এক দশকের অপেক্ষা ঘুচিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক বললেন, ‘এই জয় স্পেশাল’

বিশ্বের এই প্রান্তে দশ বছরের বেশি সময় ধরে নেই কোনো জয়। একাদশের কোনো ক্রিকেটারের নেই বাংলাদেশে খেলার অভিজ্ঞতা। সার্বিক অভিজ্ঞতার বিচারেও প্রতিপক্ষের চেয়ে পিছিয়ে তারা। কিন্তু মাঠের খেলায় এর কোনো প্রভাব পড়তে দেয়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। বিরুদ্ধ পারিপার্শ্বিকতায় ব্যাটে-বলে দারুণ পারফরম্যান্সে এই জয় তাই বিশেষ জায়গা পেয়ে গেছে প্রোটিয়াদের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক এইডেন মার্করামের হৃদয়ে।

তরুণ ও তুলনামূলক অনভিজ্ঞ দল নিয়ে মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজ ও জাকের আলির ১৩৮ রানের জুটির অংশটুকু বাদ দিলে পুরো ম্যাচেই দাপট দেখিয়েছে সফরকারীরা।

উপমহাদেশে খেলা অভিজ্ঞতার ঘাটতি তো এই দলের ছিলই, তার ওপর টস হেরে শুরুতেই আরও একটু পিছিয়ে যায় প্রোটিয়ারা। কিন্তু সেটিকে বড় হতে দেননি ভিয়ান মুল্ডার, কাগিসো রাবাদা, কেশাভ মহারাজরা। দুর্দান্ত বোলিংয়ে দেড় সেশনেরও কমে তারা গুঁড়িয়ে দেন বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস।

পরে ব্যাটিংয়ে নেমে তাদের ওপরের সারির ব্যাটসম্যানরা হতাশ করলে দায়িত্ব নেন কাইল ভেরেইনা। বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতেও অবদান রাখেন মুল্ডার। ভেরেইনার চমৎকার সেঞ্চুরি ও মুল্ডারের ফিফটিতে দুইশ ছাড়ানো লিড পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তাতেই যেন লেখা হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য।

এরপর মিরাজ ও জাকেরের লড়াইয়ে যা একটু প্রলম্বিত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়। তবু চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনেই ম্যাচ জিতে নিয়েছে তারা। একইসঙ্গে ঘুচিয়েছে উপমহাদেশে জয়ের জন্য ১০ বছরের বেশি সময়ের অপেক্ষা।

২০১৪ সালের জুলাইয়ে গল টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে ১৫৩ রানে হারিয়েছিল তারা। পরের এক দশকে ভিন্ন পাঁচটি সফরে উপমহাদেশে এলেও জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া হয়নি তাদের। ওই সময়ে ১৪ ম্যাচে ড্র করে ৪টি। আর পরাজয় বাকি ১০ ম্যাচে।

টেম্বা বাভুমার চোটে দায়িত্ব পেয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা ঘোচালেন মার্করাম। ম্যাচ শেষে এই জয়কে স্পেশালই বললেন তিনি।

“আমার মতে, এটি স্পেশাল। তরুণ ও অনভিজ্ঞ দলের জন্য এখানে এসে ম্যাচ জেতা দারুণ অর্জন। এই জয় আমাদের বিশ্বাস জুগিয়েছে যে বিরুদ্ধ কন্ডিশনেও আমরা লড়াই করতে পারব। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় ব্যাপারে। সামনে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হব, তা মোকাবিলা করতে রোমাঞ্চ অনুভব করছি আমরা।”

মিরপুরের বিরুদ্ধে কন্ডিশনে দাপুটে জয় পাওয়ায় এবার পরের টেস্টে চট্টগ্রামে ভালো করার প্রেরণাও পাচ্ছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক।

“আমার মনে হয় না, আমরা দক্ষিণ আফ্রিকানরা এই জয়টিকে কখনও সাধারণ মনে করব। আমার কথাই ধরুন, কয়েক বছর ধরে খেলছি কিন্তু (এর আগে) কখনও উপমহাদেশে জিতিনি। আমাদের জন্য এটি বিশেষ মুহূর্ত।”

