ইরানে ইসরায়েলের হামলা শেষ, পাল্টা জবাব চায় না যুক্তরাষ্ট্র

ইরানে হামলা সমাপ্তির ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। তারা জানিয়েছে, তারা ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা শেষ করেছে।

ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, গত কয়েক মাস ধরে ইরান যেসব হামলা চালিয়েছে তার জবাবে ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, কয়েক দফায় এ হামলা চালানো হয়েছে এবং হামলা শেষে তার ভাষায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো নিরাপদে তাদের ঘাঁটিতে ফিরে গেছে।

তেহরান, খুজেস্তান ও ইলাম প্রদেশের ঘাঁটি এ হামলার শিকার হয় বলে জানিয়েছে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার তারা ইরানে আকাশ হামলা চালিয়েছে। গত বছর যে ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল ইরান, সেই ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনস্থলে আঘাত করেছে আইএএফ উড়োজাহাজ।

অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, শনিবার ভোরে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক তিন দফা হামলার পর তা শেষ হয়েছে।

এদিকে ইরানের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাজধানী তেহরান, খুজিস্তান ও ইলাম প্রদেশের বিভিন্ন স্থাপনায় ইহুদি দেশটির চালানো হামলা চরম ব্যর্থ হয়েছে। ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হামলা ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। তবে তারপরও কিছু ক্ষেত্রে সামান্য ক্ষতি হয়েছে।

ইরানের বার্তা সংস্থা তাসনিমের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম পার্সটুডে জানিয়েছে, ইরান ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। ইরান নিজের ওপর যেকোনো ধরনের আগ্রাসনের জবাব দেয়ার অধিকার রাখে। নিঃসন্দেহে ইসরায়েল যেকোনো হামলার যথোপযুক্ত জবাব পাবে।

এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে কথা বলেছেন।

পেন্টাগনের মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বলেন, “পররাষ্ট্রমন্ত্রী অস্টিন ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।”

ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইরান যদি নতুন করে হামলার পরিকল্পনা করে তাহলে ইসরায়েল তার জবাব দিতে প্রস্তুত।

“আমাদের বার্তা পরিষ্কার, যারা ইসরায়েল রাষ্ট্রকে হুমকি দিচ্ছে এবং এই অঞ্চলকে আরও বিস্তৃত উত্তেজনার দিকে টেনে নিতে চায়, তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে।”

ইসরায়েলের শেষ হওয়ার পর হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র শন সাভেট ইরানকে পাল্টা হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, নতুন হামলার পরিকল্পনা করে যাতে আর কোনো নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি না হয়।

“আমরা চাই, পাল্টাপাল্টি হামলার এই চক্রের যেন অবসান ঘটে।”

তিনি বলেন, ইসরায়েল ঘোষণা করেছে যে, ১ অক্টোবর ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দিতেই তারা এই হামলা চালিয়েছে।

এক বিবৃতিতে সাভেট বলেন, “ইসরাইল দাবি করেছে, তারা ইরানের রাজধানী তেহরান ও নিকটবর্তী কারাজ শহরে কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় ‘প্রতিশোধমূলক হামলা’ চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযানে অংশ নেয়নি। মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে কূটনীতি ত্বরান্বিত করা এবং উত্তেজনা প্রশমন করাই আমাদের লক্ষ্য।”

ইরানের একটি বার্তা সংস্থার বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, রাজধানী তেহরানের পশ্চিম ও দক্ষিণে অবস্থিত কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে।

মার্কিন নিউজ চ্যানেল সিবিসি দেশটির নিরাপত্তা সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইরানের সামরিক স্থাপনায় হামলা হয়েছে। কোনো পারমাণবিক বা তেল স্থাপনায় হামলা হয়নি।

ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন, তেল আবিবের হামলায় হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়্যেদ হাসান হাসান নাসরাল্লাহ, আইআরজিসি কমান্ডার সাইয়্যেদ আব্বাস নিলফোরুশনের শাহাদাত এবং লেবানন ও ফিলিস্তিনের বেসামরিক মানুষকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরান গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে অন্তত ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।

এসব হামলায় ইসরায়েলি ঘাঁটিগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও তার সঠিক চিত্র প্রকাশ করেনি তেল আবিব। ইসরায়েল ওই হামলার জবাব দেওয়ার হুমকি আগেই দিয়ে রেখেছিল। শনিবার সকালে সেই হুমকিই বাস্তবায়ন করল ইহুদী রাষ্ট্রটি।

এস/ভি নিউজ

পূর্বের খবরIsrael says conducting ‘precise strikes’ in Iran
পরবর্তি খবর১৪০ যুদ্ধবিমান দিয়ে ইরানের ২০ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা ইসরায়েলের