সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে শত বছর ধরে উদ্যাপিত হয়ে আসছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব। তারই ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে তিন দিনের রাসপূর্ণিমার পূজা ও পুণ্যস্নান।
তবে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে এ সময় পুণ্যার্থী ছাড়া অন্য কেউ সুন্দরবনে ভ্রমণ করতে পারবেন না। এ ছাড়া উৎসবকে কেন্দ্র করে এবারও বসবে না মেলা।
দুবলারচরের রাসপূজা ও মেলা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বসু বলেন, ‘রাসপূজা উপলক্ষে আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তিথি অনুযায়ী আজ পূজা-অর্চনা শুরু হচ্ছে। আগামী শনিবার ভোরে পুণ্যস্নান হবে। এবারও রাসমেলা হচ্ছে না।’
কয়রার থেকে রাসপূজায় গিয়েছেন সুদীপ্ত দত্ত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এবার দিয়ে তিন বছর রাসপূজায় যাচ্ছি। পূর্ণিমায় সাগরের জোয়ারের লোনাজলে স্নানের মধ্য দিয়ে পাপমোচন হয়ে মনস্কামনা পূর্ণ হবে—এ বিশ্বাসে আমরা পূজায় যোগ দিই।’
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান যুব ঐক্য পরিষদ কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি অরবিন্দ মণ্ডল বলেন, শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুসারী হরিভজন নামের এক সাধু ১৯২৩ সালে সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে প্রথম রাসপূর্ণিমার পূজা শুরু করেন। ২৪ বছরের বেশি সময় ধরে এই সাধু একা একা বনে অবস্থান করে পূজা উদ্যাপন করতেন। দুই যুগের অধিককাল বনের ফলমূল খেয়ে জীবন ধারণ করেন তিনি। এর পর থেকে সনাতন ধর্মের লোকেরা প্রতিবছর রাসপূর্ণিমার পূজার জন্য ছুটে যান সেখানে। সনাতনীদের এই রাসপূজা ধীরে ধীরে রাসমেলায় পরিণত হয়।
প্রতিবছর রাসমেলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সুন্দরবনের দুবলারচরে সমবেত হন। তবে এ সময় হরিণ শিকারও বেড়ে যায়, যা বন বিভাগের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্য ২০২১ সাল থেকে রাস উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায় ব্যতীত অন্যদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় বন বিভাগ।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, রাস উৎসবে অংশ নিতে কোনো ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র বা অবৈধ সামগ্রী বহন নিষিদ্ধ। পাশাপাশি কারও কাছে হরিণ মারার ফাঁদ, কুঠার, করাত ইত্যাদি পাওয়া গেলেও আইনি ব্যবস্থা নেবে বন বিভাগ। এ ছাড়া একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, যেমন পানির বোতল, প্লেট, গ্লাস, চামচ বহন করা যাবে না। মাইক বাজানো বা শব্দদূষণ সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ। তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের এসব নির্দেশনা মেনে চলার জন্য অনুরোধ করেছে তিনি।
সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান বলেন, বন বিভাগের নিয়ম মেনে আজ সকালে থেকে পুণ্যার্থীরা সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে যাচ্ছেন। রাসপূজাকে ঘিরে কোনো অপরাধী চক্র যাতে মাথাচাড়া না দিতে পারে, সে জন্য বন বিভাগ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
এস/ভি ইউজ