সাদা শাড়িতে নানা ধরনের নকশাও বেছে নেন। বেশ কয়েক বছর ধরে বৈশাখের শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজকেও প্রাধান্য দিচ্ছেন ডিজাইনাররা।
একরঙা সাদামাটা শাড়ির সঙ্গে জমকালো ব্লাউজ দিয়ে সাজের বিশেষত্ব নিয়ে এসেছেন। লাল-সাদা শাড়ির সঙ্গে কনট্রাস্ট রঙের কিংবা এক শেড বাড়িয়ে ব্লাউজের রঙ নির্বাচন এবারের বৈশাখে ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে। অনেকে শাড়ির ফেব্রিকসের সঙ্গে মিলিয়ে ব্লাউজ বানাচ্ছেন। ব্লাউজের বিকল্প হিসেবে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের ক্রপ টপস। সেক্ষেত্রে শাড়িটা সিনথেটিক ম্যাটেরিয়ালের হলে ভালো মানায়। বিভিন্ন প্যাটার্নের ক্রপ টপসগুলো লুজ ফিটিং ইজি টু ওয়্যার ও ব্লাউজের গলায় ভিন্নতা রয়েছে। আবার এক পাশের কাঁধে ভারী নকশার ব্লাউজও ভালো মানিয়ে যায়। এ ধরনের ব্লাউজের সঙ্গে এখন মেয়েরা ড্রেপিং স্টাইলে শাড়ি পরছেন। একরঙা সাদা বা অফহোয়াইট শাড়ি হলে ব্লাউজটা লালের কোনো শেডে পরতে পারেন। অন্যদিকে শাড়িতে যদি লাল রঙটাই মুখ্য হয়, তাহলে ব্লাউজ হতে পারে বাসন্তী, অফহোয়াইট বা সোনালি রঙের। কেউ কেউ সাদা শাড়ির সঙ্গে কাতান ব্লাউজও বেছে নিচ্ছেন।
পোশাকের নকশায় বাংলার ঐতিহ্য
রঙ বাংলাদেশ-এর কর্ণধার সৌমিক দাস জানান, ‘বৈশাখের ডিজাইনে দুটি বিশেষ থিম নিয়ে কাজ করেছি। একটি হলো ‘কাঠের পুতুল’ অন্যটি ‘মুখোশ’। এসব অতুলনীয় নকশা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তৈরি হয়েছে নববর্ষের পোশাক।’ কাঠের পুতুল বাঙালির লোকশিল্প ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শন হিসেবে সমাদৃত। হাতে তৈরি করা পুতুলের দেহ জুড়ে থাকে নিখুঁতভাবে খোদাই করা দারুণ ডিজাইন ও নানা রকম উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার। এ ছাড়া বৈচিত্র্যের কথা মাথায় রেখে কাঠের পুতুলের নকশার সঙ্গে ‘মুখোশ’ থিমও ডিজাইনে স্থান পেয়েছে। দেশ জুড়ে বৈশাখের শোভাযাত্রায় জায়গা করে নেওয়া মুখোশ বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতীকী এসব মুখোশে বাঘ, পাখি, মাছ, সূর্য আর গ্রামীণ জীবনের নানা নকশা ফুটে ওঠে।
নববর্ষের পোশাকের মধ্যে শাড়ি, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, কামিজ, স্টিচ ড্রেস ও ফ্রক আছে। আর বৈশাখের উৎসবকে রাঙাতে সব পণ্যে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে লাল, মেরুন ও সাদার সঙ্গে হাল্কা অথচ উজ্জ্বল রঙের নানা রকম শেড। গরমের কথা বিবেচনায় রেখে ফেব্রিকে আরামের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে ব্র্যান্ডটি। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে রঙ মুখোশ মোটিফ দিয়েও তৈরি করা হয়েছে জুয়েলারি। লা রিভের প্রধান নির্বাহী মুন্নজান নার্গিস জানান, বৈশাখী পোশাকে শুধু লাল-সাদা নয়, যুক্ত হচ্ছে আরও নানা রঙের ছোঁয়া। উজ্জ্বল হলুদ, গাঢ় নীল, লাল, সবুজ বা কমলা রঙের ব্লক প্রিন্ট, হাতের কাজ কিংবা নকশাকাটা পোশাক তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। মেয়েদের শাড়িতে আছে সূক্ষ্ম এমব্রয়ডারি, ফোক ডিজাইন বা মসলিনের হাল্কা আরামদায়ক টেক্সচার। আরেকটি নতুন ট্রেন্ড হলো ফ্যামিলি ম্যাচিং আউটফিট। মা-মেয়ে বা বাবা-ছেলের জন্য একই ডিজাইনের বৈশাখী পোশাক বেশ জনপ্রিয়। কিশোর-কিশোরীদের ফ্যাশনেও এসেছে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ স্টাইল। সাদা স্কার্ট বা পালাজোর সঙ্গে লাল টিউনিক বা লাল টপের সঙ্গে সাদা কটন প্যান্ট। অ্যাক্সেসরিতেও আছে বৈচিত্র্য। কাঁসার গয়না, কাঠের চুড়ি, হাতে আঁকা ওড়না বা ব্যাগ সবই বৈশাখী লুকে যোগ করছে নতুন মাত্রা।
শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ যাই পরুন না কেন হাতে কয়েক গাছি চুড়ি কিংবা হাতভর্তি করে কাচের চুড়ি পরতে পারেন। কানের, গলার, হাতের সব একসঙ্গে গয়না পরলেও সাজটা ভারী দেখা যায়। তাই নিজের মতো যেকোনো গয়না বেছে নিতে পারেন। খোঁপার সঙ্গে ছোট ঝুমকা বেশ মানিয়ে যায়। বেশি ভারী গয়না না পরে আরাম পাবেন এমন হাল্কা গয়না পরুন। কয়েক লহরের মালা পরতে পারেন চুড়ির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে। পরতে পারেন জুতা, লাল-সাদা পুঁতির গয়না, মেরুন বা সাদা ব্যাগ আর খোঁপায় জড়ানোর জন্য ফুল। সবকিছুই হোক লাল-সাদার ছোঁয়ায়। নববর্ষের জন্য ডাই ও প্রিন্ট কাপড়, সুতা, পুঁতি, কড়ি বা কাপড়ের বলের কম্বিনেশনে তৈরি গয়না কিনতে পারেন। বৈশাখের সাজের শেষ অংশ হলো কপালে টিপ দিয়ে। আর এটা হতে হবে শাড়ির রঙের সঙ্গে মিলিয়েই। বড় টিপ এ দিনে বেশ মানিয়ে যায়। কিংবা কাস্টমাইজড নানা ধরনের টিপ পরতে পারেন। সবশেষে পছন্দের পারফিউম ব্যবহার করতে ভুলবেন না।