দ্বৈত ভোটার নিয়ে বিপাকে ইসি

বর্তমানে দেশের মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ১৮ লাখের বেশি। এর মধ্যে দ্বৈত ভোটার রয়েছেন ৫ লাখ ৩০ হাজার ২৫৮। দ্বৈত এনআইডিও রয়েছে তাদের সংগ্রহে। সেই আইডি দিয়ে তারা সরকারি চাকরি, ব্যাংক ঋণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, দ্বৈত ভোটার হতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অসাধু কর্মকর্তারা সহযোহিতা করেন। এ ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেনও হয়। ২০১৮ সালে দ্বৈত ভোটার ছিল ২ লাখের বেশি। বর্তমানে সেই সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

ইসির কর্মকর্তারা বলেন, বিগত সময়ে দ্বৈত ভেটারের বিরুদ্ধে বেশকিছু মামলাও হয়েছিল। ২০১৮ সালে দ্বৈত ভোটারের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছিল তৎকালীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই সময় ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ দ্বৈত ভোটার হওয়ায় নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার দুজন ভোটারের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়ে ইসি উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রেজিস্ট্রেশন অফিসারের কাছে চিঠি দিয়েছিল। এ ছাড়া এ ধরনের আরও কিছু ভোটারের বিরুদ্ধে মামলা করার ইসির নির্দেশনা ছিল। কিন্তু পরে সেই বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে। ২০১৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর দুজন ভোটারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপসচিব মো. আবদুল হালিম খান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিও পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, জেলার হাতিয়া উপজেলার দুই ভোটার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অসত্য/মিথ্যা তথ্য দিয়ে বা তথ্য পরিবর্তন করে দুবার ভোটার হওয়ায় কমিশন তাদের বিরুদ্ধে ‘ভোটার তালিকা আইন-২০০৯-এর-১৮’ অনুযায়ী মামলা দায়েরের জন্য সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন অফিসারকে নির্দেশনা দিয়েছে। ওই চিঠিতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে মামলার বিবরণসহ সচিবালয়কে অবহিত করার জন্যও বলা হয়। ‘ভোটার তালিকা আইন-২০০৯-এর-১৮ অনুযায়ী, ‘যদি কোনও ব্যক্তি-(ক) কোনও ভোটার তালিকা প্রণয়ন, পুনঃপরীক্ষণ, সংশোধন বা হালনাগাদকরণ সম্পর্কে; বা (খ) কোনও ভোটার তালিকাতে কোনও অন্তর্ভুক্তি বা উহা হইতে কোনও অন্তর্ভুক্তি কর্তন সম্পর্কে; এমন কোনও লিখিত বর্ণনা বা ঘোষণা প্রদান করেন, যাহা মিথ্যা এবং যাহা তিনি মিথ্যা বলিয়া জানেন বা বিশ্বাস করেন বা সত্য বলিয়া বিশ্বাস করেন না, তাহা হইলে তিনি অনধিক ছয় মাস কারাদন্ড বা অনধিক দুই হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।’

সম্প্রতি জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. মাহবুব আলম তালুকদার স্বাক্ষরিত জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তি করা ও নতুন ভোটার নিবন্ধন সংক্রান্ত সেবা নিশ্চিত করা সংক্রান্ত সভার কার্যবিবরণীতে দ্বৈত ভোটারের বিষয়টি উঠে এসেছে। কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইতিপূর্বে দ্বৈত ভোটার নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে কমিশন ব্যক্তির প্রথম এনআইডি কার্ডটি বহাল রেখে দ্বিতীয় এনআইডি কার্ড বাতিল করার জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। পরবর্তীতে উপজেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুসারে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদনে দ্বৈত ভোটারের আবেদনগুলো নিষ্পন্ন করা হয়। বর্তমানে ডেটাবেজে দ্বৈত ভোটারের সংখ্যা ৫ লাখ ৩০ হাজার ২৫৮। এতে আরও বলা হয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে টিম গঠনের মাধ্যমে প্রথম ভোটার বহাল রেখে দ্বিতীয় ভোটার বাতিল করার ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে আবেদনের ভিত্তিতে নথিতে উপস্থাপন করে নিষ্পত্তি করতে হবে। সর্বশেষ ভোটার তালিকা হালনাগাদ অনুযায়ী, দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭, নারী ৫ কোটি ৯৭ লাখ ৪ হাজার ৬৪১ এবং ৯৩২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, প্রতিবছর ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। পরে দাবি-আপত্তি শেষে ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়।

এস/ভি নিউজ

পূর্বের খবরদুই চাঁদের একসাথে পৃথিবী প্রদক্ষিণ শুরু
পরবর্তি খবরগরমে এসি ছাড়া ঘর ঠান্ডা রাখার ১৫টি টিপস