তিন বিলিয়ন ডলার ঋণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আসছে আইএমএফ মিশন

বাংলাদেশের চাওয়া নতুন ঋণের জন্য সার্বিক পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন করবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) স্টাফ মিশন। আগামীকাল আসন্ন এই মিশনের অংশ হিসেবে দলটি সমস্ত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সম্ভাব্য অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তার মূল্যায়ন করবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থা।

আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুত ঋণের বাকি অংশ পাওয়ার পাশাপাশি সংস্থাটির কাছে নতুন করে তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। গত বছরের জানুয়ারিতে অনুমোদন দেওয়া চলমান ঋণের শর্তপূরণে সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

এই ঋণের তিনটি কিস্তিতে ২৩০ কোটি ৮২ লাখ ডলার এরই মধ্যে ছাড় হয়েছে। সাতটি কিস্তিতে পুরো অর্থ মিলবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। নতুন ঋণের জন্যও আর্থিক খাতের দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখতে চায় এই বহুজাতিক সংস্থা।

এই ঋণের পর্যালোচনা করতে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে আগামী ২৪ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

গত ১২ সেপ্টেম্বর আইএমএফের যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক জুলি কোজ্যাক ওয়াশিংটন ডিসিতে সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাংলাদেশের সব ধরনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সম্ভাব্য অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন করা হবে। আইএমএফ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

জুলি কোজ্যাক বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে ও আইএমএফ কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে জনগণকে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সংস্কারকে এগিয়ে নিতে সহায়তার জন্য বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।

বাংলাদেশে গত মাসে গণ-অভ্যুত্থানে প্রাণহানি ও আহতের ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে কোজ্যাক বলেন, ‘প্রাণহানির সংবাদ শুনে খুব কষ্ট পেয়েছি।’

ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফ তহবিলের মুখপাত্র বলেছেন, গত মাসে বিক্ষোভের ফলে সরকার পতনের পর বাংলাদেশকে তার আর্থিক চাহিদা মেটাতে সাহায্য করতে প্রস্তুত আইএমএফ। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেছেন, তাঁরা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনের জন্য আইএমএফ এবং অন্যান্য উৎস থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছেন।

সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের রিজার্ভ বাড়াতে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে গত মাসে আইএমএফ উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলাদা ভার্চুয়াল বৈঠক করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

তাঁদের ওই বৈঠকে প্রতিশ্রুত ঋণের সঙ্গে আরো তিন বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ বিষয়ে সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনায় ছয় দিনের ঢাকা সফরে আসছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল।

দুই বছর ধরে দেশের রিজার্ভ ক্রমাগত কমছে। তা দিয়ে মাত্র কয়েক মাসের আমদানি খরচ মেটানো যাবে। তবে এখন প্রবাস আয় বৃদ্ধিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের শঙ্কা কিছুটা কমলেও রপ্তানি বাড়ানোর চ্যালেঞ্জে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়াতে জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা চেয়েছে।

আইএমএফের হিসাব অনুসারে, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি আছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর তা ছিল ১৯.৩৯ বিলিয়ন ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতেই সরকারের দেনা দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি। এ খাতের আমদানি খরচ মেটাতে প্রতি মাসে সরকারের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হয়। এর বাইরে নিয়মিত সার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জরুরি সব পণ্য আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে হয়।

পূর্বের খবর‘ইন্ডিয়া আউট’ অবস্থান থেকে সরে আসছেন মুইজ্জু?
পরবর্তি খবরনিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী আসনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র