শেখ হাসিনা সরকারের করা বিপুল ঋণ পরিশোধের চাপ যখন বাড়ছে তখন রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকছেন প্রবাসীরা। ফলে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বৈধপথে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ হু হু করে বাড়ছে। সদ্যঃসমাপ্ত অক্টোবর মাসে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয়।
ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রবাসীরা জুলাই মাসে রেমিট্যান্স বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে আগের চেয়ে বেশি গতি বেড়েছে প্রবাস আয়ে। এতে শক্তিশালী হচ্ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তার পরের মাসগুলোতে অব্যাহতভাবে বেড়েছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ।
গত অক্টোবর মাসেও প্রবাস আয়ের গতি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২৪০ কোটি ডলারের। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে) এর পরিমাণ প্রায় ২৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আর প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৯২৭ কোটি টাকার প্রবাস আয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে সাত কোটি ৭৩ লাখ ডলার বা ৯২৭ কোটি টাকার রেমিট্যান্স আসছে। আর পুরো মাসে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বেশি। আলোচিত সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭২ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে একটি ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ১১ কোট ৯৯ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৫৪ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭১ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
তবে এ সময়ের মধ্যে ৯ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি।
এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক। আর বিদেশি খাতের মধ্যে রয়েছে হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।আগের মাস সেপ্টেম্বর মাসের পুরো সময়ে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার (২.৪০ বিলিয়ন) পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে) ২৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকার বেশি। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স আসে।
এ ছাড়া জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার। তার আগের মাস মে মাসে আসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এ ছাড়া এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ এবং জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ মার্কিন ডলার পাঠিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
এর আগে দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। বছরওয়ারি হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স আসে ২৪.৭৮ বিলিয়ন বা দুই হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুন মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ২৫৪ কোটি ডলারের প্রবাস আয় দেশে এসেছে।
একজন বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মী তাঁর পরিবার বা দেশে থাকা অন্যান্য ব্যক্তির কাছে প্রবাস থেকে যে অর্থ স্থানান্তর করেন তাই প্রবাস আয় বলে বিবেচিত হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাস আয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ দেশের আর্থ-সামাজিক বিকাশে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে বিবেচিত। একদিকে যেমন প্রবাসী শ্রমিকদের আয় সামষ্টিক অর্থনীতির ভিতকে শক্তিশালী করছে, অন্যদিকে তাদের পাঠানো অর্থ দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, শিশুর পুষ্টি ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
বাংলাদেশে প্রবাস আয় বেশি আসে সৌদি আরব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও কুয়েত থেকে।
এস/ভি নিউজ