ইউটিউবের ২০ বছর: অচিন্তনীয় সাফল্য

 

আদিত্য আচার্য রুদ্র

২০ বছর আগে একটি নৈশভোজের অনুষ্ঠানে প্রথম ইউটিউবের ধারণা নিয়ে আলোচনা করেন স্টিভ চেন, শ্যাড হার্লি ও জাওয়েদ করিম। ২০০৫ সালে এই তিনজন মিলেই প্রতিষ্ঠা করেন অনলাইনে ভিডিও দেখার এই জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মের। সে বছরই ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার দিবসে ইউটিউব ডট কমের যাত্রা শুরু হয়।

শুরুতে পাইরেসির স্বর্গ হিসেবে বিবেচিত হলেও এই দুই দশকের যাত্রায় নেটিজেনদের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে তুমুল জনপ্রিয় এই প্ল্যাটফর্ম।

 

২০০৫ সালের ২৩ এপ্রিল ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করার সক্ষমতা যোগ করা হয়। প্রথম ভিডিওটি পোস্ট করেন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত জাওয়েদ করিম।

এর শিরোনাম ছিল ‘মি এট দ্য জু’। ১৯ সেকেন্ডের ওই ক্লিপে করিমকে স্যান ডিয়েগো চিড়িয়াখানার হাতির খাঁচা পরিদর্শন করতে দেখা যায়। ভিডিওটি সে সময় ৩৪ কোটি ৮০ লাখ ভিউস পায়।

 

পরবর্তী ২০ বছরে অচিন্তনীয় সাফল্য অর্জন করে সাইটটি।

গত বছর বিশ্বজুড়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখেন প্রায় ২৫০ কোটি মানুষ। তাদের মিউজিক ও প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন প্যাকেজের গ্রাহকের সংখ্যা ১০ কোটি। তারা সবাই ‘পেইড গ্রাহক’, অর্থাৎ মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে থাকেন এসব গ্রাহক। এই তথ্য জানিয়েছে স্ট্যাটিসটা।

গুগল জানিয়েছে, শুধু টিভি সেটেই প্রতিদিন ১০০ কোটি ঘণ্টা ইউটিউব দেখা হয়।

ইউটিউবের সাফল্যের পেছনে মূল সূত্র হলো প্রথাগত টিভি চ্যানেলের সঙ্গে লড়ার ক্ষেত্রে অভিনব কৌশল গ্রহণ। বড় স্টুডিও বা খরুচে ভিডিও নির্মাণ না করে ইউটিউব সব সময় চেয়েছে গ্রাহক-দর্শকরা নিজেরাই ভিডিও তৈরি করা তাদের প্ল্যাটফর্মে আপলোড করুক।

পরবর্তীতে সেই ভিডিওগুলোই পরিণত হয় ‘কনটেন্টে’, আর বাকিটা ইতিহাস।

এ মুহূর্তে ইউটিউবে কনসার্টের ক্লিপ, রাজনৈতিক প্রচারণার বিজ্ঞাপন, শিক্ষামূলক ভিডিও সহ অনেক বিষয়ের ওপর ভিডিও রয়েছে।

গুগলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইউটিউবে বিশ্বজুড়ে প্রতি মিনিটে ৫০০ ঘণ্টারও বেশি দৈর্ঘ্যের ভিডিও আপলোড করা হয়।

২০০৬ সালে গুগল ১৬৫ কোটি ডলারে ইউটিউব কিনে নেয়। বিশ্লেষকরা একে তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচনা করেন। তাদের মতে, গুগলের সার্চ ও বিজ্ঞাপন বিষয়ে দক্ষতার সঙ্গে ভিডিও-শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটি যোগ হওয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

