খাদ্যগুদাম সংস্কার : অর্ধেকে নামল ৬৪৫ কোটি টাকার প্রকল্প খরচ

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩১৯টি গুদাম সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে প্রকল্পটি ৬৪৫ কোটি টাকায় বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। নতুন খাদ্যগুদাম করার চেয়ে সংস্কার ও মেরামতের ব্যয় ধরা হয়েছিল দ্বিগুণ। তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে পরিকল্পনা কমিশন।

এখন অর্ধেকের কমে প্রকল্পটি অনুমোদন পেতে যাচ্ছে।

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাহাঙ্গীর আলম। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘সারা দেশে অবস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্যগুদাম এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক অবকাঠামোর মেরামত ও সংস্কার’ শীর্ষক প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় খাদ্য মন্ত্রণালয়।

প্রকল্পটির ব্যয় প্রস্তাব করা হয় ৬৪৫ কোটি টাকা। তখন প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ব্যয় নিয়ে আপত্তি জানায় পরিকল্পনা কমিশন। সে সময় প্রকল্পটিতে একটি গুদামের প্রতি বর্গমিটার সংস্কার ও মেরামতের জন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয় ৪৫ হাজার টাকা। অথচ নতুন গুদাম তৈরি করতে প্রতি বর্গমিটারে খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। 

এরপর প্রকল্পটি ফেরত পাঠায় পরিকল্পনা কমিশন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে ব্যয় কমিয়ে পুনরায় পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তবে নতুন প্রস্তাবেও প্রকল্পটির কিছু খাতের ব্যয় বেশি বলে মনে করছে কমিশন।

প্রকল্পটি গ্রহণের যৌক্তিকতার বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইয়াসমীন পারভীন বলেন, দেশের মানুষের জন্য সব সময়ে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভবিষ্যতে অধিক পরিমাণে খাদ্য মজুদের সক্ষমতা তৈরির প্রয়োজন হবে।

বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৪৭৬টি উপজেলায় ৬৩৫টি স্থানীয় সরবরাহ ডিপো (এলএসডি), বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে ১২টি কেন্দ্রীয় সংরক্ষণাগার (সিএসডি), সমুদ্র ও নদী বন্দর কেন্দ্রিক ছয়টি সাইলো এবং বগুড়া জেলার সান্তাহারে একটি আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই নব্বইয়ের দশকে নির্মিত হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে এগুলোর সংস্কার প্রয়োজন।

সভায় কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ৩১৯টি খাদ্যগুদামের তালিকা অনুযায়ী যে ডিপিপি প্রস্তাব করা হয়েছে, তা অধিকতর যাচাই-বাছাই করা আবশ্যক। এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল খালেক বলেন, ডিপিপিতে প্রস্তাবিত ৩১৯টি খাদ্যগুদামের মধ্যে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত বিবেচনা করে প্রয়োজনীয়সংখ্যক খাদ্যগুদাম পুনরায় সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করা হবে।

কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, ‘প্রকল্পের পিডি ও ডিপিডির জন্য দুটি যানবাহন ভাড়া খাতে এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বেশি বলে মনে হচ্ছে।’

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, যানবাহন ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে পুনর্নির্ধারণ করে ডিপিপি সংশোধন করা হবে। এ ছাড়া তিনি বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে খাদ্যগুদামগুলোর প্রয়োজনীয় মেরামত ও সংস্কারের পর খাদ্য অধিদপ্তরের নিজস্ব জনবল দ্বারা নিয়মিতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান রাখা হবে।

সভায় কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের খাদ্য ও সার মনিটরিং অনুবিভাগের যুগ্ম প্রধান বলেন, ‘বিভিন্ন ধারণক্ষমতার ৩১৯টি খাদ্যগুদাম মেরামত করতে যে ব্যয় ধরা হয়েছে, তা আরো যুক্তিযুক্ত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া এক লাখ ৯০ হাজার ৬৪ বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ আরসিসি ও এইচবিবি রাজা, ফ্লায়িং ইয়ার্ড ও আরসিসি জেটি সংস্কার এবং ৩৫ হাজার ৮৩৭ মিটার সীমানাপ্রাচীর, টোওয়াল ও রিটেনিং ওয়াল মেরামত কার্যক্রম এইচবিবি না করে আরসিসি করা যায় কি না সে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।’

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইয়াসমীন পারভীন জানান, বিভিন্ন ধারণক্ষমতার ৩১৯টি খাদ্যগুদাম মেরামত বাবদ যে প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে, তা বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অধিকতর যুক্তিযুক্ত করে ডিপিপি সংশোধন করা হবে। অভ্যন্তরীণ সংযোগ রাস্তাগুলো এইচবিবিকরণের পরিবর্তে আরসিসিকরণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের খাদ্য ও সার মনিটরিং অনুবিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধান খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালন বাজেটের আওতায় প্রতিবছর খাদ্যগুদামগুলো সংস্কার ও মেরামত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা যায় কি না সে বিষয়ে জানতে চান। এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ‘বছরভিত্তিক মেরামত বা সংস্কার কাজ করা হলে একই অর্থবছরে একটি খাদ্যগুদামের সব ধরনের মেরামত বা সংস্কার কাজ করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া একই খাদ্যগুদামে প্রতিবছর কাজ করলে অডিট আপত্তির আশঙ্কা থাকে।’

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সহকারী পরিচালক তৈয়াবুর রহমান মোল্যা বলেন, ‘প্রস্তাবিত প্রকল্পটি প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদাভিত্তিক হওয়ায় বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রাক্কলিত ব্যয় আনুপাতিক হারে হ্রাস করে প্রকল্প ব্যয় পুনর্নির্ধারণ করা প্রয়োজন।’ 

জানা গেছে, মোট গুদামের মধ্যে ৫০০ মেট্রিক টনের গুদাম হবে ২৫০টি, ৬৫০ মেট্রিক টনের চারটি, ৭৫০ মেট্রিক টনের ১৮টি, এক হাজার মেট্রিক টনের ৪৫টি, এক হাজার ৫০০ মেট্রিক টনের একটি এবং দুই হাজার মেট্রিক টনের একটি গুদাম সংস্কার করা হবে।

পূর্বের খবরদুই বিভাগে ঝরতে পারে বৃষ্টি
পরবর্তি খবরসাবেক দশ মন্ত্রীসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে গ্রেফতার আদেশ