“এই জয় থেকে আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো দল হিসেবে বিশ্বাসটা। সামনের ম্যাচেও ভালো পারফর্ম করে সত্যিকারের ভালো দল হয়ে উঠতে এটি আমাদের সাহায্য করবে। সামনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমরা উন্মুখ।”

ম্যাচের উইকেটে প্রথম দিন থেকেই দেখা গেছে বড় বড় টার্ন। হঠাৎ লাফানো কিংবা নিচু হয়ে যাওয়া ডেলিভারিও দেখা গেছে বেশ কিছু। এসব সামলে প্রথম ইনিংসে ১১৪ রানের ইনিংস খেলেন ভেরেইনা। পরে এটিকে ক্যারিয়ারের সেরাও বলেছেন তিনি।

চমৎকার শতকছোঁয়া ইনিংসে বাংলাদেশের তিন স্পিনারের বিপক্ষে একের পর এক সুইপ খেলে গেছেন ভেরেইনা। ইনিংসের ৮ বাউন্ডারির ৫টিই তিনি মারেন সুইপ শটে। এমনকি মাইলফলকে পৌঁছানো শটটিও ছিল সুইপ। ভেরেইনার পাশাপাশি আট নম্বরে নেমে ৫৪ রান করা মুল্ডারও কার্যকরভাবে খেলেন বেশ কিছু সুইপ শট।

মার্করাম জানালেন, ব্যাটিংয়ের এই এপ্রোচের ব্যাপারে দলীয় কোনো পরিকল্পনা সাজাননি তারা। বরং ভেরেইনা-মুল্ডাররা নিজেদের শক্তির জায়গা ধরে রেখেই পেয়েছেন সাফল্য।

“ব্যাটিংয়ের দিক থেকে স্পিন মোকাবিলার ক্ষেত্রে, আমার মনে হয় না দলীয় পরিকল্পনা হতে পারে কোনো। ব্যাটসম্যানদেরকে স্বাধীনতা দিতে হবে, তারা যেন নিজেদের মতো করে এই চ্যালেঞ্জ জিততে পারে। এটাই মূলত আলোচনা ছিল। তারা যেন নিজেদের মেলে ধরে, শক্তির জায়গায় অটল থাকে। এরপর যা হয় হবে।”

“কাইল ভেরেইনার দিকে দেখুন, সে দারুণভাবে সব সুইপ খেলেছে। ছেলেদের নিজেদের শক্তির জায়গা ধরে রাখতে দেখা আনন্দের।”

প্রথম টেস্টের উইকেটে সহজাত টার্নের পাশাপাশি বিস্ময়করভাবে ছিল বাড়তি বাউন্স ও সিম মুভমেন্ট। যা কাজে লাগিয়ে দুই ইনিংসে ৯ উইকেট নেন কাগিসো রাবাদা। পেস অলরাউন্ডার মুল্ডারও ধরেন ৪ শিকার।

তাই একাদশে শুধু একজন বিশেষজ্ঞ ফাস্ট বোলার নেওয়ার সিদ্ধান্তে কিছুটা আক্ষেপও যেন করলেন মার্করাম।

“উইকেটে যে পরিমাণ সিম মুভমেন্ট, অসম বাউন্স, বাড়তি বাউন্স দেখা যাচ্ছিল, হয়তো আরেকটা পেসার থাকতে ভালো হতো। আমার মনে হয়, দুই দলই এই জায়গায় একমত হবে।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে আগামী মঙ্গলবার শুরু হবে দুই দলের দ্বিতীয় টেস্ট।

এস/ভি নিউজ

পূর্বের খবরতিনবারের বেশি দেওয়া যাবে না বিসিএস পরীক্ষা
পরবর্তি খবরট্রাম্প, হ্যারিসের তুমুল প্রচারণার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে আড়াই কোটি আগাম ভোট