ইউটিউব থেকে অর্থোপার্জন করবেন যেভাবে

ভিডিও নির্মাতাদের জন্য টিভি-কেন্দ্রিক সেবা চালু করছে ইউটিউব
অনলাইন বিজ্ঞাপনের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে গুগল কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের সঙ্গে লভ্যাংশ ভাগ করে নেওয়ার মডেল তৈরি করা, যার হাত ধরেই তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে ইউটিউব।

প্রতিষ্ঠানটি এখানেই থেমে থাকেনি—নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের সেবার মান ধারাবাহিকভাবে উন্নত করেছে। পাশাপাশি, কপিরাইট লঙ্ঘন ঠেকাতে স্টুডিওগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও দরকষাকষিও চালিয়ে গেছে ইউটিউব, যা উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক হয়েছে।

এক সময় ইউটিউবের সবচেয়ে বড় দুই সমস্যা ছিল পাইরেটেড কনটেন্ট ও প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য তৈরি করা কনটেন্ট এর অবাধ প্রবাহ।

তবে বর্তমানে এই সমস্যাগুলো নেই বললেই চলে। এমনটাই মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এ ধরনের কোনো ভিডিও আপলোড হলেও দ্রুত তা সরিয়ে নেওয়া হয়।

এমন কী, দৃষ্টিকটু বা অবমাননাকর কনটেন্টও ইউটিউব থেকে দ্রুত সরিয়ে ফেলা হয়।

ইউটিউবের অপর এক অর্জন হলো শিশুদের নিরাপদ রাখতে আলাদা ‘ইউটিউব কিডস’ সাইট ও অ্যাপ চালু করা।

টিভিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে ইউটিউব
ইউটিউব। প্রতীকী ছবি: এএফপি
ইউটিউব। প্রতীকী ছবি: এএফপি
বিশ্লেষকদের মতে, আগামী দুই বছরের মধ্যেই মার্কিন কেবল টিভির গ্রাহকের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে ইউটিউবের পেইড গ্রাহকের সংখ্যা।

এই প্ল্যাটফর্মটি এখন নেটফ্লিক্স, ডিজনি প্লাস ও অ্যামাজন প্রাইমের মতো স্ট্রিমিং সাইটের পাশাপাশি টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের রিলস এর সঙ্গেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

টিকটকের পাল্টা জবাব হিসেবে ‘শর্টস’ চালু করেছে ইউটিউব। অল্প সময়ের মধ্যেই তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই সেবা।

বর্তমানে প্রতিদিন সাত হাজার কোটি ভিউস আসে শর্টস থেকে।

ফরেস্টারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গবেষণা পরিচালক মাকে প্রৌলক্স বলেন, ‘সবচেয়ে পুরনো স্ট্রিমিং ভিডিও প্ল্যাটফর্ম হলেও ইউটিউব সব সময়ই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে থেকেছে এবং নতুন নতুন ফিচারের মাধ্যমে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা রেখেছে।’

ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করার সময় আপলোডার চাইলে সে ভিডিও ডাউনলোড সুবিধা চালু বা বন্ধ রাখতে পারেন। ছবি: রয়টার্স
আরও
বিপত্তি কাটিয়ে ইউটিউবে ডেইলি স্টারের এক মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার
কনটেন্ট নির্মাতা রবার্ট জি উল্লেখ করেন, এই প্ল্যাটফর্মে প্রতিষ্ঠিত ক্রিয়েটরদের পাশাপাশি নতুনরাও হোম পেজে স্থান পাচ্ছেন।

২০০৯ সাল থেকে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করেন রবার্ট। তিনি বলেন, ‘(যুগের চাহিদা মেটাতে) ইউটিউব সারাক্ষণই বদলাচ্ছে। এ বিষয়টা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট’।

‘ইউটিউব আমার জীবনের অংশ; এটাই আমার জীবন’, যোগ করেন তিনি।

পূর্বের খবরবিচ্ছেদের পরেও চর্চায় থাকেন অর্জুন-মালাইকা
পরবর্তি খবরফাগুন রং মেলে ধরেছে