এলসি বা ঋণপত্র খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কমেছে (জুলাই-সেপ্টেম্বর)। এ সময়ে আমদানি করা হয়েছে শুধু শিল্পের কাঁচামাল। ফলে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মোট আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। একইভাবে এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ কমেছে ২ দশমিক ৫০ শতাংশের মতো।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরে এলসি খোলা এবং নিষ্পত্তির হার বাড়লেও সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে কমেছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়বে। ফলে আমদানির পরিমাণও বাড়বে।
এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ভোগ্যপণ্য আমদানির এলসি খোলা কমেছে ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ সময়ে আমদানি হয়েছে ১৩৭ কোটি ডলারের ভোগ্যপণ্য। এক বছর আগের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ১৬৬ কোটি ডলার। অন্তর্বর্তী পণ্য আমদানি কমেছে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে আমদানি হয়েছে ১১৪ কোটি ডলারের পণ্য। আগের বছরের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ১৩২ কোটি ডলার। একইভাবে কমেছে পেট্রোলিয়াম পণ্যের আমদানি, পরিসংখ্যানে কমার পরিমাণ ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, মানুষের হাতে টাকাও কম। ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। চরম দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির চাহিদাও কমে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই যিনি উৎপাদন করবেন, তিনি তো আগের মতো উৎপাদন করবেন না। উৎপাদন কমলে আমদানিও কমবে। যার প্রভাব পড়ছে এলসি খোলার হারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার আসার পরেও ২৫০ কোটি ডলারের মতো অতিরিক্ত বকেয়া ছিল। সেগুলো এখন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। যে কারণে এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টর সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘কলকারখানা ঠিকমতো চলছে না। অনেক শিল্প-কারখানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে শিল্প-কারখানা হচ্ছে না। চাহিদা কমেছে। তাহলে আপনি মূলধনি যন্ত্রপাতি কেন আনবেন?’
তিনি আরো বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখন জরুরি। এটা নিশ্চিত হলে ব্যবসায়ীরা কাজে ফেরত আসবেন। উৎপাদন শুরু করবেন উৎপাদকরা। ক্ষতিগ্রস্ত কম্পানিগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।’
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বরে এলসি খোলা এবং নিষ্পত্তির হার বাড়লেও সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে কমেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি হয়েছে ৫৭২ কোটি ডলারের। আগের বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৫২৯ কোটি ডলার।
গত সেপ্টেম্বরে এলসি খোলা হয়েছে ৫৫৭ কোটি ডলারের; যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ৫২০ কোটি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে আমদানি নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৮৭ কোটি ডলারের; যা আগের বছরের সেপ্টেম্বরে ছিল ৪৭২ কোটি। এক বছরের তুলনায় ১১৫ কোটি ডলার বা ২৪ শতাংশ বেশি।