ভিনিউজ ডেস্ক : অবিশ্বাস্য! উষ্ণতা বৃদ্ধির (Global Warming) কারণে বিশ্বে প্রতি ১ মিনিটে একজনের মৃত্যু হচ্ছে! জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের প্রতি আগ্রহের কারণে মারাত্মক বায়ুদূষণ ও দাবানল হচ্ছে। বাড়ছে ডেঙ্গুর মতো রোগও। উষ্ণতাবৃদ্ধি ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্বে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছেন। জলবায়ু পরিবর্তনে (Climate Change) মানুষের স্বাস্থ্যের উপর কী প্রভাব পড়ছে, তা নিয়ে করা এক গবেষণায় উঠে এসেছে ভয়-জাগানো এই তথ্য। বিশ্ববিখ্যাত পত্রিকা ‘দ্য ল্যানসেটে’ (The Lancet) গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।
ল্যানসেট-হু-লন্ডন
‘দ্য ২০২৫ এডিশন অব দ্য ল্যানসেট কাউন্টডাউন অন হেলথ অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি গত মঙ্গলবার ল্যানসেটের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল)। গবেষণায় সহযোগিতা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথা ‘হু’। বিশ্বের ৭০টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন সংস্থার ১২৮ জন বিশেষজ্ঞ গবেষণায় যুক্ত।
হিট স্ট্রেস
গবেষণায় যুক্ত অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অলি জে বলেন, বছর জুড়ে প্রতি ১ মিনিটে গড়ে একজন করে মানুষ গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য মারা যাচ্ছেন! এটি সত্যিই চমকে দেওয়ার মতো পরিসংখ্যান। আর এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। অলি জে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি, হিট স্ট্রেস সবাইকেই প্রভাবিত করতে পারে। এমনকি এটি প্রাণঘাতীও হতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয়, অনেকেই সেটি বুঝতে পারছেন না।
নেতাদের নীতিমালা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো নেতাদের জলবায়ু-নীতি বাতিল করা ও তেল কোম্পানিগুলির নতুন মজুত উত্তোলন অব্যাহত রাখায় এই ক্ষতি আরও বাড়বে। গবেষকদের মতে, ২০২৩ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলিকে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ কোটি ডলার ভর্তুকি দিয়েছে। অন্য দিকে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মানুষ কৃষিক্ষেত্র ও নির্মাণস্থলে কাজ করতে না পারায় প্রায় একই পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে দেশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে কয়লার ব্যবহার কমে যাওয়ায় প্রতিদিন প্রায় ৪০০ মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের আগ্রহ থেকে সরে না আসা পর্যন্ত জীবন ও জীবিকার এই ক্ষতি বাড়তেই থাকবে।
জিডিপির ৬ শতাংশ ক্ষতি
গত চার বছরে একজন মানুষ বছরে গড়ে ১৯ দিন জীবন বিপন্নকারী তাপমাত্রার সম্মুখীন হয়েছে। এর অনেকটাই ছিল মানবসৃষ্ট। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ২০২৪ সালে ৬৩ হাজার ৯০০ কোটি কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলির জিডিপির ৬ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে।
দূষণও
লাগামছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোয় শুধু পৃথিবী যে উত্তপ্ত হচ্ছে তা-ই নয়, বায়ুদূষণও হচ্ছে। এসব কারণে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছেন। ক্রমবর্ধমান গরম ও শুষ্ক পরিবেশের কারণে দাবানল হচ্ছে। তার ধোঁয়াও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়াচ্ছে। এসব কারণে ২০২৪ সালে রেকর্ড ১ লাখ ৫৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এত সব ক্ষতির পরও ২০২৩ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জীবাশ্ম জ্বালানিতে ৯৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ভর্তুকি দিয়েছে। ওই বছর বিশ্বে সর্বোচ্চ গরম রেকর্ড করা হয়। অবশ্য ২০২৪ সাল গরমের সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
-জিনিউজ বাংলা




