খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক ও নৌপথ অবরোধ চলছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে অবরোধ শুরু হয়েছে। এতে বন্ধ রয়েছে শহরের একমাত্র গণপরিবহন সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল। রাঙামাটি থেকে ছেড়ে যায়নি কোনো দূরপাল্লার বাস, বন্ধ রয়েছে আন্তঃজেলা বাস চলাচলও। শহরের বাজার-শপিংমলগুলোও বন্ধ রয়েছে।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে রাঙামাটি শহর ঘুরে দেখা যায়, সড়কে যান চলাচল একেবারেই কম। খোলেনি কোনো দোকানপাট-শপিংমল। যারাই বের হয়েছেন ব্যক্তিগত প্রয়োজন কিংবা কাজের জন্য বের হয়েছেন। রাস্তার মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।
রাঙামাটি শহরের সবচেয়ে বড় বনরুপা বাজার বন্ধ থাকার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ জনগণ। কাঁচাবাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানগুলো বন্ধ থাকায় কেনাবেচা করতে পারছেন না মানুষ।
ট্রাভেল আদাম এলাকার বাসিন্দা ইমন বিশ্বাস বলেন, শুক্রবার থেকে রাঙামাটির পরিস্থিতি থমথমে। দোকানপাট না খোলায় আমরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে বেঁচে থাকা কষ্টের হয়ে যাবে।
শহরের রাজবাড়ি স’মিলের শ্রমিক আবদুল সোবাহান বলেন, আমরা কোনো ধরনের সংঘাত চাই না। পাহাড়ি-বাঙালি মিলেমিশে থাকতে চাই। এই থমথমে পরিস্থিতির কারণে আমরা কাজে যেতে পারছি না।
সিএনজিচালক কাউসার জানান, আমদের উপার্জনের একমাত্র পথ সিএনজি। কিন্তু আজ তিনদিন হয়ে গেল গাড়ি বন্ধ, কবে থেকে শুরু হবে তাও জানি না। আমরা খুব কষ্টে আছি।
রাঙামাটি জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন ও চালক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান বাবু বলেন, উপদেষ্টাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আমাদের দাবিগুলোর কথা জানিয়েছি। উপদেষ্টারা আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত যানবাহন ও জানমালের পূর্ণ নিশ্চয়তা না পাব ততক্ষণ ধর্মঘট চলবে।
এ বিষয়ে রাঙামাটি সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মু. সাইফুল উদ্দিন জানিয়েছেন, বর্তমানে রাঙামাটির পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তদন্তসাপেক্ষে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হবে।
এদিকে অবরোধের কারণে সাজেকে আটকা পড়ে আছেন প্রায় ১৪০০ পর্যটক।
এর আগে গতকাল ঢাকার একটি সমাবেশ থেকে সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ডাক দেয়া হয়েছিল। কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে অবরোধ পালনের ঘোষণা দিয়েছে আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার ভোরে খাগড়াছড়ি সদরে চুরির অভিযোগে মো. মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। ওই ঘটনার জের ধরে দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ি সদরে অপ্রীতিকর ঘটনায় ৩ জন নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হন। দীঘিনালায় পুড়িয়ে দেওয়া হয় শতাধিক দোকানপাট। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে জেলায় গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
বর্তমানে জেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এস/ভি নিউজ